আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযুক্তদের। ছবি: তাপস ঘোষ।
মাঝখানে কেটে গিয়েছে দশটা বছর। ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি হুগলিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস রোডে উদ্ধার হয়েছিল এক ইঞ্জিনিয়ার ও গাড়িচালকের মৃতদেহ। খুনের অভিযোগ দায়ের করে দু’জনের পরিবার। তদন্তে নামে সিআইডি। পর পর গ্রেফতার হয় ৬ জন। মঙ্গলবার চন্দননগর আদালতে ওই ইঞ্জিনিয়ার ও গাড়ির চালককে খুনের দায়ে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন বিচারক।
মামলার সরকারি আইনজীবী সুশান্ত সেনগুপ্ত জানান, মামলায় ৫০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে মিলিত ভাবে খুন, ডাকাতির পর প্রমাণ লোপ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং ডাকাতির সামগ্রী কাছে রাখার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এর পরেই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিমলকান্তি বেরা উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা গোবিন্দ সাহা, প্রণব বর, শুকলাল সেন ওরফে ভজ, দেবাশিস বিশ্বাস ওরফে বাপি, তাপস কর্মকার এবং সুপ্রিয় মল্লিককে দোষী সাব্যস্ত করেন। বৃহস্পতিবার বিচারক সাজা ঘোষণা করবেন। রাজসাক্ষী হওয়ায় প্রশান্ত অধিকারী নামে এক অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়েছে আদালত।
ঘটনার দিন সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস রোডের ধারে উদ্ধার হয়েছিল ওই ইঞ্জিনিয়ারের দেহ। ওই দিনই দাদপুরে সার্ভিস রোডের পাশ থেকে আরও এক যুবকের দেহ পাওয়া যায়। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দু’টি থানাতেই পৃথক মামলা রুজু হয়। পরে সিঙ্গুরে উদ্ধার হওয়া দেহটি দুর্গাপুরের ‘জন অ্যান্ড কোম্পানি’র ইঞ্জিনিয়ার জ্যোতিপ্রকাশ বিশ্বাসের বলে শনাক্ত করেন তাঁর বাড়ির লোকজন। দাদপুরে উদ্ধার হওয়া দেহটি ওই সংস্থারই গাড়িচালক কাঞ্চন দাসের বলে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবার। দু’জনেই দুর্গাপুরে থাকতেন।
ঘটনার কয়েক দিন পরে বাগুইআটিতে গাড়িটির খোঁজ পায় পুলিশ। রাজ্য সরকার তদন্তের ভার দেয় সিআইডি-কে। মাস কয়েক পরে প্রশান্ত অধিকারী নামে এক যুবক ধরা পড়ে। সে সল্টলেকে একটি বেসরকারি সংস্থার গাড়ি চালাত। সিআইডি-র দাবি, জেরায় সে খুনের কথা কবুল করে এবং রাজসাক্ষী হয়। প্রশান্তর কথার সূত্র ধরে পরে একে একে প্রণব, গোবিন্দ, ভজ, বাপি, তাপস এবং সুপ্রিয় গ্রেফতার হয়। ধৃতদের সকলেরই বয়স ছিল ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
সিআইডি সূত্রে খবর, হরিপালের একটি রাসায়নিক কারখানায় পরিকাঠামো তৈরির কাজের বরাত পেয়েছিল দুর্গাপুরের সংস্থাটি। সংস্থার তরফে জ্যোতিপ্রকাশ ওই কারখানায় আসতেন। কাঞ্চন গাড়ি চালিয়ে তাঁকে নিয়ে আসতেন। ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দু’জনে সংস্থার গাড়িতে ওই কারখানায় আসেন। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বেরিয়ে যান। কিন্তু দুর্গাপুরে ফেরেননি। এক দিন পরে সংস্থার তরফে দুর্গাপুরের অরবিন্দ থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি করা হয়।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ৫ ফেব্রুয়ারি হরিপালের কারখানা থেকে বেরিয়ে জ্যোতিপ্রকাশ-কাঞ্চন দুর্গাপুরে ফিরছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মেমারি ক্রসিং-এর কাছে দুষ্কৃতীরা তাঁদের গাড়ি আটকায়। তারা গাড়িতে উঠে উল্টোপথে চালাতে বলে। কাঞ্চনকে সরিয়ে প্রশান্ত গাড়ি চালাতে শুরু করে। গাড়িটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতীরা জ্যোতিপ্রকাশকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করে। মুখে গামছা চেপে কাঞ্চনকেও মেরে ফেলা হয়। খুনের পরে দেহ গাড়ির মেঝেতে রেখেই তারা খাওয়া দাওয়া করে। পরে দেহদু’টি রাস্তায় ফেলে দেয়। বাগুইআটিতে পৌঁছে রাস্তায় অনেক পুলিশ দেখে গাড়ি রেখে পালিয়ে য়ায় দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy