Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘সোনার ছেলে’ চন্দনের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে তারকেশ্বর

যাওয়ার সময় কথা দিয়েছিল, সুযোগ পেলে স্বর্ণপদক জিততে চেষ্টার কসুর করবে না। সুযোগ মিলেছে। নিজের দেওয়া কথাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে তারকেশ্বরের চন্দন বাউরি। চিনে বিশ্ব স্কুল মিটে ৪০০ মিটারে সোনা জিতে ফিরেছে সে।

ছেলের অপেক্ষায় মা ঝর্নাদেবী। ইনসেটে চন্দন। ছবি: দীপঙ্কর দে।

ছেলের অপেক্ষায় মা ঝর্নাদেবী। ইনসেটে চন্দন। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

যাওয়ার সময় কথা দিয়েছিল, সুযোগ পেলে স্বর্ণপদক জিততে চেষ্টার কসুর করবে না।

সুযোগ মিলেছে। নিজের দেওয়া কথাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে তারকেশ্বরের চন্দন বাউরি। চিনে বিশ্ব স্কুল মিটে ৪০০ মিটারে সোনা জিতে ফিরেছে সে। তার সাফল্যে কোচ এবং বাড়ির লোক তো বটেই, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে তারকেশ্বরের অ্যাথলেটিক মহল— উচ্ছ্বসিত সবাই।

এ বারই তারকেশ্বরের রামনগর নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ওই স্কুলেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে চন্দন। প্রধান শিক্ষক সৌমেশ মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বলেছিল, চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরব। ও কথা রেখেছে। আমাদের কাছে ও প্রেরণা।’’

গত ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই বিশ্ব স্কুল মিট আয়োজিত হয় চিনে। ৪০০ মিটারে ৪৭.১ সেকেন্ড সময় করে সোনা জেতে চন্দন। পাশাপাশি এশিয়ান স্কুল মিটের পুরনো রেকর্ড (৪৭.২ সেকেন্ড) ভেঙে দিয়েছে সে।

তারকেশ্বর স্টেশন থেকে প্রায় চার কিলোমিটার গিয়ে পূর্ব রামনগর পঞ্চায়েতের রথতলা গ্রামে ‘সোনার ছেলে’র বাড়িটি অবশ্য মাটির। তা-ও ভাঙাচোরা। মা ঝর্নাদেবী আর দাদা সন্তুর সঙ্গে থাকে চন্দন। বাবা কার্তিক বাউরি বছর এগারো আগে মারা গিয়েছেন। মা খেতমজুর। কাজ পেলে ৬০ টাকা আর দু’কেজি চাল পান। দাদা সন্তু সিভিক স্বেচ্ছাসেবক। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দৌড় দেখে চন্দনকে চোখে পড়ে স্থানীয় কোচ রাজদীপ কারকের। তিনিই চন্দনকে গড়েপিঠে তোলেন। ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেটা অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। ও এত দূর পৌঁছবে ভাবতে পারিনি। আমরা খুব খুশি।’’ ঠাকুমা রেণুদেবীর কথায়, ‘‘নিজের চেষ্টাতেই ও নাম করেছে। আমরা ঠিকমতো খেতে দিতেও পারিনি।’’ রাজদীপ বলছিলেন, ‘‘সামনে এখনও অনেক রাস্তা! চন্দন নিশ্চয়ই পারবে সব বাধা টপকে যেতে।’’

সোনা জিতেও অবশ্য এখনই বাড়ি ফেরা হচ্ছে না চন্দনের। শুক্রবার চিন থেকে দিল্লিতে ফিরে সে হরিয়ানার রোহতকে জুনিয়র জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিয়েছে। আগামী ১১ জুলাই কলম্বিয়ায় যুব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরে বাড়ি ফিরবে। তার পরে অগস্টের গোড়ায় অনূর্ধ্ব ২০ জাতীয় গেমস। সেপ্টেম্বরে সিনিয়র ন্যাশনাল। ভবিষ্যতে ৪০০ মিটারেই মনোনিবেশ করতে চায় চন্দন। রাজদীপ বলেন, ‘‘ওকে বলেছি, এ বার ৪৬.৮ সেকেন্ডে ফিনিশিং পয়েন্ট ছুঁতে হবে।’’

পরিচিতদের অবশ্য অনুযোগ, দৌড়নোর জন্য ভাল জুতো জোটেনি চন্দনের। মেলেনি পুষ্টিকর খাবার। তা সত্ত্বেও নজরকাড়া পারফর্ম করেছে সে। প্রশাসন থেকে রাজ্য সরকার ফিরেও তাকায়নি। স্কুলের শিক্ষাকর্মী অলকেশ বেরা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা তো বটেই, তারকেশ্বরকে একটা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিল ছেলেটা। সরকার এ বার অন্তত ওর কথা ভাবুক। তা হলে রাজ্যকে অনেক সাফল্য এনে দেবে। বাড়ি ফিরলে ওকে সংবর্ধনা দেওয়া ব্যবস্থা করব।’’

সতীর্থরা জানান, ঠা ঠা রোদ হোক কিংবা বর্ষা— অনুশীলনে কামাই ছিল না তার। রাজদীপের পাশাপাশি তারকেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ শিবু ধারা, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়দের তত্ত্বাবধানেও অনুশীলন করেছে সে। অ্যাথলিট আশিস শী বলেন, ‘‘যে দিন চন্দন বাড়ি ফিরবে, কলকাতা থেকে বাজনা বাজিয়ে ওকে নিয়ে আসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE