Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
Balagarh Onion Farmers

বাজারে পেঁয়াজ আগুন, হাত কামড়াচ্ছেন বলাগড়ের চাষি

বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা জানান, ফড়েরা এসে এখানকার ‘সুখসাগর’ পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তাঁদের ঠিক করা দামেই পেঁয়াজ বেচতে হয়।

সুখসাগর পেঁয়াজের জমিতে জল দেওয়া হচ্ছে। বলাগড়ের বাকসাগর গ্রামে।

সুখসাগর পেঁয়াজের জমিতে জল দেওয়া হচ্ছে। বলাগড়ের বাকসাগর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৫
Share: Save:

বাজারে পেঁয়াজ কেজি প্রতি কয়েক দিনেই লাফিয়ে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের জোগান দেয় মূলত নাসিক। হুগলির বলাগড়েও পেঁয়াজ চাষ হয়। অথচ, পেঁয়াজের বাজার যখন চড়া, বলাগড়ের অনেক পেঁয়াজ চাষি হাত কামড়াচ্ছেন। কারণ, তাঁদের হাতে এখন পেঁয়াজ নেই। তাঁরা মনে করছেন, সংরক্ষণের ভাল ব্যবস্থা থাকলে এই সময়ে দু’টো বাড়তি পয়সার মুখ দেখতে পারতেন।

বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা জানান, ফড়েরা এসে এখানকার ‘সুখসাগর’ পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তাঁদের ঠিক করা দামেই পেঁয়াজ বেচতে হয়। সব সময়ে উপযুক্ত দাম মেলে না। জিরাটের বাকসাগর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি হরেরাম সিংহ জানান, তিনি এ বার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ ওঠে ফাল্গুন মাসে। প্রথম দিকে এক বস্তা (৪০ কেজি) পেঁয়াজ বেচে দাম পেয়েছিলেন ৫০০ টাকা, অর্থাৎ সাড়ে ১২ টাকা কেজি। পরে সেই দাম অর্ধেকেরও কমে এসে ঠেকে। হরেরামের কথায়, ‘‘তখন ৪০ কেজি পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকাতেও বেচতে হয়েছে। অর্থাৎ, এক কেজি ৫ টাকা-সাড়ে ৫ টাকা। অবস্থা বুঝুন!’’

পেঁয়াজের সংরক্ষণ তুলনায় সহজ। কিন্তু চাষিদের বক্তব্য, এখানে সংরক্ষণের পরিকাঠামো যথাযথ নেই। থাকলে এই অবস্থা হয় না। হরেরামের কথায়, ‘‘১০ বিঘা জমি থেকে মাত্র হাজার চল্লিশ টাকা লাভ
পেয়েছি। সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় তখনই সব পেঁয়াজ বিক্রি করে
দিয়েছি। পেঁয়াজ রাখতে পারলে এখন লাভবান হতাম।’’

শেওড়াফুলি হাটে বৃহস্পতিবার নাসিকের ভাল পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে এক পাল্লা (৫ কেজি) ২৭০-২৮০ টাকা দরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদের তুলনায় আমদানি খুবই কম। তাতেই দাম চড়েছে। আগে যেখানে প্রতি দিন নাসিকের পেঁয়াজ ৮-১০ ট্রাক আসত, এখন আসছে ৫-৬টি ট্রাক। জোগান কমে যাওয়াতেই দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় সুখসাগর পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।

জিরাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জয়দেব কোলে জানান, মাস চারেক আগে এক কেজি সুখসাগর বেচেছেন ২২-২৪ টাকায়। দিন পনেরো আগে তা ৪০ টাকায় ওঠে। দিন দশেক ধরে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘দু’বস্তা সুখসাগর ৩২ টাকায় কিনে রেখেছিলাম। দাম বাড়ায় লাভ পাচ্ছি।’’ যে সব চাষির নিজেদের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন, একই ভাবে তাঁরাও ভাল দাম পাচ্ছেন।

বলাগড়ের সহ-কৃষি অধিকর্তা সোমনাথ পাল জানান, এই ব্লকে গত বছর আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য বাড়িতেই ঘর করে পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখেন চাষিরা। সেই ঘর তৈরির খরচের ৫০ শতাংশ টাকা সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হয়। তবে সব চাষি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি বলে ব্লকের কৃষিকর্তারা মানছেন।

বাকসাগরেরই চাষি সুশান্ত মণ্ডল জানান, চৈত্রে ফড়েদের কাছে পেঁয়াজ বেচেছেন ৩০০-৩৩০ টাকা প্যাকেট (সাড়ে ৭ টাকা- ৮ টাকা পঁচিশ পয়সা কেজি)। বাড়ির গোয়ালঘর ও রান্নাঘরের বাঁশের চালায় ১২-১৫ কুইন্টাল পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। এখন তা ৪০ টাকা কেজি বেচছেন। খুচরো বাজারে তা বিকোচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। সুশান্তের কথায়, ‘‘সংরক্ষণের বেশি জায়গা থাকলে তখন অত কম দামে কিছুতেই বেচতাম না।’’ ইনছুড়ার চাষি খোকন দাসের দাবি, ৭ বিঘা জমির পেঁয়াজ বেচে তিরিশ হাজার টাকার কাছাকাছি লোকসান হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমার সংরক্ষণের জায়গা নেই। থাকলে এখন দু’টো পয়সা পেতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onion farmers Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE