Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বর্জ্য থেকে সার, আয় বাড়াচ্ছে পুরসভা

দ্বিতীয় বার রাজ্যের ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভাগুলিকে নিজেদের আয়ের উৎস খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই পথে হেঁটে হুগলির উত্তরপাড়া পুরসভা হাতে তুলে নিয়েছে শহরের বর্জ্যকে।

বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

দ্বিতীয় বার রাজ্যের ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভাগুলিকে নিজেদের আয়ের উৎস খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই পথে হেঁটে হুগলির উত্তরপাড়া পুরসভা হাতে তুলে নিয়েছে শহরের বর্জ্যকে।

ইতিমধ্যে পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার বানিয়ে তা বিক্রি করে আয় বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে ওই পুরসভা। তাদের স্লোগান, ‘ওয়েস্ট ইজ ওয়েলথ্’। অর্থাৎ, বর্জ্যই সম্পদ। পুরকর্মীরা সকাল হতেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। তার পরে সেই বর্জ্য চলে যাচ্ছে মাখলায় পুরসভার নিজস্ব কারখানায়। সেখানেই তৈরি হচ্ছে জৈব সার।

পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘পুর এলাকার বাসিন্দাদের বলা হচ্ছে, সব বর্জ্য পুরসভাকে দিন। আপাতত কিছুটা কম দামে জৈব সার বিক্রি করা হচ্ছে। তিনটি সংস্থা সেগুলি কিনে নিজেরা বিক্রি করছে। পরে পুরসভার নিজস্ব মোড়কেই তা বিক্রি করা হবে।’’

বাম আমলে জাপান সরকারের সহায়তায় হুগলির উত্তরপাড়া থেকে চাঁপদানি পর্যন্ত ছ’টি পুরসভার কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের প্রকল্প গড়ার কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি হচ্ছে বৈদ্যবাটির দীর্ঘাঙ্গিতে। একই সঙ্গে এই ছ’টি পুরসভা এলাকায় আলাদা আলাদা ভাবে পচনশীল বর্জ্য প্রতিস্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। রাজ্যে পালাবদলের পরে ছ’টি পুরসভার মধ্যে বৈদ্যবাটিতে প্রকল্পটি শুরু হয়েও থমকে রয়েছে। বাকি চারটিতে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি। বাজিমাত করেছে একমাত্র উত্তরপাড়া পুরসভা।

উত্তরপাড়া পুর কর্তৃপক্ষের তরফে সার তৈরির প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন রথীন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ড থেকেই বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে আগে থেকেই পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য রাখার আলাদা পাত্র দেওয়া হয়েছে। পচনশীল বর্জ্য কারখানায় আনার পরে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করে সার তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। সার তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় ৩৬ দিন সময় লাগে।

মাখলার ওই কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, জনা বাইশ যুবক কাজের নির্দিষ্ট পোশাক, মাস্ক পরে কাজ করছেন। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বর্জ্য থেকে কাচ, প্লাস্টিক এবং অন্য আবর্জনা বাছছে। বর্জ্যের যে অংশ সার তৈরির কাজে লাগবে, তা আলাদা করা হচ্ছে। এক পাশে গাঢ় কফি রঙের জৈব সার। রথীনবাবু বলেন, ‘‘এই সারকে যন্ত্রের সাহা়য্যে আরও গুঁড়ো করে কৃষিজমিতে ব্যবহারের উপযোগী করে তবেই বাজারে ছাড়া হয়। এই সার ব্যবহারের জন্য প্রকল্প এলাকায় আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করছি। সার প্রয়োগে চাষে ভাল ফল পাচ্ছি।’’

এই প্রকল্পের দৌলতেই আগামী ২৮ নভেম্বর মেক্সিকো রওনা হচ্ছেন পুরপ্রধান দিলীপবাবু। তাঁর সঙ্গী হচ্ছেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি ওঙ্কারসিংহ মিনা। সেখানে বিশ্বের ৪০টি শহরের মেয়রদের নিয়ে গড়া কমিটির উদ্যোগে পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে আগামী মাসের প্রথম তিন দিন। সেই আলোচনাতেই সামিল হবেন দিলীপবাবুরা। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা সার তৈরির প্রকল্পটি সফল ভাবে রূপায়ণের জন্য মেক্সিকোয় ভারতে হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছি। কী ভাবে প্রথম থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে গেলাম, তা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সামনে বুঝিয়ে বলব। প্রকল্পের জন্য আমাদের পুরস্কারও দেওয়া হবে।’’

বর্জ্যই যে পুরসভাকে পথ দেখাল, সে কথাই এখন শহরে সকলের মুখে ফিরছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fertilizer Garbage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE