Advertisement
E-Paper

জয়ীর আসন বদল, বাড়াচ্ছে অন্তর্দ্বন্দ্ব

বর্তমানে জেলা পরিষদে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৫টি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিটিতেই তারা ক্ষমতায়। ২০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ১৯টি রয়েছে বিরোধীদের।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৯

‘বিজেপি জুজু’ রয়েছে। সংরক্ষণের ‘গেরো’ রয়েছে। মেটেনি গোষ্ঠী-বিবাদ। এই অবস্থায় এ বার পঞ্চায়েত ভোটে হুগলিতে দলের ফল কী হবে, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ।

বর্তমানে জেলা পরিষদে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৫টি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিটিতেই তারা ক্ষমতায়। ২০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ১৯টি রয়েছে বিরোধীদের। ‘উন্নয়ন’-এর জোয়ারেও এ বার ওই ফলাফল ধরে রাখা বা আরও ভাল ফল হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

কিন্তু কেন?

জেলায় দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কোর কমিটির বৈঠকে এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গতবারের জয়ী এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সদস্যদের ফের টিকিট দেওয়া হবে। কোনও আসন সংরক্ষিত হয়ে গেলে তাঁকে পাশের কোনও আসনে দাঁড় করানো হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই মানা হচ্ছে না। এর মূল্য দিতে হবে দলকে।”

মনোনয়ন পর্বেই দেখা যাচ্ছে, জেলায় বহু ক্ষেত্রে এক জায়গার তৃণমূল প্রার্থীকে উজিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে। বহু এলাকায় আবার গতবারের জয়ী প্রার্থী টিকিটই পাননি। স্থানীয় নেতারা নিজেদের গোষ্ঠী-সমীকরণ ঠিক রাখতে এই কাণ্ড করেছেন বলে দাবি অনেক তৃণমূল নেতারাই। তাঁরা মনে করছেন, এর প্রভাব ভোটের ফলে পড়বেই। অন্য এলাকার প্রার্থীদের স্থানীয় কর্মীরা মানবেন না।

সিঙ্গুর থেকে জেলা পরিষদের একটি আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক। তাতে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্নার কোন্দল ফের সামনে এসেছে। সিঙ্গুর থেকেই গতবার জেলা পরিষদের আসনে জিতে কর্মাধ্যক্ষ হওয়া মানিক দাস এ বার তারকেশ্বর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। বলাগড়ের বাসিন্দা, দলের জেলা যুব সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরামবাগ থেকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। খানাকুলে জেলা পরিষদ আসনে জেতা প্রবীণ তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ টিকিটই পাননি। ওই এলাকারই গত দু’বারের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত সিংহরায়কেও টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রের খবর। হরিপালের পোড়খাওয়া তৃণমূল নেতা সমীরণ মিত্র গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন তারকেশ্বরে। জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর তীব্র আপত্তি থাকলেও চণ্ডীতলার দাপুটে তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় শিয়াখালা থেকে দাঁড়াচ্ছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর।

গতবার পোলবার জেলা পরিষদের যে আসন থেকে জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন মনোজ চক্রবর্তী, এ বার সেই আসন সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তাঁকে অন্য আসনে দাঁড় করানো হয়েছে। এতে গোঁসা হয়েছে চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারের অনুগামীদের। তাঁদের অভিযোগ, মনোজকে নতুন আসন পাইয়ে দিতে দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তই কলকাঠি নেড়েছেন। ওই আসনে শ্যামল ঘোষ নামে আরও এক নেতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন অসিতবাবুরা। অসিতবাবু বলেন, ‘‘অবিচার মেনে নেব না।’’

পঞ্চায়েত ভোটের কাউন্টডাউন শুরুর আগে দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বারে বারে গোষ্ঠী-বিবাদ মেটাতে জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে, সেই বিবাদ তত বেআব্রু হচ্ছে। মনোননয়কে ঘিরে ইতিমধ্যে জাঙ্গিপাড়া এবং খানাকুলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষও হয়ে গিয়েছে। ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র নিজের গোষ্ঠী-সমীকরণ ঠিক রাখতে একের পর এক জয়ী প্রার্থীকে বাদ দিয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।

ধনেখালি পঞ্চায়েতের গতবারের উপপ্রধান বিনু শী, ফুলমণি টুডু, তাপস দাসকে এ বার টিকিট দেওয়া হয়নি। বিধায়কের কোপে পড়ে সোমসপুর পঞ্চায়েতের সদস্য দেবী ধাড়াও এ বার টিকিট পাননি বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। দেবী বলেন,“নিজের জমি সমেত বাড়িতে প্রোমোটারের থাবা আটকাতে আদালতে গিয়েছিলাম বলেই এ বার বাদ পড়লাম।” বিধায়ক অসীমা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “সংরক্ষণের কারণে এ বার অনেককে টিকিট দেওয়া যায়নি।” কিন্তু যে ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নেই? উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন বিধায়ক।

দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য ভোট প্রস্তুতি নিয়ে কোনও রকম উদ্বেগ বা চিন্তার কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘কিছু ক্ষোভ প্রতিবারেই থাকে। সব মিটে যাবে।” কিন্তু এতদিনেও যা মেটেনি, তা আর ক’দিনে মিটবে, এই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে সাধারণ বহু কর্মী-সমর্থকের।

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC Election Result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy