Advertisement
E-Paper

স্বামীর রিকশায় প্রচারে নেমেছেন সিপিএমের রিঙ্কু

স্বামী রিকশা চালাচ্ছেন। স্ত্রী সেই রিকশায় চড়ে ভোট চাইছেন। পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে স্বামীর রিকশাকেই বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু মাল। চুঁচুড়ার রথতলা রামকৃষ্ণ লেনের বাসিন্দা রিঙ্কুদেবীর রাজনৈতিক জীবন অনেক দিনের। কিন্তু প্রার্থী হলেন এই প্রথম। স্বামী অনিমেশ মাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তাতে সংসারের অভাব মেটে না।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩০
রিকশায় প্রচারে সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু মাল। —নিজস্ব চিত্র।

রিকশায় প্রচারে সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু মাল। —নিজস্ব চিত্র।

স্বামী রিকশা চালাচ্ছেন।

স্ত্রী সেই রিকশায় চড়ে ভোট চাইছেন।

পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে স্বামীর রিকশাকেই বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু মাল।

চুঁচুড়ার রথতলা রামকৃষ্ণ লেনের বাসিন্দা রিঙ্কুদেবীর রাজনৈতিক জীবন অনেক দিনের। কিন্তু প্রার্থী হলেন এই প্রথম। স্বামী অনিমেশ মাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তাতে সংসারের অভাব মেটে না। তবু, নিজের অভাবকে বড় করে দেখতে চান না রিঙ্কুদেবী। চান গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাই তাঁর ভোটের ময়দানে নামা।

রিঙ্কুদেবীর কথায়, ‘‘মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যদি তাঁদের জন্য কিছু করতে পারি, তবেই মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যাবে, জীবনে কিছু করেছি। শুধু নিজের পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাড় করে দিন কাটানো যায় না।’’

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। রামকৃষ্ণ লেনের রাস্তার ধারে একচিলতে ঘরে দুই ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে রিঙ্কুরদেবীর ছোট্ট সংসার। সংসারের অভাব মেটাতে তিনি নিজেও সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন আগেই। সেই কাজের ফাঁকেই নজর দেন দুই ছেলের পড়াশোনায়। রিঙ্কুদেবীর বড় ছেলে মহসিন কলেজে হিসাব-শাস্ত্র নিয়ে পড়ছেন। ছোট ছেলে স্থানীয় স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। সংসারের নানা কাজের ফাঁকে রিঙ্কুদেবী দলের কাজও করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

এর আগে দলের সদস্যা হিসাবে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে তো বটেই, অন্য প্রার্থীর হয়ে ভোটও চেয়েছেন। নিজের জন্য পুরবাসীর দরজায় দরজায় ভোট চেয়ে আবেদন এটা প্রথম। সকাল হতেই সংসারের প্রাথমিক কাজটুকু শেষ করে স্বামীর রিকশায় দলীয় পতাকা লাগিয়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। এলাকায় এলাকায় ঘুরে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনছেন। সকালে কয়েক ঘণ্টা প্রচারের পরে বাড়ি ফেরা। তার পরে ফের সংসার। দুপুরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা। তার একই ভাবে ফের প্রচারে পথে।

স্ত্রীর প্রচারের জন্য রিকশা নিয়ে বেরোনোর জন্য আয় কিছুটা কমেছে অনিমেষবাবুর। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। অনিমেষবাবুর কথায়, ‘‘স্ত্রী যদি ভোটে জিতে প্রকৃত গরিব মানুষের দুঃখ মোচন করতে পারে, তা হলে সেটা অনেক মহৎ কাজ। প্রকৃত জনসেবা।’’

স্বামীকে এ ভাবে পাশে পেয়ে যাওয়ায় রিঙ্কুদেবীর প্রচার অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ইচ্ছা এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে অন্ধকার থেকে বাইরে বের করব। যদি ভোটে জিতি তা হলে প্রথমেই পরিবেশ দূষণ রোধ করব। নারী শিক্ষার অগ্রগতির চেষ্টা করব। অবহেলিত নারীরা যাতে স্বনির্ভর হতে পারেন, সে দিকে নজর দেব।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘নিজে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে থেকেও সাধারণ মানুষের জন্য রিঙ্কু যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, সেই উদাহরণ আজকাল বড় একটা দেখা যায় না। তাই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।’’

রিঙ্কুদেবীর এ ভাবে প্রচার নজর কেড়েছে এলাকার বাসিন্দাদেরও। তাঁদেরই এক জন নির্মল ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটার মধ্যে যে কাজের একাগ্রতা রয়েছে, তার প্রমাণ ও নিজেই।’’ একই কথা বলছেন আরও অনেকে।

cpm candidate rinku rickshaw campaign chuchura chuchu municipality election 2015 chuchura 14 no ward
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy