Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিবন্ধী যুবককে মাটিতে ফেলে মারের নালিশ

অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার

 মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের পরেও টনক নড়েনি ওঁদের। নিজেকে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ ভেবে এ বার এক প্রতিবন্ধী যুবক এবং তাঁর ভাইকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে।

জখম: মায়ের সঙ্গে নাসির। নিজস্ব চিত্র

জখম: মায়ের সঙ্গে নাসির। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
ধনেখালি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের পরেও টনক নড়েনি ওঁদের। নিজেকে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ ভেবে এ বার এক প্রতিবন্ধী যুবক এবং তাঁর ভাইকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে।

বুধবার রাতে হুগলির ধনেখালির শিবাইচণ্ডী এলাকার ওই ঘটনায় দুই ভাইয়ের ‘অপরাধ’, তাঁরা নিজেদের মধ্যে বচসায় জড়িয়েছিলেন। তা থামাতে গিয়েই সিভিক ভলান্টিয়ারের ওই ‘মাতব্বরি’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় অবশ্য এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রহৃতদের বাড়ির লোকেরা জানান, শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব তাঁদের বিষয়টি মিটমাট করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যানজট সামলানো কিংবা দৈনন্দিন আইন-শৃঙ্খলার কাজে পুলিশকে সাহায্য করার উদ্দেশেই সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ। কিন্তু উর্দিধারীদের একাংশের আড়ালে থেকে কখনও লরি আটকে তোলা আদায়, নির্মীয়মাণ বহুতলের কাজ বন্ধের হুমকি দেওয়া— আগে এমন বহু অভিযোগ উঠেছে ওঁদের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগে হেলমেট না-পরায় সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে মার খেয়ে এক স্কুটি-চালকের মৃত্যুতে তেতে উঠেছিল মধ্যমগ্রাম। প্রশ্ন উঠেছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের এক্তিয়ার নিয়ে। তার পরে ফের বুধবার সেই প্রশ্ন সামনে এল শিবাইচণ্ডীর ঘটনায়।

প্রহৃতদের নাম শেখ নাসির এবং শেখ রশিদ। নাসির প্রতিবন্ধী। তাঁরা শিবাইচণ্ডী স্টেশন লাগোয়া ঝুপড়িতে থাকেন। স্টেশনের পাশে আনাজ-বাজারে কাজ করেন। বুধবার রাত ১২টা নাগাদ কোনও কারণে তাঁদের ঝগড়া হয়। তাঁরা জানান, কাছেই ধনেখালি থানার তিন সিভিক ভলান্টিয়ার দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা মধ্যস্থতা করতে আসেন। তবে ঝগড়া থামানোর বদলে এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাতে জড়িয়ে পড়েন। দু’জনকেই তিনি মারধর করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় ঝুপড়িবাসীরা গোলমাল থামান।

এর পরে দুই ভাই ঝুপড়িতে ফিরে যান। অভিযোগ, কিছুক্ষণের মধ্যে ওই তিন সিভিক ভলান্টিয়ারও সেখানেও পৌঁছন। যে যুবকটি হামলা করেছিলেন, তিনি ফের লাঠি দিয়ে নাসির এবং রশিদকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। রশিদ-নাসিরের দাদা শেখ মইন বলেন, ‘‘ওই সিভিক ভলান্টিয়ার নেশাগ্রস্ত ছিলেন। এসেই দুই ভাইকে বেধড়ক মারতে থাকেন। নাসির প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও রেয়াত করেননি। বাড়ির মহিলারা হাতে পায়ে ধরেন। ওঁদেরও ধাক্কা মেরে ফেলে দেন।’’

মারধরের সময় বাকি দুই সিভিক ভলান্টিয়ার চুপচাপই ছিলেন। বেগতিক বুঝে শেষে তাঁরা মারমুখী সহকর্মীকে সরিয়ে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকালে রশিদ-নাসিরের পরিবারের লোকেরা তৃণমূলের স্থানীয় কার্যালয়ে যান। তাঁদের বক্তব্য, সেখান থেকে তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়, থানা-পুলিশ করার দরকার নেই। বিষয়টি তাঁরাই দায়িত্ব নিয়ে মিটিয়ে দেবেন। তবে বিষয়টি চাপা থাকেনি। এলাকায় এ নিয়ে শোরগোল পড়েছে। এ দিন বিকেলে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

স্থানীয় এক মহিলার ক্ষোভ, ‘‘থানায় কাজ করে বলে ওরা যা খুশি করবে! নাসিরদের খুব মেরেছে।’’ এক যুবকের কথায়, ‘‘এর বিহিত হওয়া দরকার। না হলে তো এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে! ওই সিভিক ভলান্টিয়ার অন্যায় করেছেন।’’ ঘটনার কথা পুলিশের কানেও পৌঁছেছে। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘এমন একটা ঘটনার কথা আমাদের কানেও এসেছে। তবে থানায় কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ হলে নিশ্চয়ই আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত ঘটনার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিচ্ছি। ওই এলাকার বিধায়কের সঙ্গে কথা বলব।’’ বার বার ফোন করা হলেও ধরেননি ধনেখালির বিধায়ক তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্র। ফোন কেটে দেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারও।

তবে, হুগলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এই প্রথম নয়। গত সেপ্টেম্বরে চণ্ডীতলার গঙ্গাধরপুরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ভাই-বোন। তাঁদের প্রেমিক-প্রেমিকা ভেবে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ তুলে এক সিভিক ভলান্টিয়ার চড় মারেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বৈদ্যবাটিতেও দুর্ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যুর পরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civic Volunteer Beating Accused Handicapped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE