Advertisement
E-Paper

শিক্ষক নিয়োগ সমস্যায় স্কুলের পঠন-পাঠন কার্যত শিকেয়

কোনও স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। কোনও স্কুলে সেটা দুই তৃতীয়াংশ। পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকার এমন অসম অনুপাতে ছাত্রছাত্রীরা তো ভুগছেই।

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৬

কোনও স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। কোনও স্কুলে সেটা দুই তৃতীয়াংশ। পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকার এমন অসম অনুপাতে ছাত্রছাত্রীরা তো ভুগছেই। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাসের বদলে একজন শিক্ষককে বেশি ক্লাস নিতে বাধ্য করায় শিক্ষার মানেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিভাবক থেকে শিক্ষক সব মহলেই অভিযোগ উঠেছে।

হাওড়া জেলার অধিকাংশ স্কুলেই এমন সমস্যায় পঠনপাঠন প্রচণ্ড ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ওই সব স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শিক্ষা দফতরে বার বার সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। নজরে আনা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতির বিষয়টিও। কিন্তু তা ‘কাকস্য পরিবেদনা’র সামিল। কোনও সুরাহা মেলেনি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক-শিক্ষিকা কম থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠনে তার প্রভাব পড়ছে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, কখনও শিক্ষকের অভাবে ক্লাস কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও দু’টি বিভাগকে (সেকশন) একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে পড়ার ক্ষতি হচ্ছে। অনেক স্কুলে ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আং‌শিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তাঁদের দিয়ে মাধ্যমিক স্তরের পঠন-পাঠন তো বটেই, এমনকী অনেক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেরও পঠন-পাঠন চালানো হচ্ছে। আর তা নিয়েই আরও সরব হয়েছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, নিয়মিত শিক্ষকের পরিবর্তে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠন চালাতে গিয়ে শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করছে স্কুলগুলি। এতে ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি হচ্ছে।

স্কুলগুলি অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নিয়মিত শিক্ষিক-শিক্ষিকার দাবি, আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে এ ভাবে কাজ চালানোয় আদতে ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি হচ্ছে। অভিযোগ যে অমূলক নয় তা দেখা গেল কয়েকটি স্কুলে গিয়ে। উলুবেড়িয়া হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রসংখ্যা প্রায় ২৫০০। শিক্ষক-শিক্ষিকার অনুমোদিত সংখ্যা ৪৮। আছেন মাত্র ৩৫ জন। এছাড়া চার জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু তাতেও সব ক্লাস ঠিকমতো নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ৫ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক মলয় খাটুয়া বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষকের সমস্যাই মারাত্মক। নিয়োগ না হওয়ায় রসায়ন, হিসাবশাস্ত্র-সহ উচ্চ মাধ্যমিকের কয়েকটি বিষয়ে পড়ানোর শিক্ষক কার্যত নেই।’’ একই অবস্থা জগৎবল্লভপুর ব্রাহ্মণপাড়া চিন্তামণি ইনস্টিটিউশনেরও। এখানেও অনুমোদিত শিক্ষক ৩৫ জন। আছেন ২০ জন। পার্শ্বশিক্ষক আছেন চার জন। পাঁচারুল শ্রীহরি বিদ্যামন্দির, খিলা গোপীমোহন শিক্ষা সদন—সর্বত্রই এক ছবি।

দীর্ঘ কয়েক বছর শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ না হওয়াতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে স্কুলগুলির দাবি। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করেছিল শিক্ষা দফতর। যার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১১ এবং ২০১৩ সালের পর থেকে ২০১৫ পর্যন্তও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়নি। চলতি বছরেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি বেরোয়নি।

যদিও ২০১৫ সালে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত) শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য টেট (টিচার এলিজিবিলিটি টেষ্ট) পরীক্ষা হয়েছিল। সম্প্রতি সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য কোনও নিয়োগ না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। তার উপর ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষক অবসর নেওয়ায় তা আরও জটিল হয়েছে।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলায় দু’হাজারেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ খালি। এমন অবস্থার জন্য বর্তমান তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেছে বাম শিক্ষক সংগঠন। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির হাওড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ পান্ডে বলেন, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে কার্যত নৈরাজ্য চালাচ্ছে শাসক দল। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করে সমস্যার সমাধান করুক শিক্ষা দফতর।’’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষক ও শিক্ষা বিষয়ক কর্মচারী ফেডারেশনের হাওড়া জেলা সম্পাদক অসিত বেরার বক্তব্য, ‘‘মামলার কারণে কয়েক বছর নিয়োগ সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি আদালতের রায় বেরোতেই টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। শীঘ্রই রাজ্য সরকার দ্রুত আরও শিক্ষক নিয়োগ করবে।’’

Teacher school student Academic session
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy