Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্টেশন না বাজার বোঝাই দুষ্কর

জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে? কুছ পরোয়া নেই। স্টেশনে ট্রেন থেকে নামলেই মুশকিল আসান। দরকারে নতু‌ন জুতোও মিলে যাবে। ফলের দোকান থেকে লক্ষ্মী ঠাকুরের পাঁচালি সবই হাজির।

যাত্রী নয়, স্টেশন জুড়ে দাপট হকারদের। ছবি: দীপঙ্কর দে।

যাত্রী নয়, স্টেশন জুড়ে দাপট হকারদের। ছবি: দীপঙ্কর দে।

প্রকাশ পাল
হরিপাল শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে? কুছ পরোয়া নেই। স্টেশনে ট্রেন থেকে নামলেই মুশকিল আসান। দরকারে নতু‌ন জুতোও মিলে যাবে। ফলের দোকান থেকে লক্ষ্মী ঠাকুরের পাঁচালি সবই হাজির। হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথে হরিপাল স্টেশন আপনার জন্য সমস্ত উপকরণই নিয়ে হাজির। শুধু হরিপাল কেন, এই শাখার অন্যান্য স্টেশনেও দেখতে পাওয়া যাবে একই ছবি।

হরিপাল সড়ক সংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই স্টেশন হয়ে সড়ক পথে জাঙ্গিপাড়া, দশঘড়া, ধনেখালি, ভাণ্ডারহাটি-সহ নানা জায়গায় যাতায়াত করেন অটো, বাস বা ট্রেকারে চেপে। ট্রেন থেকে নেমে বহু মানুষ হাওড়া জেলার বড়গাছিয়া বা উদয়নারায়ণপুরে যান বাসে চেপে। ফলে যাত্রীদের ভিড়ে সব সময়েই উপচে পড়ে এই স্টেশন। কিন্তু যাত্রীদের জন্য স্টেশনে যাত্রীদেরই স্থান সঙ্কুলানের উপায় নেই। সৌজন্যে রেলের জায়গা জুড়ে পরিকল্পনাহীন ভাবে বসে যাওয়া হকারদের মৌরসিপাট্টা। প্রতিদিন যার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ট্রেনে চড়েন যাত্রীরা।

প্ল্যটফর্মের ধার ঘেঁসে একের পর এক দোকান। স্টেশনের পাশেই বাস-অটো-ট্রেকার দাঁড়ানোর জায়গা। ফলে সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে যাত্রীবোঝাই বাস-ট্রেকার ঢুকলে স্টেশন চত্বরে পা ফেলতে পারাটা একপ্রকার যন্ত্রণার সামিল। সেই যন্ত্রণা সামলে ট্রেনে উঠতে পারাটা বলতে গেলে লটারি পাওয়ার সামিল। নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, প্ল্যাটফর্মের ধারে পসরা সাজিয়ে বসে পড়া হকারদের অন্যত্র সরিয়ে দিলেই সমস্যা মিটে যেত। কিন্তু রেল তা করেনি। তারই সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন হকারের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে ক্রমশই সংকীর্ণ হয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। এতটাই যে ট্রেন ঢোকার সময় ভিড়ের চাপে যে কোনও সময় লাইনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তুলনায় বড় হলেও শেওড়াফুলি স্টেশনেও এই ছবির অন্যথা হয়নি। স্টেশনের বিশেষ করে ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম জুড়ে হকারদের দাপটে যাত্রীরা যেন কুঁকড়ে থাকেন। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায় তারকেশ্বরে শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে। অসংখ্য পূণ্যার্থী এই স্টেশনে নেমে নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে জ‌ল নিয়ে তারকেশ্বরে যান। সেই সময় প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে দোকানের আধিক্য হাঁটাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়।

পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বহু স্টেশনেই হকার সমস্যা বাড়ছে। হকার নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দক্ষি‌ণ ২৪ পরগনায় বারুইপুর স্টেশনে হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে প্রত্যাঘাত আসায় অন্য জায়গায় হকার নিয়ন্ত্রণে আঁটঘাট বেঁধেই এগোতে চাইছে তারা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান, যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে হকার-নিয়ন্ত্রণ করা হবে সব স্টেশনেই। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে।

রেল স্টেশনগুলি থেকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই বিস্তারিত আলোচনা করেই এই নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। হুগলি জেলা সিটু নেতৃত্বের দাবি, হকাররা প্ল্যাটফর্ম বা স্টেশন চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। এটাই তাঁদের রুজি-রুটি। তাই তাঁদের বিকল্প জায়গা এবং পরিচয়পত্র দেওয়া উচিত। আইএনটিটিইউসি জেলা নেতৃত্বের দাবি, হকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাঁরাও চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাঁদের জন্য বিকল্প জায়গার খোঁজও চলছে।

তবে যাত্রীদের প্রশ্ন, এত সবের পরেও স্টেশন হকারমুক্ত হবে কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hawker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE