Advertisement
E-Paper

জলের স্রোতে বিপজ্জনক সড়ক

দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও জটিল হল দুই জেলাতেই। গ্রামাঞ্চল আগেই ভেসেছিল। শুক্রবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণে হুগলি এবং হাওড়া শহরাঞ্চলেরও নানা এলাকা জলমগ্ন হল। গোঘাটে জলের তোড়ে ভেসে গেলেন দু’জন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩১
আমতায় বন্যা পরিস্থিতি দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

আমতায় বন্যা পরিস্থিতি দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও জটিল হল দুই জেলাতেই।

গ্রামাঞ্চল আগেই ভেসেছিল। শুক্রবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণে হুগলি এবং হাওড়া শহরাঞ্চলেরও নানা এলাকা জলমগ্ন হল। গোঘাটে জলের তোড়ে ভেসে গেলেন দু’জন। হাওড়ার পাঁচলায় কাঁচাবড়ির দেওয়াল ধসে পড়ায় মৃত্যু হল এক মহিলার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বিকেলে হাওড়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আমতা এবং উদয়নারায়ণপুর পরিদর্শন করেন। কথা বলেন দুর্গতদের সঙ্গে। হুগলিতে আরামবাগ-সহ কয়েকটি প্লাবিত এলাকায় যান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।

দুর্যোগের জেরে শুক্রবার মাঝরাতে হাওড়ার দুর্ঘটনাটি ঘটে পাঁচলার সাহাপুরে। নিজের কাঁচাবাড়িতে চার সন্তানকে নিয়ে শুয়েছিলেন হালিমা বেগম (৪৩) নামে এক মহিলা। আচমকা মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়ে। দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান হালিমা। তাঁর স্বামীকে আহত অবস্থায় উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে, শিশুগুলির কিছু হয়নি। এ দিন রাতে হুগলির পান্ডুয়ার বেলুনধামসিন পঞ্চায়েতের জগন্নাথ পাড়া এলাকায় বাড়ির পাঁচিল ধসে মারা যান এক শিশু। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বৃষ্টি মালিক (৫)।

অন্য দিকে, দুর্যোগের শুরু থেকে হুগলির খানাকুল, পুড়শুড়া এবং আরামবাগ প্লাবিত হলেও কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন গোঘাটের দু’টি ব্লকের বাসিন্দারা। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে গোঘাটের দু’টি ব্লকও জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শনিবার দুপুরে পিসির ছেলের সঙ্গে সাইকেল নিয়ে প্লাবিত এলাকা দেখতে বেরিয়েছিল কামারপুকুর সংলগ্ন মুকুন্দপুরের নবম শ্রেণির ছাত্র প্রদীপ নন্দী। জলের তোড়ে কামারপুকুর এবং জয়রামবাটি সীমানায় হলদি খালে সে তলিয়ে যায়। একই ভাবে কামারপুকুরের মুল্লুকের বাসিন্দা, মধ্য চল্লিশের কাজল ঘোষ একটি খাল পেরোতে গিয়ে ভেসে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’জনেরই খোঁজ মেলেনি। কলকাতা থেকে ডুবুরি আনা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।


হুগলির খানাকুলে নৌকা করে বন্যা পরিস্থিতি দেখলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এ দিন হুগলির আরামবাগ, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ কয়েকটি জায়গা পরিদর্শনের পরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আরামবাগ মহকুমা রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। সব জায়গাতেই রাস্তা ভেঙেছে। নদীর জল ঢুকেছে। সার্বিক ভাবে নির্মাণের কাজ করতে হবে। আমরা ক্যাম্প চালু করেছি। ত্রাণ আরও বাড়াতে হবে। জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে বলেছি। রামকৃষ্ণ মিশনও সহযোগিতা করছে।’’ হুগলিতে তারকেশ্বর, হরিপালে ডাকাতিয়া খালের একাংশ সংস্কার হলেও ঠারেঠোরে ফিরহাদ স্বীকার করেছেন হাওড়ার দিকের ওই খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না আমতা-সহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়।

সকালে গোঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নকুন্ডা, শ্যাওড়া, বালি, গোঘাট, কুলিয়া, দেওয়ান চক, কোটা, বাবুরামপুর, শ্যামপুর, মুল্লুক প্রভৃতি গ্রাম জলমগ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু মাটির বাড়ি। চাষের জমি অন্তত পাঁচ ফুট জলের নীচে। এক দিকে, কংসাবতীর ছাড়া জল এবং অবিরাম বৃষ্টি, অন্যদিকে নীচের রূপনারায়ণ নদী এবং ঘাটালের শীলাবতী নদীর জলের চাপ-এই সাঁড়াশি আক্রমণেই এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কুলিয়া গ্রামের দীনবন্ধু মণ্ডল, নকুণ্ডার বিভাস কুণ্ডু বা গোয়ালপোতা গ্রামের মিরাজ খানদের বক্তব্য, ‘‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে তবেই এখানকার সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।’’


জল জমেছে চাষের খেতে। পান্ডুয়ায়।

দুপুরে সিঙ্গুরের মহিষটিকরি এলাকায় একটি নদীবাঁধের কাজ পরিদর্শন করে পুরমন্ত্রী হরিপাল ব্লক অফিসে এসে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমান-সহ ব্লক এবং মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেখান থেকে স্থানীয় হরিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে খোঁজখবর নেন। মন্ত্রী যান তারকেশ্বর এবং পুড়শুড়াতেও। কিন্তু কোথাও দাঁড়াননি। ফলে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি দুর্গতেরা। পরে নৌকায় চেপে পৌঁছন খানাকুল-২ ব্লক এলাকার রাজহাটি-১ পঞ্চায়েতে। কুশলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রীকে দেখতে আসা কয়েকজন ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে।

তারকেশ্বরের লোকনাথে আশালতা বিশ্বাস নামে এক মহিলার অভিযোগ, ‘‘বাড়ির উঠোনে কোমরসমান জল। ছেলে এবং স্বামী অসুস্থ। বাড়িতে যা আছে দু’দিন রান্না হবে। তারপর কী হবে জানি না। কোনও ত্রাণ পাচ্ছি না।’’ একই রকম অভিযোগ শোনা গিয়েছে পুড়শুড়াতেও। মন্ত্রীর গাড়ি ঢোকার সময় ব্লক অফিসের সামনে জটলা থেকে ত্রাণের দাবি উঠছিল। শম্ভুনাথ সাউ নামে একজন চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘‘ছ’দিন ধরে জলের তলায় আছি। কেউ খোঁজ নেয়নি। চাল-ডাল তো দূরের কথা, একটি ত্রিপল পর্যন্ত পাচ্ছি না।’’

ত্রাণ নিয়ে এ দিনও জেলার অন্য প্রান্তের দুর্গতদেরও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। পাশাপাশি এ বার বৃষ্টির সঙ্গে ষাঁড়াষাঁড়ি বানে উত্তরপাড়া, কোন্নগর, হিন্দমোটর-সহ গঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় অনেক বাড়িতে জল ঢুকে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন বহু মানুষ। উত্তরপাড়ায় প্লাবিত এলাকায় যান পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। তাঁর দাবি, বাম আমলে অপরিকল্পিত ভাবে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ হওয়ার কারণেই জল জমছে এলাকায়। অবস্থা সামাল দিতে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তও এ দিন জেলার বিভিন্ন জায়গার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।

অন্য দিকে, পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি হাওড়াতেও। ডোমজুড় ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে মোট ৩৭টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে বলে জানান বিডিও তমোঘ্ন কর। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার গ্রামবাসীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বাঁকড়া-৩, সলপ-১ ও ২, উত্তর ঝাঁপড়দহ, মাকড়দহ-২ সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত জলমগ্ন হয়েছে। হাওড়া-আমতা রোডের পাশে একটি স্কুলে প্রায় একহাঁটু জল ছিল এ দিন সকালে। সাঁকরাইলে তিনটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানকার মানিকপুর এবং নলপুরে কয়েকটি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি-১ পঞ্চায়েতের চাঁদনিবাগান, খটির সর্দারপাড়া ও রথতলার একাংশ পুরোপুরি জলমগ্ন হয়েছে। ওই এলাকার প্রায় ২৫০ জন বাসিন্দাকে তিনটি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। এ দিন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের নেতৃত্বে জেলায় বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে বেলা ৩টেয় বৈঠক শুরু হয় আমতা-১ ব্লক অফিসে। বৈঠক চলাকালীনই খবর আসে মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। বৈঠক সংক্ষিপ্ত করা হয়।

ছবি: সুব্রত জানা ও দীপঙ্কর দে।

Hooghly Howrah Flood kamarpuk south bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy