Advertisement
E-Paper

দুর্গ রক্ষাই চ্যালেঞ্জ নতুনদের কাছে

ছাত্র রাজনীতিতে পুরনো মুখ। তাই বলে একেবারে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী এবং তাও আবার বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে! সিঙ্গুর আন্দোলনে যিনি তৃণমূলের সামনের সারিতে ছিলেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৬

ছাত্র রাজনীতিতে পুরনো মুখ। তাই বলে একেবারে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী এবং তাও আবার বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে! সিঙ্গুর আন্দোলনে যিনি তৃণমূলের সামনের সারিতে ছিলেন।

এমন ‘হেভিওয়েট’-এর বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই, কেমন লাগছে? সিপিএমের যুব সংগঠনের সভাপতি ও চাঁপাডাঙা কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হরিপাল স্টেশনের কাছে উড়িয়াবাজার মোড়ের বাসিন্দা যোগিয়ানন্দ মিত্র অকুতোভয়। বললেন, ‘‘হরিপাল সিপিএমের দুর্গ। এটা ঠিক যে ২০১১য় এখানে হেরেছি। তবে দুর্গ পুনরুদ্ধার করাটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে রয়েছে দলের সেনানিরা।’’ সোমবার প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হতেই কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেওয়াল লেখায় হাত লাগান।

চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে এ বার ভোটে প্রার্থী নির্বাচনে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বামফ্রন্টের তরফে সোমবার হুগলির ১১টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সিঙ্গুরে দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতা রবীন দেব। আগের বার পান্ডুয়া এবং গোঘাট হাতে ছিল বামেদের। পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেন এবং গোঘাটের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক এ বারও টিকিট পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে গতবারের পরাজিত শ্রুতিনাথ প্রহরাজ এ বারও উত্তরপাড়া থেকেই মনোনীত। চণ্ডীতলাতেও পুরনো মুখ সিপিএমের আজিম আলি। বাকিরা প্রায় সকলেই আনকোরা। রবীন দেব বাদে বাকি সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। অপেক্ষাকৃত নবীনদের প্রার্থী করায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ উৎসাহী হলেও তাঁরা মনে করছেন, এই কাজটা অনেক আগে থেকেই করা উচিত ছিল।

বলাগড় কেন্দ্র থেকে সিপিএম এ বার প্রার্থী করেছে পাঁচুগোপা‌ল মণ্ডলকে। বয়স ৬২ বছর। বাড়ি ডুমুরদহ টাকিপাড়ায়। ডুমুরদহ আশুতোষ প্রাথমিক বিদ্যাল‌য়ের এই শিক্ষক বছর দুয়েক আগে অবসর নিয়েছেন। আগে ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যানও হন। বর্তমানে সিপিএমের বলাগড় জোনাল কমিটির সদস্য। যদিও, বলাগড় ব্লকে বিশেষ পরিচিত মুখ নন। তবে এলাকায় ‘সজ্জন’ মানুষ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। বলাগড়ের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য, এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ফল মন্দ হয়নি। বিধানসভা ভোটেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত তৃণমূলকে হারানোর সুযোগ রয়েছে। তবে তার আগে প্রার্থীকে বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিতে হবে। পাঁচুগোপালবাবু অবশ্য মঙ্গ‌লবার থেকেই জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। বললেন, ‘‘পার্টির গাইডলাইন অনুযায়ী প্রচার করব। মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা জানার চেষ্টা করব।’’

নিলারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পবিত্র সিংহরায় লড়বে‌ন জাঙ্গিপাড়া কেন্দ্র থেকে। সর্বত্র তেমন পরিচিতি না থাকলেও অস্ত্র হিসাবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে জেতার চেষ্টায় ত্রুটি রাখতে চান না। নিজেকে ‘আনকোরা’ বলতেও রাজি নন পবিত্রবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আটের দশকে হরিপাল কলেজে পড়ার সময় থেকে চুটিয়ে ছাত্র রাজনীতি করছি। এসএফআইয়ের আঞ্চলিক কমিটির সদস্য ছিলাম সেই সময়।’’ ১৯৮৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাশ করেন। পরে জেলায় যুব সংগঠনের দায়িত্বও সামলেছেন। ১৯৯৮ সালে ভোটে জিতে ফুরফুরা পঞ্চায়েতের প্রধান হন। তার আগে জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। দলের সক্রিয় কর্মী পবিত্রবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসে গত পাঁচ বছর অনেক জায়গায় দলের কার্যালয়ের তালা খুলতে পারিনি আমরা। সন্ত্রাসমুক্ত ভোট হলে জাঙ্গিপাড়ার ফল কিন্তু আমাদের অনুকূলে থাকবে।’’

চন্দননগরের গৌতম সরকার কিংবা আরামবাগের অসিত মালিকও শিক্ষকতা করেন। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু ভদ্রেশ্বর পুরসভার কাউন্সিলরও বটে। অসিতবাবু এবিটিএ-র আরামবাগ মহকুমার সম্পাদক। প্রাক্তন বিধায়ক শ্রুতিনাথবাবু উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের অধ্যাপক ও কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটার রাজ্য সম্পাদক।

জেলা সিপিএম সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সব জায়গাতেই আমাদের প্রার্থীদের সেখানকার মানুষ চেনেন, জানেন। তৃণমূল গত পাঁচ বছরে কী করেছে, সবাই দেখেছে। এই সরকারকে সরানোই আমাদের প্রধান কাজ। এই সরকার সরলে ফের শিল্প হবে। কৃষি থাকবে। মহিলারা পথেঘাটে নিরাপদ থাকবেন। শিক্ষকরা মার খাবেন না।’’

সম্পাদকের এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন নতুনরা।

newcandidate challange
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy