নিহত মোহন চৌধুরী। ছবি: তাপস ঘোষ।
দিনেদুপুরে দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার চন্দননগরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম মোহন চৌধুরী (২৫)। হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই আততায়ীরা ধরা পড়বে।’’
শোকার্ত দিদি। ছবি: তাপস ঘোষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চন্দননগরের লিচুপট্টি শিববাড়ি ঘাট এলাকার বাসিন্দা মোহন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। এর পাশাপাশি সন্ধের পর উর্দিবাজারে একটি চপের দোকানে কাজ করতেন। এদিন বেলা ২টো নাগাদ রাজমিস্ত্রির কাজ সেরে মধ্যাঞ্চলের কাছে স্টেশন রোড ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুই দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। সামনে থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায়। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দুটি গুলি শরীরে লাগায় মোহন ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। সরস্বতী পুজোর আগের দিন বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন আচমকা এমন ঘটনায় আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মোহন পড়ে থাকলেও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসেননি কেউ। উল্টে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মোহনকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই মারা যান তিনি।
আতঙ্কের দিনলিপি
• ১ সেপ্টেম্বর: চন্দননগরের মানকুণ্ডু মহাডাঙা কলোনিতে মায়ের সামনে এক আলোকশিল্পীকে কুপিয়ে খুন।
• ২৪ সেপ্টেম্বর: ব্যান্ডেলের এক নিখোঁজ যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার আমবাগানে।
• ২৩ অক্টোবর: চুঁচুড়ার লেনিন নগরে দুষ্কৃতীমূলক কাজের অভিযোগে জনতার মারে মৃত্যু হয় মা, ছেলের।
• ১০ নভেম্বর: চন্দননগরের বিবিরহাট উত্তরাঞ্চলে দুষ্কৃতীরা কুপিয়ে এক গাড়ি চালককে খুন করে। একই দিনে চুঁচুড়ার দক্ষিণ সিমলায় ধানখেতের পাশ থেকে চার জনের দেহ উদ্ধার হয়।
• ২৩ নভেম্বর: রাতে ব্যান্ডেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় গুলিতে যুবক খুন।
• ৩১ জানুয়ারি ২০১৭: চন্দননগরে গুলিতে খুন হলেন যুবক।
ভরদুপুরে এমন খুনের ঘটনা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে চন্দননগরবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এই শহরে ক্রমশ দুষ্কৃতী তাণ্ডব বাড়ছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন খুনের পিছনে পুরনো শত্রুতা রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অনুমান। পুলিশ সূত্রে খবর, এক বছর আগে পরিবারের বড় ছেলের স্ত্রী মালতীদেবী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার এবং আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ করে মালতীদেবীর বাপের বাড়ির লোকেরা। পুলিশ সেই সময় মোহনের দাদা জিতেন্দ্র, বাবা রঘুনাথ এবং মোহনকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর সম্প্রতি তিনজনেই জামিনে ছাড়া পান। জিতেন্দ্রর অভিযোগ, ‘‘তার পর থেকেই মালতীদেবীর ভাইয়েরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল। এমনকী আমাকে না পেলে ভাইকে মেরে দেবে বলেও শাসাচ্ছিল। তারই জেরে খুন হতে হয়েছে ভাইকে।’’ এ দিনই তিনি মালতীদেবীর ভাইদের বিরুদ্ধে মোহনকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
নিহতের মা সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘কেন ওকে খুন করা হল জানি না। তবে যারা মেরেছে তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy