E-Paper

হাওড়ায় বেলাগাম তোলাবাজি আনাজের পাইকারি বাজারে, অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা

দোকানিদের দাবি, জেনারেটরের ভাড়া আর বাজার সাফাইয়ের খরচ বাবদ দিনে ২০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা করে দিতে হবে। গাড়ি করে আনাজ আনলে গাড়ি-পিছু নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা! এই জুলুমবাজি আর কত দিন চলবে?

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ০৭:০০
An image of vegetables

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

‘‘আনাজ কিনে বাজারে আসার আগেই পকেট খালি। গত কয়েক দিন ধরে তারকেশ্বর, কাটোয়া, শিবাইচণ্ডী থেকে চড়া দামে আনাজ কেনার পরে এই পাইকারি বাজারে আসতে গিয়ে হাতে আর প্রায় কিছুই থাকছে না। তার উপরে ওরা বলে কি না, জেনারেটরের ভাড়া আর বাজার সাফাইয়ের খরচ বাবদ দিনে ২০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা করে দিতে হবে। গাড়ি করে আনাজ আনলে গাড়ি-পিছু নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা! এই জুলুমবাজি আর কত দিন চলবে বলতে পারেন?’’ হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর পাশে মসজিদ লাগোয়া আনাজ বাজারে নিজের দোকানে বসে রাগে গজগজ করছিলেন বছর চল্লিশের মহম্মদ সাবাউদ্দিন। তাঁর দোকানের পাশে ত্রিপলে ঢাকা অস্থায়ী আনাজের পরপর দোকান। প্রায় ২৫০টি দোকান রয়েছে ওই চত্বরে। অপরিষ্কার, অস্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ।

দোকানিদের দাবি, আগে জেনারেটর থেকে একটি বাল্‌বের সংযোগ এবং সাফাইয়ের খরচ বাবদ দিনে ২০ টাকা করে দিতে হত। এখন দিতে হচ্ছে দিনে ১০০ টাকা। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের উপরে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী প্রবল জুলুমবাজি করছে। যে কারণে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। অনেকে ওই বাজারে আসাই ছেড়ে দিয়েছেন। আনাজ বিক্রেতাদের অভিযোগ, এখন প্রতিদিন দুপুর ১টা পেরোলেই বুক কাঁপে তাঁদের। কারণ, ওই সময়েই নিত্যদিনের ‘ভাড়া’ তুলতে আসে স্থানীয় একদল দুষ্কৃতী। জেনারেটর তাদেরই বসানো। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা আসার পরেই বাল্‌বের সংযোগ ও সাফাইয়ের খরচ ২০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া, আনাজের গাড়ি নিয়ে এলে কম করে ৫০০ টাকা ‘নজরানা’ দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনাজ বিক্রেতা বললেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গরিব মানুষ। আনাজ বিক্রি করেই সংসার চালাই। অনেক সময়ে কেউ টাকা দিতে না পারলে ওরা মারধর পর্যন্ত করে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।’’

আনাজ বিক্রেতাদের বক্তব্য, বর্তমানে এক দিকে যখন আনাজের জোগানের থেকে চাহিদা বেশি বলে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে দাম, তখনই অন্য দিকে চলছে তোলাবাজদের নিত্যদিনের তাণ্ডব। তাতে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। এক আনাজ বিক্রেতা জানালেন, চাষির কাছ থেকে আনাজ কিনে গাড়িতে বা ট্রেনে ওঠার পর থেকেই তোলাবাজি শুরু হচ্ছে। যা অব্যাহত থাকছে পাইকারি বাজারে আনাজ বিক্রি করতে আসা পর্যন্ত। সেই খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

আনাজ বিক্রেতাদের অভিযোগ, যে আনাজ ২০ টাকা কেজি দরে চাষির থেকে কেনা হচ্ছে, তার জন্য রাস্তার প্রতিটি থানা, ট্র্যাফিক পুলিশ, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, আরপিএফ এবং জিআরপি-কে টাকা দিতে হয়। তার পরে আনাজ বাজারে এসেই পড়তে হয় স্থানীয় রাজনৈতিক মদতপুষ্ট তোলাবাজদের মুখে। তখন ২০ টাকা কেজির সেই আনাজই বিক্রি করতে হয় ৫০ টাকা কেজি দরে।

আনাজ বাজারে যে বেলাগাম তোলাবাজি চলছে, তা স্বীকার করেছে খোদ শাসকদল তৃণমূলের সংগঠনও। দামও যে সেই কারণে বাড়ছে, তা-ও মেনে নিয়েছে তারা। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দাপট এতটাই যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হাওড়ার আনাজ বাজারে তৃণমূলের সংগঠন ‘হাওড়া স্টেশন এরিয়া ভেজিটেবল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বিনয় সোনকার বললেন, ‘‘আমরা বার বার বলা সত্ত্বেও এই বাজারে তোলাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এটা ঠিকই যে, তোলাবাজির জন্য আনাজের দাম কিছুটা হলেও বাড়ছে।’’

তোলাবাজদের এই দাপট নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) অনুপম সিংহ বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে, এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vegetable Price market price Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy