Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
বলাগড়ে পুড়ে মৃত্যু মা-শিশুর

টাকা না-আনায় খুনের অভিযোগ

পুলিশ জানায়, পলাতক তিন অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। ধৃতদের বুধবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বাড়িটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। স্বপনের দাদা, অভিযুক্ত শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সাংসারিক অশান্তির জেরেই ছেলেকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে মন্দিরা।’’

শোকার্ত: মন্দিরা ঘোষ ও ছেলে তৃষাণ (উপরে)। মন্দিরার পরিবার (নীচে)। —নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত: মন্দিরা ঘোষ ও ছেলে তৃষাণ (উপরে)। মন্দিরার পরিবার (নীচে)। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত সরকার
বলাগড় শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:২৭
Share: Save:

তখন ভোরের আলো সবে ফুটেছে। এক মহিলা ও তাঁর শিশুপুত্রের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বলাগড়ের ঢাকছড়া গ্রামের অনেকেরই। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, স্বপন ঘোষ নামে গ্রামেরই এক বাসিন্দার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে আগুনের হলকা। সেই ঘর থেকেই বাঁচার জন্য প্রবল চিৎকার করছেন স্বপনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মন্দিরা ঘোষ (২৮) ও তাঁর চার বছরের ছেলে তৃষাণ। গ্রামবাসীরা দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি।

মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনার পরে মন্দিরার বাপেরবাড়ির লোকজন খুনের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, দাবিমতো টাকা এনে দিতে না-পরার জন্য শ্বশুরবাড়িতে মন্দিরার উপরে অত্যাচার চালানো হতো। এ দিন কেরোসিন ঢেলে মা-ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়। পুলিশ মন্দিরার স্বামী স্বপন এবং শাশুড়ি পদ্মাদেবীকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত মন্দিরার শ্বশুর, ভাসুর এবং জা-ও। পুলিশ তাঁদের ধরতে পারেনি।

পুলিশ জানায়, পলাতক তিন অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। ধৃতদের বুধবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বাড়িটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। স্বপনের দাদা, অভিযুক্ত শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সাংসারিক অশান্তির জেরেই ছেলেকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে মন্দিরা।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১২ সালে গুপ্তিপাড়ার গোঁসাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা মন্দিরার সঙ্গে স্বপনের বিয়ে হয়। বিয়েতে নগদ ৫০ হাজার টাকা, খাট-আলমারি, পাঁচ ভরি সোনা— সবই দেওয়া হয় বলে মন্দিরার বাপেরবাড়ির লোকজনের দাবি। তা সত্ত্বেও বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মন্দিরার শ্বশুরবাড়ির লোকজন টাকা চাইতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। অশান্তির জেরে একাধিকবার বাপেরবাড়িতে চলে এসেছিলেন মন্দিরা।

মঙ্গলবার গ্রামবাসী যখন মন্দিরা ও তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করতে যান, স্বপন সেখানে ছিলেন না। চাষের কাজে গিয়েছিলেন। ছিলেন মন্দিরার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং জা। মন্দিরাদের উদ্ধার করে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানোর সময় দু’জনের মৃত্যু হয়।

মন্দিরাদের এক পড়শি বলেন, ‘‘ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সেখানে কেরোসিনের গন্ধ পেয়েছি। কী করে ওঁরা মারা গেলেন, বলতে পারব না। স্বপনরা গ্রামে মেলামেশা করেন না।’’ আর এক মহিলার কথায়, ‘‘দু’জনের শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। মন্দিরা শুধু বলছিল, ‘ছেলেকে তোমরা দেখো। তোমরাই মানুষ কোরো’।’’

মন্দিরার বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা ঢাকছড়ার অন্যদের থেকে ঘটনা জানতে পারেন। মন্দিরার মা মিতাদেবী বলেন, ‘‘টাকার জন্য শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারের জন্য মেয়ে প্রায়ই এসে কান্নাকাটি করত। আমরা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিতাম। মেয়েটা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ওরা যে পুড়িয়ে মারবে, ভাবিনি। নাতিটা কী দোষ করল?’’ মন্দিরার বাবা বরেন ঘোষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা সঠিক বিচারের দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Die Baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE