নানা অভিযোগকে ঘিরে প্রধান-উপপ্রধান দ্বন্দ্বে কয়েক দিন ধরে গ্রামোন্নয়নের কাজ শিকেয় উঠেছে খানাকুল-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতে। প্রধান তাপসী বায়েন উপপ্রধান সন্দীপ বরের বিরুদ্ধে তাঁর সই নকল করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। আবার উপপ্রধান প্রধানের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের হিসাব নিয়ে গরমিলের পাল্টা অভিযোগ তুলেছিলেন।
কিন্তু এতেই শেষ নয়। বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দু’দফায় নিরঞ্জনবাটিতে প্রধানের বাড়িতে হামলা, একটি চালায় অগ্নিসংযোগ এবং তাঁর বাবা ও ভাইকে মারধরের অভিযোগ ওঠে উপপ্রধানের নেতৃত্বে। প্রধান এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। হামলার প্রতিবাদে প্রধান আবার বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসের সব চাবি নিয়ে ব্লক অফিসে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বসে থাকেন। পরে পঞ্চায়েত কর্মীরা তাঁর কাছ থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে অফিস খুললেন।
দু’পক্ষের এই দ্বন্দ্বে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, এর জেরে পঞ্চায়েতের কোনও কাজ কার্যত হচ্ছে না। বিডিও গোবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘প্রধান ঠিক কাজ করেননি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে অফিস না যেতেই পারেন। চাবি আনতে পারেন না। তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে গোলমাল আছে জানি। সেখানকার বিধায়ককে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান এবং উপপ্রধান দু’জনে স্কুলের বন্ধু হলেও বর্তমান বোর্ড গঠনের সময় থেকেই তাঁদের দ্বন্দ্বের শুরু। প্রথম থেকেই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলছিলেন প্রধান। বছর দেড়েক ধরে দু’পক্ষের বিবাদ চরমে ওঠে। কিন্তু দিন সাতেক আগে উপপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁর সই নকল করার অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েতে যাওয়া বন্ধ করে দেন প্রধান। গত মঙ্গলবার তিনি উপপ্রধানের বিরুদ্ধে মহকুমাশাসক (আরামবাগ) প্রতুলকুমার বসুর কাছে অভিযোগও দায়ের করেন। মহকুমাশাসক বিডিওকে আগামী সোমবার দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে পঞ্চায়েত পরিচালনা স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেন। তার পরে বুধবারের ওই ঘটনা। পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। উপপ্রধান সন্দীপ ভিলেজ পুলিশকর্মী। বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তিনি থানায় কর্মরত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রধান বলেন, ‘‘আমার সই নকল করে সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ-সহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। তা থেকে ব্যক্তিগত ভাবে উপপ্রধান টাকাও উপার্জন করছেন। পঞ্চায়েতের প্রায় সব প্রকল্পেই অনিয়ম মাত্রাছাড়া হওয়ায় অফিস যাওয়া বন্ধ করে প্রতিবাদ করি। আক্রোশ মেটাতে আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন উপপ্রধান সন্দীপ বর। তিনি ভিলেজ পুলিশ কর্মী। তাঁর দাবি, ‘‘প্রধানের কাছে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের হিসাব-সহ কিছু হিসাব চাইতেই সপ্তাহখানেক ধরে অফিস আসা বন্ধ করে কাল্পনিক এবং হাস্যকর অভিযোগ তুলছেন। সব প্রকল্পেই ডিজিটাল সইয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রথম থেকেই আমি প্রধানকে সহযোগিতা করে এসেছি। প্রধানের পরিবারের ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়ে কিছু গরমিল ছিল। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy