Advertisement
০৩ মে ২০২৪

তাপসী-স্মরণে ডাক পেলেন না বেচারামই

এ বার স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল দায়িত্বে ছিলেন দলের ব্লক সভাপতি মহাদেব দাস। বারোহাত কালীতলা মাঠে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী অসীমা পাত্র, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন-সহ অনেকেই।

তাপসীর মূর্তিতে আলাদাভাবে মালা দিলেন বেচারাম। নিজস্ব চিত্র

তাপসীর মূর্তিতে আলাদাভাবে মালা দিলেন বেচারাম। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপঙ্কর দে
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

এলাকার নাম সিঙ্গুর। অনুষ্ঠানের নাম ‘তাপসী মালিক দিবস’। কিন্তু তাতে ডাকই পেলেন না বেচারাম মান্না!

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাই তৃণমূলের হুগলি জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস এ বার সকলকে এককাট্টা হয়ে ওই স্মরণ অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার ওই অনুষ্ঠানে সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনের অন্যতম মুখ, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে মঞ্চে দেখাই গেল না। ব্রাত্য থাকল ওই আন্দোলনে সামিল আরও ১৮টি দলও! তবে, বেচারামবাবু সিঙ্গুরে দলের ১৪ জন প্রধানকে নিয়ে আলাদা ভাবে এসে তাপসীর মূর্তিতে মালা দিয়ে যান। এসইউসি-র নেতাকর্মীরাও মালা দেন। এই ‘অনৈক্য’ নিয়ে দলের জেলা নেতৃত্বকেই দুষছেন সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।

২০০৬-এর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গুরের বাজেমিলিয়ার কিশোরী তাপসী মালিকের অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। তাপসীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তুলে জমি-আন্দোলনকে সে সময়ে জোরদার করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে বছরের এই দিনটি ‘তাপসী মালিক দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে তৃণমূল। ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে ওই আন্দোলনে সামিল আরও ১৮টি দলের প্রতিনিধিরাও এতদিন ওই অনুষ্ঠানে আসতেন। এ বারেই সে ছবি দেখা গেল না।

এ বার স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল দায়িত্বে ছিলেন দলের ব্লক সভাপতি মহাদেব দাস। বারোহাত কালীতলা মাঠে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী অসীমা পাত্র, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন-সহ অনেকেই। কিন্তু বেচারামবাবু বা অন্য দলগুলি ডাক পেল না কেন?

মহাদেববাবুর দাবি, ‘‘সিঙ্গুর অন্দোলনে যুক্ত অনেকেই স্মরণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সে ভাবে চিঠি দিয়ে কাউকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। এসইউসিআই-সহ অনেক দলের প্রতিনিধিরাই ছিলেন।’’ দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘শহিদ পরিবারের সবাই হাজির ছিলেন।’’

কিন্তু সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা মনে করছেন, দলের জেলা পর্যবেক্ষকের নির্দেশমতো সকলকে ডাকা হলে অনুষ্ঠান আরও ভাল হতো। ডাক না-পাওয়া নিয়ে বেচারামবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, তাপসীর বাবা মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এমনটা না হলেই ভাল হতো। সিপিএমকে হটাতে সকলেরই ভূমিকা ছিল। হোক না ওরা ছোট দল।’’

সিঙ্গুরের এসইউসি নেত্রী অমিতা বাগ বলেন, ‘‘আমরা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু শাসকদল আমাদের বেমালুম ভুলে গেল। তাপসীর মৃত্যুদিনে আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করেছি।’’ তাজ্জব সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘শাসকেরা সিঙ্গুর আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের ভুলে যাচ্ছে।’’

অরূপবাবু এ দিন সিঙ্গুরে আসেননি। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর আপ্ত-সহায়ক বলেন, ‘‘মন্ত্রী কলকাতার বাইরে রয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE