Advertisement
০৯ মে ২০২৪
উলুবেড়িয়া

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এ বার ১১টি ওয়ার্ডে

উলুবেড়িয়া পুরসভায় এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে অন্তত ১১টি ওয়ার্ডে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার একমাত্র পুরসভায় ২৯টি ওয়ার্ড ছিল। এবার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। গতবার কংগ্রেস এবং তৃণমূল জোট বেঁধে লড়াই করে ১১টি করে আসনে জিতে বামেদের হাত থেকে পুরসভা ছিনিয়ে নিয়েছিল।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে সিপিএম প্রার্থী ফিরোজা খাতুন। ছবি: সুব্রত জানা।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে সিপিএম প্রার্থী ফিরোজা খাতুন। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

উলুবেড়িয়া পুরসভায় এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে অন্তত ১১টি ওয়ার্ডে।

২০০৯ সাল পর্যন্ত হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার একমাত্র পুরসভায় ২৯টি ওয়ার্ড ছিল। এবার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। গতবার কংগ্রেস এবং তৃণমূল জোট বেঁধে লড়াই করে ১১টি করে আসনে জিতে বামেদের হাত থেকে পুরসভা ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান কে হবে তা নিয়ে দু’দলের বিবাদের জেরে জোট ভেস্তে যায়। ক্রস ভোটিংয়ে চেয়ারম্যান পদ পেয়ে যায় কংগ্রেস। যদিও এক বছরের মধ্যে কংগ্রেসের মধ্যে ভাঙন ধরায় তৃণমূল। সাতজন কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে। বোর্ড এককভাবে দখল করে তৃণমূল।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন হয়। তাতে পুরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলেই ইঙ্গিত মিলেছে ১২টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। এর মধ্যে চারটিতে তৃণমূলের সঙ্গে বামফ্রন্টের। বাকি সাতটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির জোর লড়াই হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। গত নিবার্চনে যাদের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হয়েছিল সেই কংগ্রেসকে এ বার প্রতিপক্ষ হিসাবে ধর্তব্যে আনছে না তারা।

এ বার পুরসভায় ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাস ঘটানো হয়েছে। গতবার যে ওয়ার্ডটি ছিল ৩ এবার তা হয়েছে ২৫ নম্বর। ২০০৯ সালে এখানে তৃণমূল জিতেছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলেও তৃণমূল এগিয়ে এখানে। তৃণমূল যেখানে পেয়েছিল ১৮৮৯টি ভোট, সেখানে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৮২৪টি ভোট। ফলেই পরিষ্কার তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বামফ্রন্ট। আগের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার ২ নম্বর। ওয়ার্ডটি ছিল কংগ্রেসের দখলে। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে এখানে এগিয়ে তৃণমূল। তারা পেয়েছে ১০১১টি ভোট। তারপরেই বামফ্রন্ট। তারা পেয়েছে ৯৫৪টি ভোট। এখানেও দু’দলের মধে॥ এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

১০ নম্বর ওয়ার্ড ভেঙে দু’টি হয়েছে। আগে এটি ছিল তৃণমূলের হাতে। এরই একটি অংশ ভেঙে হয়েছে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলেও নবগঠিত ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে। কিন্তু বামফ্রন্টের সঙ্গে ভোটের ব্যবধান অল্পই। তৃণমূল পেয়েছে ১৪৫৭টি ভোট। বামফ্রন্ট পেয়েছে ১৩৮৪টি। এখানেও দু’দলের কঠিন লড়াই। ২০ নম্বর ওয়ার্ড আগের ছিল বামফ্রন্টের হাতে। এখন এটি হয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলে এখানে বামফ্রন্টের প্রার্থী এগিয়ে। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান বেশ কম । এখানে বামফ্রন্ট ভোট পেয়েছিল ১৯৯৭টি। তৃণমূল পেয়েছিল ১৯৪৫টি ভোট।

পূর্বতন ৭, বর্তমানে ২৭ ওয়ার্ডে ২০০৯ সালে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে তৃণমূল এই ওয়ার্ডে এগিয়ে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৮৭৪টি। বিজেপি পেয়েছে ১৬৪৯টি ভোট। ফলে যে দলই জিতুক তাদের কঠিন লড়াই করতে হবে। পূর্বতন ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি হয়েছে ৩০। এই ওয়ার্ডটি ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলে এখানে এগিয়ে বিজেপি। তবে ব্যবধান বেশি নয়। বিজেপি পেয়েছে ১৫২৮টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ১৫১৪টি ভোট। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার ১৮ নম্বর। আগের বোর্ডে এটি ছিল তৃণমূলের হাতে। লোকসভার ফলেও এগিয়ে তারাই। কিন্তু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সঙ্গে তাদের ব্যবধান অল্প। তৃণমূল পেয়েছে ১১০৩টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ৯৬৮টি ভোট। আগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এ বার ৮ নম্বর। আগের বোর্ডে এখানে জেতে তৃণমূল। লোকসভাতেও এখানে এগিয়ে তারা। কিন্তু এখানেও ভোটের ব্যবধান অল্প। তৃণমূল এখানে ভোট পেয়েছিল ১৭২৮টি। বিজেপির ভোট ছিল ১৬৩৬টি। আগের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডটি এখন ৫ নম্বর। এখানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। গত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল এগিয়ে ছিল। তবে বিজেপির সঙ্গে তাদের ভোটের ব্যবধান কমে এসেছে এখানেও। তৃণমূল পেয়েছিল ১২০৭টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ১০৪৮টি ভোট। আগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটি আগে ছিল ৪ নম্বর। ওয়ার্ডটিও ছিল তৃণমূলের হাতে। লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে যায় বিজেপি। কিন্তু ব্যবধান বেশি নয়। বিজেপি পেয়েছিল ১৭৭৪টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ১৭৪৪টি ভোট। আগের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডটি হয়েছে ৩ নম্বর। এই ওয়ার্ডটিও ছিল তৃণমূলের হাতে। লোকসভা নিবার্চনের ফলেও এগিয়ে আছে তৃণমূল। তারা পেয়েছে ১৪৫০। তবে তাদের ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৩৪৪।

তবে বিগত পুরসভায় কংগ্রেস যেখানে পেয়েছিল ১১টি ওয়ার্ড সেখানে ২০১৪ সালের লোকসভা নিবার্চনের ফলে দেখা গিয়েছে লড়াইয়ের ময়দান থেকে যেন উবে গিয়েছে তারা। আগের বোর্ডে ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি ছিল কংগ্রেসের হাতে। এখান থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন বিগত বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। এ বার অবশ্য তিনি তৃণমূলে। গত লোকসভা নিবার্চনের ফলে দেখা যাচ্ছে এখানে তৃতীয় স্থানে কংগ্রেস। বিজেপি এখানে ভোট পেয়েছে ১২০১টি। তৃণমূল পেয়েছে ৮৮৬টি। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৭৭২টি ভোট। বাকি ওয়ার্ডগুলির কয়েকটিতে তৃতীয় স্থান পেলেও লোকসভায় ভোটের ফলের নিরিখে সিংহভাগ ওয়ার্ডেই তারা চতুর্থ স্থানে।

তবে লোকসভা নির্বাচনের ফলকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় কোনও দলই। তৃণমূলের দাবি, তাদের সামনে বিজেপি বা বামফ্রন্ট কোনও বাধাই নয়। উন্নয়নের নিরিখে স্বতস্ফূর্তভাবেই তাঁরা মানুষের সমর্থন পাবেন। অন্যদিকে, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের দাবি তৃণমূলকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন তাঁরা। অন্যদিকে আসন্ন পুরভোটে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার আশায় কংগ্রেসও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE