Advertisement
E-Paper

জমি দিতে রাজি চাষিরা মিটতে চলেছে বকপোতা সেতুর সমস্যা

হাওড়া ও হুগলির মধ্যে সংযোগকারী বকপোতা সেতু তৈরি করতে জমি সমস্যা মিটতে চলেছে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মধ্যে দামোদরের উপরে সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই জীর্ণ। সেতুর দু’টি স্ল্যাবের মাঝখানে ফাটল ধরায় প্রায় এক বছর ধরে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ। সেতু এতটাই বেহাল যে, কয়েক বছর আগেই সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়, সেটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না করে পাশেই নতুন একটি সেতু তৈরি করা হবে।

প্রকাশ পাল ও মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬
পুরনো সেতু। ইনসেটে বিপজ্জনক জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি।

পুরনো সেতু। ইনসেটে বিপজ্জনক জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি।

হাওড়া ও হুগলির মধ্যে সংযোগকারী বকপোতা সেতু তৈরি করতে জমি সমস্যা মিটতে চলেছে।

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মধ্যে দামোদরের উপরে সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই জীর্ণ। সেতুর দু’টি স্ল্যাবের মাঝখানে ফাটল ধরায় প্রায় এক বছর ধরে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ। সেতু এতটাই বেহাল যে, কয়েক বছর আগেই সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়, সেটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না করে পাশেই নতুন একটি সেতু তৈরি করা হবে। কিন্তু দু’পারেই সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য চাষিরা জমি দিতে বেঁকে বসায় সমস্যা তৈরি হয়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে হাওড়ার দিকে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা মিটে যায়। ওই প্রান্তে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে ফেলেছে প্রশাসন। চাষিরা জমির দাম বাবদ চেক-ও নিয়েছেন। কিন্তু হুগলির দিকে জাঙ্গিপাড়ার চাষিরা জমি দিতে রাজি না হওয়ায় সমস্যা মিটছিল না।

দিন কয়েক আগে হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল জাঙ্গিপাড়ার রশিদপুর পঞ্চায়েতে এসে চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুক্তা আর্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান-সহ অন্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে ৬৭ জন চাষি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সেতুর জন্য জমি বিক্রি করতে সম্মত হন। লিখিত ভাবে সে কথা তাঁরা জানিয়েও দেন। সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য হুগলির দিকে ৪ একরের কিছু বেশি জমি প্রয়োজন। জেলাশাসক বলেন, “বৈঠকে যত জন চাষি ছিলেন, প্রত্যেকেই জমি দিতে সম্মত হয়েছেন। সরকার ওঁদের থেকে সরাসরি জমি কিনে নেবে। ওখানে সেতু তৈরিতে আর কোনও সমস্যা নেই।”

সেতুর মাঝ বরাবর ফাটল।

বেহাল ওই সেতুতে দু’টি স্ল্যাবের মাঝে ফাটল ধরায় গত বছরের জুন মাস থেকে যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় রাজ্যের পূর্ত (সড়ক) দফতর। কোনও গাড়ি যাতে সেতুতে উঠতে না পারে, সে জন্য সেতুতে ওঠার মুখে পাঁচিল দিয়ে দেওয়া হয়। যান চলাচল নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। ফলে দুই জেলার মানুষই বিপাকে পড়েন। জাঙ্গিপাড়া ব্লক থেকে বহু মানুষ উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসেন। চাষিরা সব্জি নিয়ে উদয়নারায়ণপুর বাজারে আসেন। আবার হাওড়া থেকে অনেকে জাঙ্গিপাড়ার নার্সিংহোমে যান। স্কুল পড়ুয়াদেরও সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তারকেশ্বর-হাওড়া, রামপুর-হাওড়া ভায়া বোড়হল এবং জগত্‌বল্লভপুর, উদয়নারায়ণপুর-হরিপাল প্রভৃতি রুটের বাস এই সেতুর উপর দিয়ে চলত। সেতু বন্ধ হওয়ায় কাটা সার্ভিস করে বাস, অটো চলছে। তাতে এক দিকে যেমন সময় লাগছে অনেক বেশি, তেমনি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি।

রশিদপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান স্বপন পাত্র বলেন, “সেতুর এক পাড়ে নেমে হেঁটে অন্য পাড়ে গিয়ে গাড়ি ধরতে হচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে এ পারের রোগীদের উদয়নারায়ণপুরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে। জাঙ্গিপাড়ার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের মানুষ ওই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। জমির সমস্যা মেটায় এ বার নিশ্চয়ই সেতুর কাজ দ্রুত শুরু হবে।” পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার অনিল সিংহ বলেন, “জমি হাতে পেলেই দ্রুত সেতু তৈরির কাজ শুরু করা হবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, সেতুটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। ২০০৮ সালে তত্‌কালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী নতুন সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি নতুন সেতুর নকশা ও খরচ চূড়ান্ত করে পূর্ত (সড়ক) দফতর। অর্থ দফতর ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। এর পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জমির মাঝখান দিয়ে সেতু তৈরির বিষয়ে আপত্তি তোলেন। মূলত তাঁদের আপত্তিতে পূর্ত দফতর সেতুর নকশা পরিবর্তন করে। খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকায়। অর্থ দফতর তা-ও অনুমোদন করে। কিন্তু তার পরেও চাষিদের সম্মতি না মেলায় কাজ শুরু করা যায়নি।

এ বার কত তাড়াতাড়ি জমি অধিগ্রহণ হয়, সে দিকেই তাকিয়ে গ্রামবাসীরা।

ছবি: দীপঙ্কর দে।

bokpota bridge land southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy