Advertisement
০৬ মে ২০২৪
নোটবন্দির এক বছর পরেও অন্ধকারেই আমজনতা

উপার্জন নেই, সংসার টানতে ভরসা ভিক্ষে

সনৎবাবু তাঁর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পরে গোটা পরিবারটাই আক্ষরিক অর্থেই জলে পড়ে গিয়েছে।

তখন-এখন: মৃত সনৎ বাগের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়। ফাইল চিত্র।

তখন-এখন: মৃত সনৎ বাগের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়। ফাইল চিত্র।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

মাত্র দেড় হাজার টাকার জন্য অকালে ঝরে গিয়েছিল একটি প্রাণ।

দিনটা ছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। মেয়ের বিয়ের পাকা দেখার জন্য দেড় হাজার টাকা তোলার জন্য টানা দু’দিন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়া বাসুদেবপুর নুরুল্যপাড়ার বাসিন্দা সনৎ বাগ। টাকা পাননি। বাধ্য হয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোর থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যাঙ্কের লাইনেই মারা গিয়েছিলেন তিনি।

সনৎবাবু তাঁর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পরে গোটা পরিবারটাই আক্ষরিক অর্থেই জলে পড়ে গিয়েছে। স্ত্রী কল্পনাদেবী একটি স্কুলে সাফাই কর্মীর কাজ করেন। তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে হয়। তাঁর পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে। ছেলে দু’জনেই প্রতিবন্ধী। তাঁরা বাড়িতেই থাকে। তিন মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। যে মেয়ের পাকা দেখার টাকা তুলতে গিয়ে সনৎবাবুর মৃত্যু হয়েছিল, তাঁরও বিয়ে হয়েছে। প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া দু’টি ছিটেবেড়ার ঘরে এখন দুই ছেলে ও এক মেয়ের সঙ্গে থাকেন কল্পনাদেবী। মেয়েটি পরিচারিকার কাজ করেন। দিন কাটে শাকসেদ্ধ ও ভাত খেয়ে।

মঙ্গলবার দুপুরেও রান্নার জন্য শাক তুলতে গিয়েছিলেন কল্পনাদেবী। কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, অনেক কম বয়েসে বিয়ে হয়েছিল। সংসারে অভাব ছিল না। সনৎবাবুর মেজ মেয়ে মিতালী বাগের আক্ষেপ, ‘‘বাবার রোজগারেই সংসার চলতো। নিজে কষ্ট করলেও আমাদের বুঝতে দেয়নি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সব বদলে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমাকে পরের বাড়ি কাজ করতে হচ্ছে।’’

ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অসহায় কল্পনাদেবী । নিজস্ব চিত্র

সনৎবাবুর মৃত্যুর পরে কল্পনাদেবীকে নিয়ে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ধর্না দিয়েছিল তৃণমূল। মিলেছিল পাশে থাকার অনেক প্রতিশ্রুতি। রাজ্য সরকার থেকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে সাহায্য বলতে ওই টুকুই। তার পর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। এক মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়েই সেই টাকা প্রায় শেষ।

বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিলেশ্বর পাঁজা জানান, পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কল্পনাদেবীকে একশো দিনের কাজে যুক্ত করা হয়েছে। কখনও সখনও কাজও মেলে সেই প্রকল্পে। এমনকী গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্যও তাঁর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে সনৎবাবুর স্ত্রীর হাতে দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতও সবসময় ওই পরিবারের পাশে রয়েছে। যদি কল্পনাদেবী কোনও সমস্যার কথা আমাদের জানান, আমরা তাঁকে সাহায্য করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Sanat Bag Kalpana Bag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE