Advertisement
E-Paper

লোকসভায় ভরসা তৃণমূলের, জোট দেখছে অসিত ‘ম্যাজিক’

২০০১ থেকে ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত তাঁদের পরিচয় যুযুধান। একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী। কিন্তু এ বার বদলে গিয়েছে পুরো ছবিটাই। পরস্পর হাত ধরাধরি করে ভোটে নেমেছেন তাঁরা। একজন দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক অসিত মিত্র। অন্যজন প্রবীণ সিপিএম নেতা রবীন্দ্রনাথ মিত্র।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৮

২০০১ থেকে ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত তাঁদের পরিচয় যুযুধান। একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী। কিন্তু এ বার বদলে গিয়েছে পুরো ছবিটাই। পরস্পর হাত ধরাধরি করে ভোটে নেমেছেন তাঁরা। একজন দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক অসিত মিত্র। অন্যজন প্রবীণ সিপিএম নেতা রবীন্দ্রনাথ মিত্র। দু’জনেই পোড়খাওয়া রাজনীতিক। হাওড়ার আমতায় এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে জোটের হয়ে দু’জনেই প্রচারে অক্লান্ত।

তৃণমূলের প্রতিপক্ষ হয়ে এ বার জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অসিতবাবু। ২০১১ তেও জোটে ছিলেন, তবে তৃণমূলের সঙ্গে। লড়াইয়ে হারিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবুকে। যদিও ব্যবধান ছিল সামান্যই। ২০০১ থেকেই দু’জনের লড়াই। এ পর্যন্ত ফল অসিতবাবুর পক্ষে ২-১। ২০০১ ও ২০১১য় জেতেন অসিতবাবু। ২০০৬ –এ জেতেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তবে এ বার অন্য লড়াই। একদা শত্রু এখন মিত্র। মিত্রের হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ময়দান কাঁপাচ্ছেন দু’জনেই। সম্ভবত আগের ফলকে মাথায় রেখেই এ বার প্রার্থীপদের শিকে ছিঁড়েছে অসিতবাবুর ক্ষেত্রে। তাতে কী! জোট বলে কথা, তাই অসিতবাবুর হয়ে প্রাণপাত করছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এক সময়ের রাজনৈতিক তিক্ততা জোটের বাধ্যবাধকতায় অদৃশ্য। অসিতবাবুর নির্বাচনী এজেন্টও রবীন্দ্রনাথবাবু। শুধু তাই নয়, অসিতবাবুর প্রার্থীপদের পক্ষে প্রথম প্রস্তাবকও ছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগে কাশমলিতে জোটের হয়ে বিশাল মিছিলের পুরোভাগে হাত ধরাধরি করে হেঁটেছেন দু’জনে।

আমতা কেন্দ্রে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূলের ভোটের সমীকরণটি বিচিত্র। ২০০১ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ছিল। জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের অসিতবাবু। ২০০৬ সালে জোট ছিল না। কংগ্রেস এবং তৃণমূল আলাদা লড়াই করে। তবে মূল লড়াই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের। তৃণমূল প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয় তৃণমূলের। সিপিএমকে হারিয়ে দেয় কংগ্রেস। ২০০৬ সালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সিপিএম এখানে ভোট পেয়েছিল ৫৮,৪০৮টি। কংগ্রেস ভোট পায় ৫৪,৩২০টি। তৃণমূলের ভোট ছিল মাত্র ৫,৮৫৯টি। কংগ্রেস-সিপিএমের মিলিত ভোটের কাছে তৃণমূলের সেক্ষেত্রে তো উড়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু না, এতে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না অসিতবাবু।


প্রচারে আমতার তৃণমূল প্রার্থী তুষারকান্তি শীল। ছবি: সুব্রত জানা।

কংগ্রেস-সিপিএম জোটের সমস্যা তা হলে কোথায়?

আসলে ২০০৬ সালের পরে এলাকায় বয়ে যাওয়া মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে শক্তিক্ষয় শুরু হয় কংগ্রেসের। দিনে দিনে সেই ক্ষয় যেমন বেড়েছে, তেমনই পাল্টা শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে তৃণমূলের। কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মী পা বাড়িয়েছেন তৃণমূলে। ক্ষয় এতটাই যে ২০১৪র লোকসভায় এখানে মূল লড়াই হয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের। কংগ্রেস পড়ে যায় অনেক পিছনে। এ বার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে ব্যায়ামবীর তূষারকান্তি শীলকে। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই তিনি জয়পুরে ঘাঁটি গেড়েছেন। কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। ঘুরছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। বিদায়ী বিধায়কের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগও তুলে ধরলেন, ‘‘উনি এলাকার উন্নয়ন কিছুই করেননি। বিধায়ক কোটার টাকাও পুরোপুরি খরচ করতে পারেননি। সব দিক দিয়েই ব্যর্থ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছি, মানুষ বিধায়কের উপরে ক্ষিপ্ত। তাঁদের সেই ক্ষোভই তৃণমূলের ভোটবাক্স ভরাবে। জিতব আমরাই।’’

অসিতবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘আগের ভোটের সময় তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ছিলাম। ভোটের পরে জোট ভেঙে গেলে বিরোধী দলের বিধায়ক হওয়ায় প্রতি পদে নানা রকম ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে জেতার পর থেকে বার বার কুলিয়া সেতুর কুমির ছানা দেখাচ্ছে তৃণমূল। অথচ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কুলিয়া সেতু হয়নি। সব জায়গায় স্কুল পরিচালন সমিতিতে বিধায়কই প্রতিনিধি বাছেন। আমার এলাকার কোনও স্কুলে তৃণমূল আমাকে প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ দেয়নি। নিজের মতো কমিটি গড়ে লুঠপাট চালাচ্ছে।’’ বিধায়ক কোটার টাকা খরচ নিয়ে বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘সব টাকা খরচ হয়েছে। সময়মতো ইউ সি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) যায়নি বলে হিসাবে গরমিল দেখানো হয়েছে।’’ তূষারবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘কুলিয়া সেতু নিয়ে একটা ব্যবস্থা হয়েছে। তবে নির্বাচনী বিধির গেরোয় সব কিছু খুলে বলা যাবে না।’’

২০১৪-র লোকসভার ভোটের হিসাব দেখলে বেশ এগিয়ে থেকেই এ বার খেলা শুরু করেছে তৃণমূল। যদিও জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তৃণমূল‌ের সামনে মূর্তিমান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন একজনই, অসিত মিত্র নিজে। কারণ ধারে ও ভারে তাঁর মতো রাজনীতিবিদ জেলায় হাতে গোনা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাভিত্তিক ফলের বিচারে একমাত্র আমতাতেই কংগ্রেস তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। জেলার বাকি বিধানসভাগুলিতে চতুর্থ স্থানে ছিল তারা। আমতায় কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ২০,০০০, যা জেলায় সর্বোচ্চ। জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে অসিতবাবু প্রার্থী হওয়াতেই কংগ্রেস এখানে তৃতীয় স্থান ধরে রাখতে পেরেছে। যদিও এই ভোটের সঙ্গে সিপিএমের ভোট যোগ করলেও ঢের পিছিয়েই থাকবে কংগ্রেস।

তবে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখানোর মতো দলের ভোট কুড়ি হাজারের অনেকটা উপরে তুলে তৃণমূলকে টপকে যাওয়ার ক্ষমতা একমাত্র অসিতবাবুরই আছে বলে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন। তার উপরে নারদা, সারদা এবং পোস্তার বিবেকানন্দ সেতুর ভেঙে পড়ার পাশাপাশি এলাকায় তৃণমূ‌ল নেতাদের ঔদ্ধত্য, তোলাবাজিও অসিতবাবুকে এগিয়ে রাখবে বলেই দলীয় নেতৃত্বের ধারণা।

কী বলছে সিপিএম? রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূলকে আমরা এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়ব না। অসিত মিত্রের সমর্থনে আমাদের সংগঠন পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’’ তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, নারদ, সারদার কোনও প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না। উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদকে নারদার স্টিং কাণ্ডে দেখা গেলেও তিনি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নেমেছেন। যা নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘নারদা কাণ্ডে আমি জড়িত, তা মানুষ বিশ্বাস করে না।’

এখন সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে অসিতের ‘ম্যাজিক’ নাকি লোকসভা নির্বাচনের বিচারে এগিয়ে থাকা তৃণমূল, পাল্লা কার দিকে ঝুঁকবে আগামী ১৯ মে-ই তা বোঝা যাবে।

TMC Candidate Congress CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy