সিল্ক প্রিন্টিং।
শাড়ির নকশা নিয়ে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুজোর মুখেও ছাপার বরাত আসছে না।
গত কয়েক বছর ধরেই চাহিদা পড়তির দিকে। কাঁচামালের দাম বাড়ছে। রয়েছে জিএসটি-র খাঁড়াও। কিন্তু এ বার শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং কারখানাগুলিকে কার্যত মাছি তাড়াতে হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কেন?
দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রদীপ বণিক। তিনি বলেন, ‘‘জিএসটি-র ধাক্কায় আমাদের শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা এখনও উঠে দাঁড়াতে পারিনি। গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দেশজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি চলছে, তার ধাক্কা আমাদের শিল্পেও লেগেছে। আমার ধারণা, মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। সেই কারণেই এই অবস্থা। গত বছরের তুলনায় অন্তত ৪০% চাহিদা কম।’’
‘সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিফ এগ্জিকিউটিভ তথা শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্যও মনে করেন, ‘‘একে তো জিএসটির ফাঁদ, তার সঙ্গে গত কয়েক মাসের আর্থিক মন্দার পরিস্থিতি। এর খারাপ প্রভাব পড়ছে সিল্ক প্রিন্টিং শিল্পে। লোকের হাতে টাকা না-থাকাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। লাভের অঙ্ক তলানিতে ঠেকছে।’’
শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, তালপুকুর, বৈদ্যবাটী পুরসভার চাতরা মান্নাপাড়া, নওগাঁ, মরাদান, বৌবাজার, শেওড়াফুলি, রাজ্যধরপুর বা পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের কয়েকশো কারখানা রয়েছে। দশ হাজারেরও বেশি
মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সময় এই শিল্পের
রমরমা ছিল। কিন্তু বছর পাঁচ-ছয় ধরে সুদিন উধাও। অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। কারও ব্যবসার পরিধি ছোট হয়েছে। কমেছে শ্রমিক। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরাও এই পেশায় আসছেন না। আর এ বার অবস্থা শোচনীয়।
নওগাঁ মোড়ের কাছে রাজীব চক্রবর্তীর কারখানা রয়েছে। তিনি জানান, নতুন প্রজন্মের মেয়েদের শাড়ি পরার প্রবণতা কমেছে। তাই শাড়ির চাহিদা কমছে। দিন দিন বাজারের যে অবস্থা হচ্ছে তাতে নিজের ছেলেকে আর এই পেশায় আনতে চান না তিনি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তিনটে কারখানা রয়েছে। কয়েক বছর আগেও আমাদের জনা পঁয়ত্রিশ শ্রমিক ছিলেন। এখন ২৪-২৫ জন। তাঁদের মজুরিও কমাতে হয়েছে। আগে তাঁরা সপ্তাহে তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা মজুরি পেতেন। এখন ভাল কাজ হলে বড়জোর ২৫০০ টাকা পান।’’ রাজ্যধরপুরের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘নিজেদের লাভ তলানিতে। তাই শ্রমিকদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া যাচ্ছে না।’’ নওগাঁ ঘোষালপাড়ার অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে কাজের চাপে অন্য কারখানাতেও ছাপার জন্য কাপড় পাঠাতে হতো। এখন নিজের কারখানাতেই কাজ থাকে না।’’ এক কারখানা মালিক জানান, পরিস্থিতির জেরে কেউ কেউ ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করাচ্ছেন না। ফলে,
ব্যাঙ্ক-ঋণও পাচ্ছেন না। তাঁর
খেদ, ‘‘টাকা ঢেলেই বা কী হবে? বাজার তো মন্দা।’’
ব্যবসার খারাপ হাল হওয়ার জন্য তাঁরা যেমন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুষছেন, তেমনই মানছেন, সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারেনি এই তল্লাট। বেঙ্গালুরু,
সুরাত, বেনারসের মতো রাজ্য প্রযুক্তিতে ভর করে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বাজার দখলে পিছিয়ে পড়ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করছেন, শিল্পের পুনরুজ্জীবনের দিকে না তাকালে পরিস্থিতি শুধরোবে না। শ্রীরামপুরের প্রভাসনগরে প্রস্তাবিত সিল্ক হাব হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে বলে আশায় বুক বেঁধে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy