সমস্যায়: ফাঁকা স্কুল চত্বর। নিজস্ব চিত্র
কয়েকদিন আগের ঘটনা। একমাত্র শিক্ষিকা বদলি হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে সাগরের মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যানিকেতন। কতৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ছাড়তে না চাইলেও আদালতের রিলিজ অর্ডার নিয়ে স্কুল ছাড়েন শিক্ষিকা। স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকার বদলির খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে শিক্ষা দফতর। তড়িঘড়ি দু’জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় সাগরের ওই স্কুলে। অনেকটা একইরকম ঘটনার সাক্ষী এবার ধনেখালির বেলমুড়ির আকিলপুর জুনিয়র হাইস্কুল। দীর্ঘদিন একজন শিক্ষকই সামলাচ্ছিলেন স্কুলের পঠন পাঠনের দায়িত্ব। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। তারপর থেকে স্কুল এখন শিক্ষকহীন। বাধ্য হয়ে স্কুল বদলের জন্য ছোটাছুটি শুরু করেছেন অভিভাবকরা।
বেলমুড়ির এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়। সবমিলিয়ে পড়ুয়া সংখ্যা শ’খানেক। দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত রায়। অন্য কোনও শিক্ষক ছিলেন না। পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়া থেকে শুরু করে, স্কুলের নানা কাজও একা হাতেই সামলাতে হয়েছে তাঁকে। গত ৩১ মার্চ তিনি এই স্কুল থেকে অবসর নেন। এরপরই বিপাকে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা।
স্কুল সূত্রের খবর, রঞ্জিতবাবু প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন বারবার শিক্ষা দফতরের কাছে শিক্ষকের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘আমি ২০১৫ সালে এই স্কুলের দায়িত্বে আসি। স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে বিধায়ক পর্যন্ত সবার কাছেই শিক্ষকের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সাড়া পাইনি। এর মধ্যেই অবসরের সময় হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাগুলো আর অভিভাবকেরা সমস্যায় পড়লেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শিক্ষক না থাকায় ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করার কথা ভাবছেন বেশিরভাগ অভিভাবকই। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সায়নী দাস যেমন আড়াই কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামের স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। ওই ছাত্রীর মা শ্রাবন্তী দাস বলেন, ‘‘আমরা বার বার অনুরোধ করেও ফল হয়নি। নতুন শিক্ষক আসেননি। এখন মেয়েকে এতটা পথ উজিয়ে দূরের স্কুলে যেতে হবে।’’ তাঁর দাবি, মেয়েকে স্কুলে রেখে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে স্কুল পরিচালন সমিতির তরফে। বলেন, ‘‘ওরা রেখে দিতে বলছে। কিন্তু যেখানে শিক্ষকই নেই, সেখানে কী করে
মেয়েকে পড়াই?’’
স্কুল পরিচালন সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘রঞ্জিতবাবু অবসর নেওয়ায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটা সাময়িক। নির্বাচনের পরেই নতুন শিক্ষক চলে আসবেন। অভিবাবকদের অনুরোধ করেছি বাচ্চাদের স্কুল না ছাড়াতে।’’ স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘স্কুল উঠে যাবে না। দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে। শিক্ষক নিয়োগ হবে।’’ স্থানীয় সিপিআই (এমএল) লিবারেশন নেতা সজল অধিকারী বলেন, ‘‘স্কুলটা রাখার জন্য আগেই উদ্যোগী হওয়া যেত।’’ হুগলি প্রাইমারি স্কুল শিক্ষা সংসদের ডিআই অর্ণব সেন বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিই স্কুল পরিচালন কমিটির দেখার কথা।’’
মাসচারেক আগে সাগরের মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যানিকেতনে একমাত্র স্থায়ী শিক্ষিকা বদলি হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে তাঁকে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র দেওয়া হলেও ছাড়তে চাননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই শিক্ষিকা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত ওই শিক্ষিকাকে ‘রিলিজ অর্ডার’ দেয়। এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই হয়। তার কিছুদিন পরে অবশ্য শিক্ষা দফতর ওই স্কুলে দু’জন স্থায়ী শিক্ষিকা নিয়োগ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy