Advertisement
০৩ মে ২০২৪
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব ভাটোরায়

ফাঁকা পড়ে অন্তর্বিভাগ

অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছিল ১০ বছর আগে। সে জন্য তৈরি হয়েছিল দোতলা ভবন, করা হয়েছিল অ্যাম্বুলেন্স ওঠা-নামার ব্যবস্থা। কিন্তু পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাটোরা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছিল ১০ বছর আগে। সে জন্য তৈরি হয়েছিল দোতলা ভবন, করা হয়েছিল অ্যাম্বুলেন্স ওঠা-নামার ব্যবস্থা। কিন্তু পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব। হাওড়ার জয়পুরের ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত আপাতত বিশ বাঁও জলে। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করতে হলে তিন জন চিকিৎসক, চার জন নার্স, দু’জন ফার্মাসিস্ট এবং চার জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রয়োজন। কবে নিয়োগ হবে তা কেউ জানেন না।’’

জয়পুরের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দু’টি পঞ্চায়েত হাওড়ার ‘দ্বীপ’ অঞ্চল নামে পরিচিত। মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ দিয়ে ঘেরা এই দু’টি পঞ্চায়েতে বসবাস করেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। বাসিন্দারা জানান, কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পালকিতে বা ভ্যানে করে নিয়ে যেতে হয় কুলিয়াঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বাগনান গ্রামীণ হাসপাতাল বা জয়পুর বিবিধর হাসপাতালে।

কী কারণে এখানে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী দেওয়া যাচ্ছে না?

স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, যাতায়াতের সমস্যাই মূল কারণ। কুলিয়াঘাট থেকে বাঁশের সেতু পার হয়ে এই দ্বীপে আসতে হয়। তারপরে নদীর ধার ধরে হেঁটে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে হাসপাতালে আসতে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আবাসন করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা জানান, ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করার জন্য বহু বার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ওখানে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যেতে রাজি হচ্ছেন না। এখানে অন্তর্বিভাগের প্রয়োজন আছে, সেকথা স্বীকার করে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করার আবেদন‌ জানিয়ে বহুবার স্বাস্থ্যভবনে চিঠি লিখছি। কিন্তু ফল হয়নি।’’

এই অবস্থায় ওই দু’টি পঞ্চায়েতের ভরসা সেই বহির্বিভাগ। এখানে আছেন এক জন করে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্স এবং দুজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। চিকিৎসক সপ্তাহে তিনদিন রোগী দেখেন। বাকি দিনগুলি সামলান নার্স ও ফার্মাসিস্ট। পরিষেবা পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য নামানো হয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। খড়িগড়িয়া গ্রামের ওই সংস্থা দক্ষিণ ভাটোরা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সপ্তাহে ৬ দিন স্বাস্থ্য শিবির করে। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ আর্থিক সহায়তায় এই স্বাস্থ্য শিবির চলে। তবে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭০০ পরিবারের চিকিৎসার দায়িত্ব।

কিন্তু এই পরিষেবাও তুলে নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘ওই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বলা হয়েছে, বেশিদিন তাদের দিয়ে কাজ করানো হবে না।’’ বিকল্প হিসেবে দ্বীপাঞ্চলের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে বলে সিএমওএইচ জানান।

সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দারা। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘এখানে অবিলম্বে অন্তর্বিভাগ চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indoor Patient Department Doctor Health worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE