Advertisement
২৪ মে ২০২৪
আক্ষেপ বিশিষ্টদের

শহর যেন দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল

নির্বাচন-পর্বে ছিল বজ্র আঁটুনি। তার আগে-পরে আঁটুনি সেই শিথিলই থেকে গেল!

হাসপাতালে জখম যুবক। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে জখম যুবক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

নির্বাচন-পর্বে ছিল বজ্র আঁটুনি। তার আগে-পরে আঁটুনি সেই শিথিলই থেকে গেল!

বৃহস্পতিবার চন্দননগরের হরিদ্রাডাঙায় মাঝদুপুরে যে ভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবককে গুলি করে খুনের চেষ্টার পরে বোমা ফাটিয়ে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে চার দুষ্কৃতী হেঁটে এলাকা ছাড়ে তাতে শহর জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আর দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত এবং মুড়ি-মুড়কির মতো অস্ত্রের আমদানির জন্য পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’কেই দুষছেন অনেকে।

শহরের বাসিন্দা, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কয়েক বছর ধরেই এখানে দুষ্কৃতী তাণ্ডব এবং অস্ত্রের ব্যবহার যে ভাবে বাড়ছে, তা শহরের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। প্রশাসন কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।’’ একই সুরে প্রবীণ নাগরিক সূর্য মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শহর তো দেখছি দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে! বেকারত্ব যে ভাবে বাড়ছে, সে ভাবে দুষ্কৃতী তাণ্ডবও বাড়ছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয়।’’

বিধানসভা নির্বাচন পর্বে নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়িতে গোটা চন্দননগর মহকুমা জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার আগে-পরে পুলিশের সেই প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ অনেক শহরবাসীরই। ভোটের আগে ভদ্রেশ্বরের চাঁপদানিতে অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল। মিলেছিল প্রচুর অস্ত্র। গ্রেফতার করা হয় অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর এবং মূল ব্যবসায়ীকে। তার পরে এই ভদ্রেশ্বরেরই এক বাড়িতে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলি থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান এক যুবক। আর একটি ঘটনায় নিজের ইমারতি দোকানের সামনে বসে থাকা ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়। মাস আটেক আগে চন্দননগরের কুণ্ডুঘাট এলাকাতেও দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হন এক যুবক।

তার পরে বৃহস্পতিবারের ঘটনা। কয়েক মাস আগে চন্দননগরের তালডাঙা এলাকার একটি আমবাগানে দুই দল দুষ্কৃতীর বোমাবাজিতে জখম হন দুই যুবক। তাতে নাম জড়ায় এ দিনের ঘটনায় জখম অনির্বাণ মিস্ত্রির। তাই পুরনো শত্রুতার জেরে তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয় বলে মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা।

কিন্তু যে ভাবে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে দুষ্কৃতীরা এ নিয়ে ওই হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কেননা, দুষ্কৃতীদের বোমার স্‌প্লিন্টারে জখম হন হরিদ্রাডাঙার সোমা সাহা নামে এক মহিলাও। এলাকার অনেকেরই প্রশ্ন, যে ভাবে বোমা-গুলি ছোড়া হয়, তাতে যে কোনও মানুষের প্রাণ সংশয় হতে পারত। সেখানকার এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম ছেলে কলেজ থেকে ফিরবে বলে। হঠাৎ গুলি-বোমার শব্দ। ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি, চারটে ছেলে ছুটে পালাচ্ছে। তিন জনের হাতে বন্দুক। এক জনের হাতে বোমা। একটা পাঁচিল টপকে পুকুর পার ধরে ওরা চলে যায়। এমন দৃশ্য চোখের সামনে দেখে কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না।’’

হরিদ্রাডাঙা এলাকাটি চন্দননগরের এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার সিপিএম কাউন্সিলর জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন ঘটনা এখানে আগে ঘটেনি। মানুষ আতঙ্কিত। তবে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার চেষ্টা করবে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করব।’’

জেলা পুলিশ অবশ্য কোনও রকম নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চায়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘আগের সব ঘটনাতেই অভিযুক্তদের ধরা হয়েছে। কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। যে সব অস্ত্র বাইরে রয়ে গিয়েছে, সেগুলিও উদ্ধার করা হবে। হরিদ্রাডাঙার ঘটনাতেও অভিযুক্তদের ধরা হবে।’’

পুলিশের সেই আশ্বাসই এখন ভরসা শহরবাসীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

miscreants freed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE