Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাস করেই ‘কাজের ছেলে’র তকমা, বলছেন জোটপ্রার্থী

কোথাও জোট নেই, ভিড় আছে। কোথাও জোট আছে, ভিড় পাতলা। বাগনানে যুযুধান তৃণমূল ও জোট প্রার্থীর প্রচারে এমনই বিপরীত ছবি।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৮
সাইকেলের দোকানে বসেই পড়লেন জোটের প্রার্থী ও নলকূপে জল পড়ছে কী, দেখছেন তৃণমূলের প্রার্থী। —সুব্রত জানা।

সাইকেলের দোকানে বসেই পড়লেন জোটের প্রার্থী ও নলকূপে জল পড়ছে কী, দেখছেন তৃণমূলের প্রার্থী। —সুব্রত জানা।

কোথাও জোট নেই, ভিড় আছে। কোথাও জোট আছে, ভিড় পাতলা।

বাগনানে যুযুধান তৃণমূল ও জোট প্রার্থীর প্রচারে এমনই বিপরীত ছবি।

সকাল সাড়ে ৯টা। দামি বাইক থেকে বাগনানের বাড়ভগবতীপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নামলেন প্রার্থী। পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। পায়ে দামি স্নিকার্স। আগে থেকেই অপেক্ষায় বাঙালপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আসিক রহমান। ভ্যান রিকশায় বসানো ট্যাবলো নিয়ে তৈরি কয়েকশো কর্মী-সমর্থক।

প্রার্থীকে দেখেই চঞ্চল হলো ভিড়। সচল হল ট্যাবলো নিয়ে রিকশাও। পিছনে হাঁটতে শুরু করলেন বাগনানের বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী অরুণাভ সেন। দামোদরের বাঁধের উপর দিয়ে চলেছে মিছিল। গতবার এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিল তৃণমূল। এ বার একা। তাতে কী! মিছিল যত এগোচ্ছে, ততই লম্বা হচ্ছে।

ভিড় দেখে আপ্লুত অরুণাভও। গত পাঁচ বছরে ‘কাজের ছেলে’ হিসাবে নাম ছড়িয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিধায়ক কোটার টাকা খরচের ক্ষেত্রে জেলায় তিনি প্রথম সারিতেই। জেলার গড় যেখানে ৭০ শতাংশ, সেখানে বাগনানে বিধায়ক কোটায় খরচ হয়েছে ৮২.৯২ শতাংশ টাকা। প্রার্থীকে কাছে পেয়ে কেউ কেউ নানা অভিযোগও নিয়ে আসছেন। শুনে চটজলদি সমাধানও বাতলে দিচ্ছেন প্রার্থী।

মিছিল হাজির মুর্গাবেড়িয়ায়। রাস্তার ধারে নলকূপে জল নিতে এসেছিলেন তনুজা সামন্ত, সবিতা সামন্ত। কিন্তু ভালভাবে জল পড়ছে না। বিধায়ককে দেখেই এগিয়ে গেলেন দু’জনে। নলকূপ সারিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে নিজেই এগিয়ে এসে পাম্প করতে শুরু করলেন প্রার্থী। তারপরেই স্বগতোক্তি, ‘‘সত্যি মেরামত করা দরকার। কালই মিস্ত্রি পাঠিয়ে দেব।’’ বিধায়কের আশ্বাস পেয়ে খুশি সবিতা, তনুজা।

উল্টোদিকের ছবিটা কেমন? প্রতিপক্ষের প্রার্থী কী করছেন?

দুপুর সাড়ে ১১টা। দেখা গেল দেউলটি স্টেশনের কাছে বছর ষাটের এক বৃদ্ধের সামনে জোড়হাতে বসে মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়। বাগনানের সিপিএম প্রার্থী। দীর্ঘদিন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। এলাকার পালস ভালই বোঝেন বলে শোনা যায়। স্টেশন চত্বরে বৃদ্ধ অক্ষয় ভৌমিকের সাইকেল গ্যারাজ আছে। ভাইপো ‘সবুজসাথী’ প্রকল্পে সাইকেল পেয়েছে। সেটাই মেরামত করছিলেন। তাঁর সঙ্গেই আলাপ জমাতে বসে পড়লেন প্রার্থী। দাঁড়িয়ে পড়লেন দলের নেতা-কর্মীরাও। সংখ্যাটা বেশ অল্পই। প্রশ্নটা আেগেই আঁচ করে কৃষক সভার নেতা বিপ্লব ঘোষ বললেন, ‘‘এলাকাটা শাসকদলের সন্ত্রাস কবলিত। প্রচারে যে বেরোতে পারছি এটাই ঢের। কোনও দেওয়াল ফাঁকা পাইনি। তাই বাজারে এসে প্রতিটি ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রার্থীর আলাপ করাচ্ছি।’’

তবে সিপিএম নয়, ভোটারদের সঙ্গে মীনাদেবীর পরিচয় করানো হচ্ছিল জোটের প্রার্থী হিসাবে। যদিও কংগ্রেসের কোনও পতাকা দেখা যায়নি। সিপিএম কর্মীদের অবশ্য দাবি, পতাকা না থকালেও কংগ্রেসের কর্মীরা আছেন। তেমনই একজন নাম বললেন, সুনীল চক্রবর্তী। পরিচয় দিলেন, ‘‘এক সময় ওরফুলি অঞ্চল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম।’’ দলের পতাকা আনলেন না কেন? সুনীলবাবুর উত্তর, ‘‘এদিন প্রচারের কথা জানতাম না। বাজার করতে এসেছিলাম। সেখান থেকেই সটান মিছিলে।’’

২০১১য় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে বাগনানে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১৪ সালে লোকসভায় একা লড়াই করে তৃণমূল পেয়েছিল ৮৩ হাজার ৬৮৪ ভোট। সিপিএম ৪৯ হাজার ৭৭৮টি ও কংগ্রেস পায় ১২ হাজার ১৫৯টি ভোট। এই অবস্থায় কংগ্রেস এবং সিপিএম ভোট মিললেও যে তৃণমূলকে টপকানো মুশকিল তা বিলক্ষণ জানেন মীনাদেবী। তবে হাল ছাড়তে তিনি নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখছি মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। কিন্তু তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কী?’’

সিপিএমের সন্ত্রাসের তত্ত্বকে উড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, ‘‘কোথাও কোনও সন্ত্রাস নেই। সকলেই ভোট দেবেন। সন্ত্রাসের অপপ্রচার নয়, উন্নয়নই আমাদের আসল হাতিয়ার।’’

কে ঠিক বলছেন, এখন তারই অপেক্ষা।

Assembly Election 2016 Candidates alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy