Advertisement
১৭ মে ২০২৪

আগমনীর টানে বাড়ি ফিরতে চায় সুনন্দারা

কাশফুল কেমন! মণ্ডপ বা প্রতিমা কেমন করেই বা সেজে উঠছে! সে সব আর পাঁচ জন শিশুর মতো তাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আগমনীর বার্তা ঠিক পেয়ে গিয়েছে পুজা মুদি, মনোজ পার্সি, সুনন্দা মাল, সুমিত্রা কিস্কুরা।

কাশফুল হাতে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

কাশফুল হাতে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

কাশফুল কেমন! মণ্ডপ বা প্রতিমা কেমন করেই বা সেজে উঠছে! সে সব আর পাঁচ জন শিশুর মতো তাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আগমনীর বার্তা ঠিক পেয়ে গিয়েছে পুজা মুদি, মনোজ পার্সি, সুনন্দা মাল, সুমিত্রা কিস্কুরা।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই বালক-বালিকারা চোখে দেখতে পায় না। অনুভব করেই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে ওরা।

উলুবেড়িয়ার জগৎপুর আনন্দভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলে মোট ৩০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিখরচায় সরকারি এই স্কুলে পড়াশোনা করে তারা। নবম থেকে তাদের ভর্তি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন হাইস্কুলে। পুজোর ছুটি পড়ে পঞ্চমী থেকেই। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আর তর সইছে না তাদের। মুখিয়ে রয়েছে বাড়ি ফেরার জন্য। সেখানে গিয়ে ভাইবোন, বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার আনন্দ অনুভব করতে চায় দৃষ্টিহীন এই ছেলেমেয়েগুলি।

তবে কী করে অনুভব করেপুজোর আমেজ? শিক্ষক অজয় দাস বললেন, ‘‘বেশিরভাগ জিনিসের অবয়ব কী রকম হতে পারে তা দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন মডেল দিয়ে একটা ধারণা দেওয়া হয়। কিন্তু পুজোর ব্যাপারটি আলাদা। ফলে কোনও মডেল দিয়ে এ বিষয়ে দৃষ্টিহীনদের বোঝানো কঠিন। সে জন্য অন্য পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, পুজোর সঙ্গে শিউলি ফুল, ভোরে শিশির পড়া, ঠান্ডা আমেজ— এ সবের সম্পর্ক আছে। এগুলি তাদের গল্পচ্ছলে বলে দেওয়া হয়। ফলে যখন সত্যি শিউলি ফুলের গন্ধ ছড়ায়, ভোরে শিশির পড়ে তা সহজেই বুঝতে পারে তারা। এই ভাবেই পুজোর আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, মাঠ থেকে কাশ ফুল তুলে আনা হয়। তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় এই কাশফুল। তখন তাদের মধ্যে দেখা যায় অন্যরকম আনন্দ।

কী ভাবে আনন্দ করবে পুজোর কয়েকটি দিন? পুজা, মনোজদের কথায়, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরব। নতুন কাপড় পরব।’’ বাউড়িয়ার সাজিনা খাতুন এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন সাজিনার কথায়, ‘‘পুজোর জাঁক আমি বুঝতে পারি।’’

পুজোর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময়ে অবশ্য স্কুলের তরফ থেকে উপহার পায় ছাত্রছাত্রীরা। বছর দুই হল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের জন‌্য এই উপহার দিচ্ছে সরকার। এই স্কুলে সব মিলিয়ে ৮০ জন ছাত্রছাত্রীর নতুন জামা তৈরি হচ্ছে বাঁকড়া দর্জি মহল্লায়। নামী এক জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থা তৈরি করছে জুতো। দর্জি মহল্লা থেকে যেমন জামার মাপ নেওয়া হয়েছে, জুতোর মাপও নিয়েছে জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থা। অজয়বাবু বললেন, ‘‘স্বাভাবিক ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে শারিরীকভাবে ওরা অনেকটাই আলাদা। শুধু অনুভব দিয়েই পুজোর আনন্দ উপভোগ করবে ওরা। সেই আনন্দে যেন কোনও ঘাটতি না থাকে আমরা সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাইছি।’’

স্কুলে পুজোর আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছে। কাশফুলের গোছা হাতে নিয়ে ঘুরছে পুজা মুদি, সাজিনা খাতুনরা। অপেক্ষা করছে তারা বাড়ি ফিরে পুজোর আনন্দে সকলের মধ্যে লীন হয়ে যাওয়ার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blind students Durgapuja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE