প্রতিমা দত্ত, তপন দত্ত এবং অরূপ রায়। ফাইল চিত্র।
সিবিআই তদন্ত বহাল রাখার বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরেই ফের রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়কে নিশানা করলেন বালির নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা। আর তার ‘জবাবে’ শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রী অরূপের মন্তব্য, ‘‘উনি আমার ছোট বোনের মতো।’’
কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছে শুনে শুক্রবার প্রতিমা বলেন, ‘‘আমার আস্থা ছিল যে আমি জিতব। এই লড়াইয়ে আমরাই আগে থাকব। ভীষণ বড় উপহার পেলাম এই পঞ্চমীর দিনে। মা দুর্গা আমাকে যা দিলেন চিন্তা করা যায় না।’’ ১১ বছর আগে বালির ওই খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সিবিআই তদন্তের জন্য সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রেখেছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
গত ৯ জুন তপন দত্ত খুনের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য সরকার এবং অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ষষ্ঠী গায়েন। কিন্তু সেই আবেদন শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। প্রতিমার দাবি, শুধু ষষ্ঠী নন, হাওড়ার একাধিক নেতা এমনকি, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় রয়েছেন তপন খুনের চক্রান্তে। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি অরূপ রায়ের চক্রান্তে এই খুন হয়েছে। অরূপ শেষ পর্যন্ত যে চক্রান্ত করেছেন তা প্রমাণ হবে এবং তিনি সাজা পাবেনই।’’
প্রতিমার এই মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী অরূপ বলেন, ‘‘উনি ভাল থাকুন। উনি আমার ছোট বোনের মতো। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আইন আইনের পথে চলছে। সুতরাং আগামী দিনে দেখা যাবে, এর ভবিষ্যৎ কী হবে।’’
প্রসঙ্গত, ৯ জুন হাই কোর্টের রায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে পর প্রতিমা বলেছিলেন, ‘‘প্রশাসনের গালে আমি সপাটে একটা চড় মারতে পেরেছি।’’ সেই সঙ্গে অভিযোগ করেছিলেন, শাসক দলের কয়েক জন নেতার আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দাপটে গত ১১ বছর তাঁকে কার্যত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন কাটাতে হয়েছে।
২০১১ সালের ৬ মে গুলি করে খুন করা হয় তপন দত্তকে। এই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মী-সহ ১৩ জনের নাম জড়ায় । এই মামলা নিম্ন আদালত, কলকাতা হাই কোর্ট এমনকি, সুপ্রিম কোর্টেও উঠেছে। কিন্তু এখনও সুবিচার পাননি নিহত তপনের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। এক দশক অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই ঘটনায় অভিযুক্তরা শাস্তি পায়নি। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে সিআইডি তদন্তভার গ্রহণ করেছিল। সিআইডি তদন্তের পর জানায়, জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন বলেই তপনবাবুকে খুন হতে হয়েছে। ২০১১ সালের ৩০ অগস্ট সিআইডি মামলার চার্জশিট পেশ করে। চার্জশিটে হাওড়ার একাধিক তৃণমূল নেতার নাম ছিল।
এর পর ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিআইডি আদালতে আর একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে। সেখানে কোনও কারণ না দেখিয়ে ন’জনের নাম বাদ দেওয়া হয় চার্জশিট থেকে। যাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন হাওড়ার তৃণমূল নেতা। ২০১৪-র ডিসেম্বরে তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যান চার্জশিটে নাম থাকা বাকি পাঁচ অভিযুক্ত। কিন্তু ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয়। প্রতিমার দাবি, প্রথম চার্জশিটে অরূপের নাম থাকলেও পরে তা বাদ দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy