রাজ্যের মতোই হুগলি জেলা এখন বিরোধী শূন্য। কিন্তু বিরোধী দল না থাকলেও দলের অন্দরের বিরোধ মেটাতেই জেরবার হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
জেলার সর্বত্রই দলে কমবেশি অন্তর্বিরোধ থাকলেও দু’টি পঞ্চায়েত ও একটি পুরসভায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামানোই এখন চ্যালেঞ্জ শাসক দলের কাছে। তারকেশ্বর পুরসভার পাশাপাশি ধনেখালির গোপীনগর এবং কোন্নগরের কানাইপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর আকচা-আকচি চরমে।
যদিও বরাবরের মতোই দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ওই দুই পঞ্চায়েত ও পুরসভায় কিছু সমস্যা হয়েছিল এটা ঠিক। কিন্তু সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি।’’ তবে এটা যে নেহাতই দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে আ়ড়ালের চেষ্টা তা এক নেতার কথাতেই স্পষ্ট। জেলার ওই নেতার কথায়, ‘‘সব ক্ষেত্রেই বিরোধ ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিবাদের আগুন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধিকি ধিকি জ্বলছে। যতদিন তা বাইরে না আসে দলের পক্ষেই মঙ্গল।’’
তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানের মধ্যে বিবাদ নতুন নয়। যার শুরু পুর নির্বাচনে দলের টিকিট বিলি নিয়ে। সম্প্রতি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে এক তরফা কাজের অভিযোগ তুলে পুরসভার আট কাউন্সিলর সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন। তখনই বিদ্রোহীরা দাবি করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যানও রয়েছেন। দাবি যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণ, পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে হাজিরই হননি ভাইস-চেয়ারম্যান। বিষয়টি পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কানে যায়। বিবদমান দু’পক্ষই দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন। এর জেরে পুর পরিষেবা লাটে উঠেছে বলে পুরবাসীর তরফে অভিযোগ এলেও তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কোনও পক্ষই। এমনকী জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপের পরেও ছেদ পড়েনি বিবাদে। যেমন বিদ্রোহী এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘দলের নেতারা কী করবেন? আমাদের দু’পক্ষকে ডেকে বলবেন আর বিবাদ নয়। সব মানিয়ে চলতে হবে। কিন্তু এই সমাধান আমরা চাইছি না।’’ তিনি আরও জানান, তিন মাস সব ঠিক থাকবে। ফের কোনও ইস্যুতে বিবাদ শুরু হবে। তাঁর দাবি, দল যদি সত্যিই বিবাদ মেটাতে চায়, তাহলে রিষড়া পুরসভার মতো তৃতীয় কাউকে পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
ধনেখালির গোপীনগর পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধান, উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে রয়েছেন ছয় সদস্য। পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে এনে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা এনেছেন তাঁরা। প্রথমবার নিয়মের বেড়াজালে তা কার্যকর না হওয়ায় ফের তা আনা হয়েছে। দলের তরফে অনাস্থা তুলে নিতে বলা হলেও বিরোধীরা অনড়। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিধায়ক, মন্ত্রী অসীমা পাত্র, জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বৈঠকে বসেছেন। একই সমস্যা চলছে কানাইপুর পঞ্চায়েতেও। সেখানে আবার প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে উপপ্রধানের দলবল।
জেলায় দলের মধ্যেই এমন অশান্তি বার বারই বিপাকে ফেলছে শাসকদলকে। মুখ বাঁচাতে জেলা নেতৃত্ব ‘সব সমস্যা মিটে গিয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেও তা যে আদতে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ বিভিন্ন ঘটনাতেই তা পরিষ্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy