Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ফিভার ক্লিনিকে রোগীদের ভিড়

ন’টাও বাজেনি। ততক্ষণে লোক জমে গিয়েছি‌ল শ্রীরামপুর শহরের রায়ঘাট লাগোয়া কমিউনিটি সেন্টারে। প্রশাসনের ঘোষণা মতো খোলা হয়েছে ‘ফিভার ক্লিনিক’। ডাক্তার বসেছেন।

চলছে চিকিৎসা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

চলছে চিকিৎসা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

ন’টাও বাজেনি। ততক্ষণে লোক জমে গিয়েছি‌ল শ্রীরামপুর শহরের রায়ঘাট লাগোয়া কমিউনিটি সেন্টারে। প্রশাসনের ঘোষণা মতো খোলা হয়েছে ‘ফিভার ক্লিনিক’। ডাক্তার বসেছেন। এসেছেন রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য টেকনিশিয়ান। কারও তিন দিন ধরে জ্বর। সঙ্গে শরীরে ব্যথা। কারও বমিভাব, খাবারে অরুচি। কারও বুকে জমেছে সর্দি।

তিন সপ্তাহ ধরে শ্রীরামপুরে ওয়ার্ডে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেকের শরীরে মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু। হাসপাতালে বা চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। রবিবার হুগলির এই পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুর ওয়াল‌শ হাসপাতালে এসে বৈঠক করেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। শহরের তিনটি জায়গায় ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো এ দিন থেকে রায়ঘাট সংলগ্ন ওই কমিউনিটি হলে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ক্লিনিক চালু
করা হয়।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা আট বছরের শেখ মিনহাজ পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। বাড়ির লোকেরা জানালেন, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু জ্বর কমছে না। সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা এবং বমির উপসর্গ। দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেটিকে দেখে চিকিৎসক ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন। ক্লিনিকেই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হল‌। মিনহাজের মামা শেখ আনারুল বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর। অনেকেরই ডেঙ্গি হয়েছে। আমি নিজেই পনেরো দিন কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি ছিলাম। এখন দেখা যাক, ভাগ্নের রক্তের রিপোর্ট কী আসে।’’ ১২ বছরের তানিয়া দেবনাথেরও রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল। ক্লিনিক থেকে নিখরচায় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। তেল, ঝাল, মশলা খেতে নিষেধ করা হল।

সময় যত গড়াচ্ছিল, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছিল। দু’ঘণ্টার মধ্যে জনা পঁচিশ রোগীকে দেখলেন চিকিৎসক। তদারকি করছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহ। সকাল দশটা নাগাদ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কালীপদ দাস নামে এক ব্যক্তি এসে জানালেন, তাঁর স্ত্রীর ডেঙ্গি হয়েছে। শনিবার তাঁকে শহরেরই একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৮ হাজার টাকার উপর বিল হয়েছে বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কালীপদবাবু বলেন, ‘‘হিন্দমোটরে চাকরি করতাম। এখন কাজ নেই। এত টাকা কী করে দেব! তার উপর ছেলেকেও একই কারণে ভর্তি করাতে হয়েছে রবিবার। সকালে খবরের কাগজ দেখে ক্লিনিকে এসেছি।’’ সন্তোষবাবুর সঙ্গে কথা বলে তিনি বললেন, ‘‘তা হলে স্ত্রী-ছেলেকে এখানে নিয়ে আসি। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাব।’’

বিকেলেও ২ ঘণ্টা চিকিৎসক বসেছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, সকাল-বিকেল মিলিয়ে ৬০ জনের চিকিৎসা করা হয়। ১৬ জনের রক্তের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। তবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাগানের ক্লিনিকে চিকিৎসক থাকলেও রোগীর দেখা মেলেনি। ৭, ৮, ৯, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। মহকুমাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘ফিভার ক্লিনিকে নিখরচায় চিকিৎসা বা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষাও নিখরচায় করানো হচ্ছে। ডেঙ্গি যাতে আর না ছড়ায়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রক্তের নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে চুঁচুড়ায়। চিকিৎসার সুবিধার্থে রিপোর্ট এক দিনের মধ্যে ই-মেলের মাধ্যমে পুরসভাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fever Serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE