Advertisement
০২ মে ২০২৪

আমতা-বাগনান রেল তিমিরেই

চার বছর আগে শুরু হওয়া রেলের এক প্রকল্পের কাজ হুগলিতে ক্রমশ এগোচ্ছে। অথচ, ছ’বছর আগে শুরু হওয়া হাওড়ায় আর এক প্রকল্প থমকে রয়েছে!

নুরুল আবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:০৮
Share: Save:

চার বছর আগে শুরু হওয়া রেলের এক প্রকল্পের কাজ হুগলিতে ক্রমশ এগোচ্ছে।

অথচ, ছ’বছর আগে শুরু হওয়া হাওড়ায় আর এক প্রকল্প থমকে রয়েছে!

পাশাপাশি দুই জেলায় রেলের দুই প্রকল্প ঘিরে এখন উচ্ছ্বাস ও হতাশার ছবি।

২০১২ সালে উদ্বোধনের পরে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। গত শনিবার ওই প্রকল্পের অধীন আরামবাগ-গোঘাটের মধ্যেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালে উদ্বোধন হওয়া বাগনান-আমতা রেলপথের কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে। কারণ, জমি জট। পাঁচ বছরে কাজ হয়েছে নাম-কা-ওয়াস্তে। তার পরে সব যেন থমকে রয়েছে!

দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কথা রাজ্য সরকারের। তারা সেই কাজ না করা পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ চালু করা যাবে না। এ নিয়ে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৃহস্পতিবার একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব নবান্ন থেকে আসেনি। ফলে, ফলে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। দু’পক্ষের এই টানাপড়েনে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও আশা দেখছেন না সেখানকার যাত্রীরা। বিভ্রান্তিতে রয়েছেন প্রকল্পে জমি দিতে ইচ্ছুক গ্রামবাসীরা।

১৯৮০ সালের গোড়ায় এই রেলপথের পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী গনি খান চৌধুরী। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, প্রথম পর্যায়ে হাওড়া থেকে আমতা পর্যন্ত, দ্বিতীয় পর্যায়ে আমতা থেকে বাগনান পর্যন্ত রেলপথ চালু করা। উদ্দেশ্য, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের সাঁতরাগাছি থেকে বাগনানের মধ্যে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে হাওড়া থেকে আমতা ও বাগনান হয়ে জরুরি রেল পরিষেবা দেওয়া। হাওড়া-আমতা ট্রেন চলাচল যেহেতু শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই ধরা হয় বাগনান-আমতা রেলপথের কাজ।

২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি আমতা-বাগনান রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, প্রকল্পের জমিদাতাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিকেও ঠান্ডাঘরে পাঠিয়েছে রেল। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, প্রকল্পের জন্য জমিই যেখানে মেলেনি, সেখানে চাকরির কথা আসছে কী করে! পরে রেলের তরফে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রেল যদি নিজে জমি নেয়, তা হলে শূন্যপদের ভিত্তিতে জমিদাতা পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যেতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারকেই যেখানে জমি অধিগ্রহণের কাজটি করতে হচ্ছে সে ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে রেলের সরাসরি কোনও দায় নেই।

প্রকল্পটির জন্য ২০১০ সালে খরচ ধরা হয় ১০৩ কোটি টাকা। দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার। জমির প্রয়োজন ১৬৮ একর। স্টেশন হওয়ার কথা দু’টি— আমতা এবং বাগনান। মাঝে হল্ট স্টেশন হওয়ার কথা বাগনানের হাড়োপে। ৩টি বড় সেতু এবং ১৫টি ছোট সেতু হওয়ার কথা। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পটি উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বাগনানের দিক থেকে কাজ চালু হয়ে যায়। বাগনান লেভেল ক্রসিংয়ের উত্তর দিক থেকে মাটি ফেলা হয়। কয়েকদিন চলার পরে মাটি ফেলার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

যেহেতু এই প্রকল্পে জমিদাতা পরিবারের একজনের চাকরি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী, তাই এই প্রকল্পে জমি দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে হিড়িক পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পে রেল-ই যে সরাসরি জমি নেবে সে কথাও ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। সেই কারণে উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই রেলের তরফে ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজ চলতে থাকে। শিবির করে রেল কর্তৃপক্ষ শুনানিও করেন। জমিদাতাদের ডাকা হয় বাগনান স্টেশন সংলগ্ন রেলের কার্যালয়ে। কয়েকদিন শুনানি চলার পরে রেলের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, অনির্দিষ্ট কালের জন্য শুনানি বন্ধ থাকবে। তার পর বছর তিনেক কেটে গেলেও তাঁরা কোনও খবর পাননি বলে জমিদাতারা জানান।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা নিজেরা অধিগ্রহণের কোনও প্রক্রিয়াই করেননি। শুধুমাত্র ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজটি করেছিলেন। তারপরে জমির সব নথি তুলে দেন রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে। দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘বাগনান-আমতা রেল প্রকল্প বাতিল হয়নি। রাজ্য সরকার জমির ব্যবস্থা করলেই প্রকল্পের কাজ চালু হবে।’’

জমি দিতে ইচ্ছুক বাগনানের এক গ্রামবাসীর বলেন, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি হয়তো জমি বিক্রি করে দিলাম। তারপরে প্রকল্পটি হল। তখন তো আমার আমও গেল। ছালাও গেল।’’ একই রকম বিভ্রান্তিতে রয়েছেন আরও অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amta-Bagnan rail service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE