প্রধান শিক্ষক রাজমোহন শীল (বাঁদিকে) ও শিক্ষক সুখলাল মাণ্ডি। ছবি: সুশান্ত সরকার।
নানা অনিয়ম নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অন্য শিক্ষক এবং গ্রামবাসীদের একাংশের বিরোধ ছিলই। সেই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটল পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের উত্তরখণ্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক রাজমোহন শীল সহ-শিক্ষক সুখলাল মাণ্ডিকে ছুরির কোপ বসিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এর জেরে প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করে জনতা। পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে। পরে হামলার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।
শিক্ষা দফতরের স্থানীয় সার্কেল ইনস্পেক্টর সৌমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
মিড-ডে-মিলের রান্নার মান খারাপ, এই অভিযোগে গত ৩ জুলাই প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেছিলেন গ্রামবাসী। তাঁর বদলির দাবি ওঠে। তার আগে তিনি যেন রোজ বিদ্যালয়ে না আসেন, সেই দাবিও জানানো হয়। ঘটনার পরে রাজমোহনবাবুকে শো-কজ করা হয় বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর। তখন থেকে রাজমোহনবাবু নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছিলেন না।
বিদ্যালয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রাজমোহনবাবু স্কুলে আসেন। সুখলাল মাণ্ডি নামে এক শিক্ষক একাই অফিস-ঘরে ছিলেন। বাকি দুই শিক্ষক আসেননি। ছাত্রছাত্রীরা হলঘরে বসে ছিল। অভিযোগ, রাজমোহনবাবু বাইরে থেকে সেই ঘরে শিকল তুলে দেন। তার পরে অফিস-ঘরে গিয়ে সুখলালবাবুকে জানান, তাঁর বদলির নির্দেশ এসেছে। সুখলালবাবু যেন বিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে ছাড়পত্র (রিলিজ অর্ডার) দিয়ে দেন। সুখলালবাবু তাঁকে জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেখালে তিনি তা করতে পারবেন না। এ নিয়ে দু’জনের বচসা বাধে। অভিযোগ, আচমকাই রাজমোহনবাবু ড্রয়ার থেকে ছুরি বের করে সুখলালবাবুকে আক্রমণ করেন। সুখলালবাবুর বাঁ হাতে ছুরির কোপ পড়ে। তাঁর চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন স্কুলে ঢুকে পড়েন। একদল গ্রামবাসী রাজমোহনবাবুকে মারধর করে। তাঁর ডান চোখের উপরে ফেটে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পুলিশ গিয়ে সুখলালবাবুকে পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের হাত থেকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বেগতিক বুঝে মগরা এবং পোলবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পুলিশ কোনওক্রমে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
সুখলালবাবু বলেন, ‘‘কাগজপত্র না দিলে কি ‘রিলিজ অর্ডার’ দেওয়া যায়! এ নিয়ে কথা বলায় প্রধান শিক্ষক আচমকা ছুরি বের করে আমার গলায় বসাতে যান। আটকাতে গেলে হাত কেটে যায়।’’ রাজমোহনবাবু এই অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই শিক্ষক নিজেই নিজের হাত কেটেছেন। আমি কিছু করিনি।’’
দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, গ্রামবাসীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। মোহন ঘোষ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘শুধু মিড-ডে-মিলই নয়, নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম করতেন প্রধান শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের স্কুলের পোশাক বৈঁচির একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনতে বাধ্য করতেন তিনি। ছেলেমেয়েদের ভাল করে পড়াতেন না পর্যন্ত।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য প্রভাত হেমব্রমের বক্তব্য, ‘‘কমিটির কোনও প্রস্তাবই উনি মানতেন না। নিজের ইচ্ছেমতো স্কুল চালাতেন।’’ মিড-ডে-মিলের কর্মী অসীমা ক্ষেত্রপালের দাবি, ‘‘হেডস্যার রান্নার জন্য সঠিক পরিমাণ সব্জি বা তেল-মশলা দিতেন না। আবার আমাদের বদনাম করতেন।’’
বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত জানান, ৩ জুলাইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে দফতরের অফিসার বিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়েছিলেন। সে দিন প্রধান শিক্ষক আসেননি। এ দিনের ঘটনাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy