Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাত বাড়তেই শহর থেকে বাস উধাও

নগরায়ণের পথে পা বাড়িয়েছে হাওড়ার ‘শস্যগোলা’ শ্যামপুর। কিন্তু যানবাহন সমস্যার উন্নতি হল কই! রাত ৮টা বাজলেই শহর থেকে উধাও হয়ে যায় বাস। শ্যামপুর-গাদিয়াড়া মোড় থেকে শহরের বিস্তার ঘটেছে। এক সময়ে এখানে রাস্তার ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত বিভিন্ন রুটের অটোরিকশা, বাস। ফলে, যানজট হত। পুলিশ এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়।

যাতায়াতে ভরসা ছোট গাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা।

যাতায়াতে ভরসা ছোট গাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

নগরায়ণের পথে পা বাড়িয়েছে হাওড়ার ‘শস্যগোলা’ শ্যামপুর।

কিন্তু যানবাহন সমস্যার উন্নতি হল কই! রাত ৮টা বাজলেই শহর থেকে উধাও হয়ে যায় বাস।

শ্যামপুর-গাদিয়াড়া মোড় থেকে শহরের বিস্তার ঘটেছে। এক সময়ে এখানে রাস্তার ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত বিভিন্ন রুটের অটোরিকশা, বাস। ফলে, যানজট হত। পুলিশ এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়। তৈরি হয়েছে অটো-স্ট্যান্ড। মোড়ের ব্যস্ত জায়গায় কোনও বাস বা অটোকে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। কিন্তু রাত ৮টার পরে বাগনান বা উলুবেড়িয়া যাওয়ার জন্য শ্যামপুর থেকে কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তখন সাধারণ মানুষকে বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট গাড়িতেই চড়তে হয়। কিন্তু তা-ও সব সময় মেলে না বলে ক্ষোভ রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের।

বাস-মালিকদের দাবি, এ শহরে রাত ৮টার পরে তেমন যাত্রী মেলে না। তাই বাস চালানো হয় না। কিন্তু বাস-মালিকদের এই দাবি মানতে চাননি স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাগনান-শ্যামপুর বা উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর— যে রাস্তা ধরেই শ্যামপুরে আসা যাক না কেন, রাস্তার দু’পাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে পুরুষ্ট ধানগাছ চোখে পড়ে। কিন্তু শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত গাদিয়াড়া-শ্যামপুর মোড়ের দিকে যত যাওয়া যায়, ততই সবুজ উধাও। আশপাশে উঠছে বহুতল। জমজমাট বাজার। শহরের চেহারা নিচ্ছে গ্রামীণ হাওড়ার এই জনপদ।

জেলার ১৪টি ব্লকের মধ্যে শ্যামপুরেই রয়েছে বেশি চাষযোগ্য জমি। ছোট এবং প্রান্তিক চাষির সংখ্যা অনেক বেশি। ঘরে ঘরে রয়েছে ধানের মরাই। তবে এলাকাতে এক সময়ে শিল্পায়নও হয়েছে। অনন্তপুরে গড়ে উঠেছিল কাপড়ের কারখানা। কয়েক হাজার মানুষ কাজ করতেন। এই কারখানার প্রধান রূপকার, শহরের বাসিন্দা মুরারীমোহন মান্নার স্বপ্নও ছিল অনেক। বেলপুকুরে তিনি একটি আইটিআই তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, কারখানার জন্য দক্ষ শ্রমিকের জোগান দেওয়া। এই কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জমি দান করেছিলেন তিনি। মুরারীবাবুর মৃত্যুর পরে সব কিছু স্তিমিত হয়ে পড়ে। কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ধাক্কা খায় আইটিআই। কাপড়ের কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে আর শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠলেও বেলপুকুরে আইটিআই নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এখন যে শিল্পের উপরে নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষ বেঁচে আছেন, তা হল ইটভাটা। দামোদর এবং রূপনারায়ণের তীরে শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এর জন্য জমে উঠছে বাজার-দোকানও। এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নতি বহু বাইরের মানুষকে এখানে টেনে আনছে। বাগনানের উড়ালপুল তৈরি, রাস্তাঘাটের উন্নতির ফলে বেড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে চাকরিস্থল থেকে দিনের দিন বাড়ি ফিরে আসছেন অনেকে। তাঁদের বসবাসের জন্য গোবিন্দপুর, খাড়ুবেড়িয়া, নারকেলবাড় প্রভৃতি এলাকায় রাস্তার দু’ধারে গড়ে উঠছে পাকা বাড়ি। পাল্টাচ্ছে শ্যামপুরের চেহারা।

কিন্তু যানবাহন সমস্যা রয়েছে সেই তিমিরেই। স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অসিত সাউ বলেন, ‘‘শ্যামপুর থেকে বাগনান বা উলুবেড়িয়া যাওয়ার বাস যদি রাত নটা পর্যন্ত পাওয়া যেত, তা হলেও অনেক উপকার হত।’’ বিধায়ক তৃণমূলের কালীপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাস-মালিকদের বলা হয়েছিল রাত ন’টা পর্যন্ত শ্যামপুর থেকে বাস চালাতে। কিন্তু যথেষ্ট যাত্রী না মেলার যুক্তিতে তাঁরা প্রস্তাবে রাজি হননি। তবে ফের তাঁদের অনুরোধ করা হবে।’’ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরও জানিয়েছে, ওই এলাকায় রাত ৮টার পরে বাস চালানো নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

তবে, যান-সমস্যা প্রকট হলেও বেহাল নিকাশির জন্যও সমস্যায় পড়েন মানুষ। বিশেষ করে বর্ষায় তাঁদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। বাজার চত্বরগুলিতে সে ভাবে নিকাশি-নালা তৈরি না হওয়ায় বা যেগুলি রয়েছে, সেগুলি সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় এই সব এলাকায় জল জমে যায়। একটি মাছের আড়তের কর্মচারী দেবাশিস পাখিরা বলেন, ‘‘শহর বাড়ছে। শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল বা নিকাশি নালাগুলির সংস্কার নিয়ে একটি মাস্টার-প্ল্যানের প্রয়োজন রয়েছে।’’ এ নিয়ে শ্যামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামচরণ পাখিরা বলেন, ‘‘শ্যামপুর-গোবিন্দপুর খালটি আমরা নিয়মিত সংস্কার করি। নিকাশি নালাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা রাতের অন্ধকারে বর্জ্য ফেলে নিকাশি নালা ও খাল বুজিয়ে দেন। আমরা একটি জমি দেখছি। সেটা পাওয়া গেলে বর্জ্য ফেলার জন্য জায়গা হবে। তখন এই সমস্যা আর হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nurul absar shyampur bus amar sohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE