Advertisement
E-Paper

পুলকারে আগুন, রক্ষা পেল পড়ুয়ারা, প্রশ্ন উঠল পুলিশের নজরদারি নিয়ে

ফের দুর্ঘটনায় পুলকার। কোনওরকমে রক্ষা পেল পড়ুয়ারা।শুক্রবার ব্যান্ডেলের মানসপুরে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি পুলকারে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে চালক সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। এলাকার লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পুলকারটি অনেকটাই পুড়ে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৪
ভস্মীভূত সেই গাড়ি। ছবি: তাপস ঘোষ।

ভস্মীভূত সেই গাড়ি। ছবি: তাপস ঘোষ।

ফের দুর্ঘটনায় পুলকার। কোনওরকমে রক্ষা পেল পড়ুয়ারা।

শুক্রবার ব্যান্ডেলের মানসপুরে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি পুলকারে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে চালক সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। এলাকার লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পুলকারটি অনেকটাই পুড়ে যায়। পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গাড়িতে আগুন লাগার খবরে ছুটোছুটি শুরু করে দেন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। শেষ পর্যন্ত সকলেই সুস্থ অবস্থায় স্কুলে পৌঁছেছেন জেনে নিশ্চিন্ত হন তাঁরা।

এই ঘটনায় একই সঙ্গে যেমন তাঁদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনই পুলকার নিয়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। গত কয়েক মাসে কলকাতা তো বটেই, মফস্সলেও একাধিক পুলকার দুর্ঘটনায় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলকার হিসাবে ব্যবহৃত বাস, ছোটগাড়ির উপরে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়। জোর দেওয়া হয় ওই সব গাড়ির স্বাস্থ্য, চালকের লাইসেন্স, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও। ইতিমধ্যেই কলকাতা শহরে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও জেলাগুলিতে যে নজরদারি এখনও বেশ আলগা, ব্যান্ডেলে এ দিনের ঘটনায় সেই অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা বাধ্য হয়েই ছেলেমেয়েদের পুলকারে স্কুলে পাঠান। কিন্তু সেই পুলকার বেআইনি কি না, তার ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না সে সব পুলিশ-প্রশাসনের দেখার দায়িত্ব। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে তাঁরা নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

যদিও পুলিশের বক্তব্য, এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতাও জরুরি। স্কুলের গাড়ি না হলে, ছেলেমেয়েদের যে গাড়িতে করে তাঁরা স্কুলে পাঠাচ্ছেন সেটার পুলকার হিসাবে চালানোর লাইসেন্স আছে কি না তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।’’

হুগলি জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সুজয় সাধু বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্কুলের সামনে আমরা ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কয়েকটি গাড়িও আটক করা হয়েছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কী ঘটেছিল এ দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিদিনের মতো এদিন সকালে ব্যান্ডেল কাজিডাঙার বাসিন্দা নিমাই পাল মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে বের হন। নিজের গাড়িই তিনি পুলকার হিসাবে ব্যবহার করতেন। ব্যক্তিগত গাড়ি পুলকার হিসাবে কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। মেয়েকে নিয়ে বেরোনোর পর আর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছয় ছাত্রীকে বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সপ্তম ছাত্রীটিকে তোলার জন্য মানসপুরে দাঁড়িয়েছিলেন নিমাইবাবু। ছাত্রীটিকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে গাড়িতে স্টার্ট দেন নিমাইবাবু। সেই সময়েই স্টিয়ারিংয়ের নীচে আগুনের ফুলকি বেরোতে থাকে। নিমাইবাবু সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে সমস্ত ছাত্রীদের নামিয়ে দেন। একটু পরেই পুরো গাড়িটায় আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা গঙ্গাপ্রসাদ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গাড়িটা সকালে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎই দেখি গাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ছাত্রীরা গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি নেমে পড়ে। গাড়ির চালক জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল। আমরাও হাত লাগাই। ছেলেমেয়েগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি এটাই অনেক।’’

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি সারোগীর কথায়, ‘‘গাড়িকাকু আমাকে নেওয়ার জন্য বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল। আমি গাড়ির কাছাকাছি আসতেই সহপাঠীরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করতে থাকে। গাড়িকাকুই পরে অন্য গাড়িতে করে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়।’’

গাড়িচালক নিমাই পাল জানান, ‘‘সকালে গাড়ির সবকিছু দেখে বাড়ি থেকে বের হই। শেষ মেয়েটাকে নিতে এসেই বিপত্তি ঘটল। আগুন বেরোতে দেখে সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিই। চোখের সামনে গাড়িটা পুড়ে গেল। যা অবস্থা তাতে টাকার জোগাড় করে গাড়ি সারিয়ে রাস্তায় আর বেরোতে পারব না। তবু সান্ত্বনা, বাচ্চাগুলোকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি।’’

pool car fire students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy