Advertisement
০৭ মে ২০২৪

হোম থেকে পালাতে গিয়ে ধৃত ৫ বালিকা

খানেই উঠে এসেছে একটি প্রশ্ন। তা হলে কি লিলুয়া হোমের আবাসিকদের বাড়ি ফেরানোর বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী হচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ? আর তার জন্যই কি মানসিক অবসাদ থেকে নতুন আবাসিকদের এমন কথা বলছেন পুরনো আবাসিকেরা?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

দোতলার বাথরুমের এগজস্ট ফ্যানের গর্ত দিয়ে শরীরটাকে টেনেহিঁচড়ে বার করে কার্নিশে পা দেওয়ার চেষ্টা করছে এক নাবালিকা আবাসিক। বারবার ফস্কে যাচ্ছে পা। তাও কার্নিশে পা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ওই আবাসিক!

বৃহস্পতিবার সকালে লিলুয়া হোমের পিছনের দিকে কাজ করতে গিয়ে আচমকা এই দৃশ্য দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন এক কর্মী। পরক্ষণেই তাঁর চেঁচামেচিতে চলে আসেন হোমের অন্য কর্মীরাও। ঘটনাস্থলে আসে বেলুড় থানার পুলিশও। কোনওমতে ওই নাবালিকাকে নীচে নামিয়ে আনার পরে জানা যায়, বেপত্তা আরও
চার জন। এর পরে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে চলে খোঁজাখুঁজি। হোমের পিছনের দিকের বিভিন্ন প্রান্তে টানা তল্লাশি চালিয়ে সেই চার জনকেও খুঁজে বার করে পুলিশ।

পুলিশ ও হোম সূত্রের খবর, দিন পাঁচেক আগে হাওড়া জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে লিলুয়া হোমে আসে পাঁচ নাবালিকা। বাড়ি হাওড়া এবং আশেপাশের জেলায়। জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকাদের বেশির ভাগই ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করার জন্য ধরা পড়েছিল। এই হোমে আসার পরেই দু’জনের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন হোম কর্তৃপক্ষ। বাকি নাবালিকাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই এ দিন সকালে এমন কাণ্ড বাধিয়ে বসে ওই পাঁচ নাবালিকা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ ও লিলুয়া হোমের কর্তারা জেনেছেন, দিন পাঁচেক আগে ওই নাবালিকারা আসার পরে কয়েক জন ‘সিনিয়র’ আবাসিক তাদের জানান, ‘হোমে এক বার ঢুকলে আর বেরোতে পারবি না। বাড়ি ফিরতে‌ পারবি না।’ এই কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় সকলেই। এর পরেই পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় নতুন ওই পাঁচ আবাসিক।

এখানেই উঠে এসেছে একটি প্রশ্ন। তা হলে কি লিলুয়া হোমের আবাসিকদের বাড়ি ফেরানোর বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী হচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ? আর তার জন্যই কি মানসিক অবসাদ থেকে নতুন আবাসিকদের এমন কথা বলছেন পুরনো আবাসিকেরা?

রাজ্যের সমাজকল্যাণ, শিশু ও নারী দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘আবাসিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য আমরা অনেক পদক্ষেপ করেছি। আজও জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমিতে আলোচনাসভায় আমরা জানিয়েছি হোমের এই বিষয়টি।’’ মন্ত্রী জানান, অনেক সময়ে আদালতে ওই আবাসিকদের মামলাগুলি রায়ের অপেক্ষায় পড়ে থাকে। ওই আলোচনাসভায় অনুরোধ জানানো হয়েছে, এ বার থেকে সেগুলি যাতে তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য সমস্যাটা অন্য রকম। সেখান থেকে আসা মেয়েদের ফেরত পাঠানো খুব সহজ নয়। সেই কাজের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন-সহ অনেকের সহযোগিতা দরকার।’’ বাড়ি ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিলতা থাকায় বাংলাদেশ থেকে আসা ওই সব মেয়েদের দীর্ঘ দিন ধরে হোমেই থাকতে হচ্ছে। যার ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরাই এ সব কথা রটাচ্ছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

আর সেই ক্ষোভেরই জের গিয়ে পড়ে নতুন আবাসিকদের উপরে। এ দিন সকালে হোমের পিছনের দিকে দোতলার বাথরুমের এগজস্ট ফ্যানের গর্ত দিয়ে বেরিয়ে কার্নিশে নামে ওই নাবালিকারা। এর পরে পাইপ
বেয়ে তারা নীচে নেমে হোমের পিছনের দিকের ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে পরে। তাদেরও উদ্ধারের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকাদের পরিকল্পনা ছিল ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার পরে সুযোগ বুঝে হোমের উঁচু পাঁচিল টপকে বাইরে চম্পট দেওয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE