Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কৃষিঋণ নেই, ক্ষোভ বাড়ছে হাওড়ার চাষির

চাষের মরসুমে মহাজনদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে সমবায় থেকে ঋণ নিলে চাষিরা চাষ করে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে পারেন। সমবায় থেকে যত সহজ শর্তে ঋণ মেলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি তত সহজ শর্তে চাষিদের ঋণ দেয় না।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

শীতকালীন চাষের জন্য জমি তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন হাওড়া জেলার চাষিরা। কিন্তু মিলছে না কৃষিঋণ। ফলে, পুরোদস্তুর চাষের কাজ কী ভাবে শুরু করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না চাষিরা। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা।

চাষের মরসুমে মহাজনদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে সমবায় থেকে ঋণ নিলে চাষিরা চাষ করে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে পারেন। সমবায় থেকে যত সহজ শর্তে ঋণ মেলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি তত সহজ শর্তে চাষিদের ঋণ দেয় না। ফলে, সমবায়ের ঋণের উপরেই চাষিরা নির্ভর করেন। কিন্তু এ বারে বিধি বাম!

কেন ঋণ পাচ্ছেন না চাষিরা?

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে চলে এসেছে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিবাদ। চাষিদের ঋণের টাকা বরাদ্দ করে নাবার্ড (ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট)। এই টাকা তারা জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ককে দেয়। ওই ব্যাঙ্ক আবার সেই টাকা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিকে দেয়। তারাই সরাসরি চাষিদের ঋণ দেয়। ঋণের সুদ বছরে মাত্র ৫ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে চাষিরা ঋণ শোধ করলে সুদে কিছুটা ছাড় পান। জেলায় ১৫৭টি প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি আছে। সব ক’টি সমিতি মিলে বছরে গড়ে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় চাষিদের। আবার চাষিদের কাছ থেকে আমানতও সংগ্রহ করে সমিতিগুলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে সংগৃহীত আমানতের ৭০ শতাংশ সমিতিগুলি জমা রাখে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে।

কিন্তু ওই আমানতের টাকা কোথায় রাখা হবে, এ বার তা নিয়েই বিবাদ বেঁধেছে। চলতি অর্থবর্ষে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিকে নিদান দিয়েছে, শুধুমাত্র তাদের কাছেই ওই টাকা জমা রাখতে হবে। যে সব সমিতি এই নিদান মানবে না, তাদের কৃষিঋণ দেওয়া হবে না। পক্ষান্তরে, সমিতিগুলির দাবি, জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের থেকে বেশি সুদ দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। ফলে, তাদের লাভ বেশি হয়। সমিতি চালাতেও সুবিধা হয়। আমানতের টাকা তারা ওই সব ব্যাঙ্কেই রাখবে।

সমবায় দফতর জানিয়েছে, ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে সমিতিগুলির আমানতের ৭০ শতাংশ টাকা রাখা বাধ্যতামূলক ছিল ঠিকই। তবে, রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে। সমিতিগুলি যে কোনও ব্যাঙ্কে ওই টাকা রাখতে পারে। তা হলে কেন নতুন ফরমান?

জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তারা জানান, প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলি যে হেতু জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীন, তাই তাদের কাছেই সংগৃহীত আমানতের ৭০ শতাংশ টাকা জমা রাখতে হবে। সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে শক্তিশালী করতে চাইছি। তাই সমিতিগুলিকে আমানতের টাকা ওই ব্যাঙ্কেই রাখতে বলা হয়েছে। সমিতিগুলিকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

এই টানাপড়েন কবে মিটবে, এখন সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন চাষিরা। শ্যামপুরের বাছরি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেন আবুল সামাদ খান এবং শান্তনু বিশ্বাস। দু’জনেই বলেন, ‘‘গত বছরের ঋণ শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু ঋণ পাচ্ছি না। চাষের টাকা কী ভাবে জোগাড় করব বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE