Advertisement
E-Paper

বাড়ছে ডায়েরিয়া, কাঠগড়ায় স্বাস্থ্য দফতর

হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটছেন স্বাস্থ্যকর্মী। পিছনে যেন মিছিল। চার বছরের ছোট্ট সামসুর রহমান মল্লিককে কোলে নিয়ে মা সেবিরন বিবি মিছিলে সামিল। সামসুরের কব্জির গোড়ায় লাগানো স্যালাইনের সূচ। পিছনে মামণি প্রামাণিক। বছর তিরিশের বধূর শরীরেও লাগানো স্যালাইনের সূচ। স্বামীর হাত ধরে কোনওমতে দেহটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:২৪
বাগনান গ্রামীণ হাসপাতাল। ছবি: সুব্রত জানা।

বাগনান গ্রামীণ হাসপাতাল। ছবি: সুব্রত জানা।

হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটছেন স্বাস্থ্যকর্মী। পিছনে যেন মিছিল। চার বছরের ছোট্ট সামসুর রহমান মল্লিককে কোলে নিয়ে মা সেবিরন বিবি মিছিলে সামিল। সামসুরের কব্জির গোড়ায় লাগানো স্যালাইনের সূচ। পিছনে মামণি প্রামাণিক। বছর তিরিশের বধূর শরীরেও লাগানো স্যালাইনের সূচ। স্বামীর হাত ধরে কোনওমতে দেহটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ওয়ার্ডে দূরঅস্ত, হাসপাতালের বারান্দার মেঝেয় এক ফালি জায়গা পাওয়ার আশায় ওই স্বাস্থ্যকর্মীর পিছনে হাঁটছেন তাঁরা।

সামসুর ও মামণি ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। তাঁরা স্যালাইন পেয়েছেন। দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ। কিন্তু শয্যা নেই। মেঝেতেও ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই দশা। তিন সপ্তাহ ধরে এটাই রোজের ছবি বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে। একের পর এক ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসছেন। মেডিসন বিভাগে ঘর ও বারান্দা মিলিয়ে হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৬০টি। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে তা অপ্রতুল। কারণ রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। ফলে মেঝেতেই জায়গা হয়েছে অনেকের। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন সুপার।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, মাস খানেক ধরে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়ে গিয়েছে। বাগনান ও তার আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর রোগী আসছে। স্যালাইন এবং ওষুধের জোগানে কোনও ঘাটতি না থাকলেও শয্যা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি বছর বর্ষার আগে অনেকে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হন। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের হার গত তিন বছরে গড়ে আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এ বার ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ?

আক্রান্তদের অনেকেই জানালেন, খাওয়া-দাওয়ায় তেমন কিছু গোলমাল করেননি। সামসুরের বাবা শান্ত মল্লিক বলেন, ‘‘ছেলে রাতে স্বাভাবিক খাওয়াই খায়। অথচ পরদিনই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হল।’’ আর এক আক্রান্ত মামণি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরম। বাড়িতেই জল খেয়েছিলান। তার পর থেকেই শুরু হয় পায়খানা, বমি। আক্রান্ত আরও অনেকের কাছেই শোনা গেল একই কথা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, জলের কারণেই ডায়েরিয়া বাড়তে পারে। প্রচণ্ড গরমের জন্য পুকুরগুলি কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে। তাতে পড়ছে বর্জ্য। জলাভাবে সেই জলেই গ্রামের অনেকে বাসনপত্র ধুচ্ছেন। পাশাপাশি নলকূপগুলিও শোধন করা হচ্ছে না। আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন আগে থেকে সতর্ক হলে রোগের প্রকোপ বাড়ত না।

রোগের নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার বা জল শোধনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কী? নলকূপগুলির বিষয়েই বা কী ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পরিষদ?

স্থানীয় মানুষের অনেকেই জানালেন, রোগের প্রকোপ বাড়লেও স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এখনও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জেল‌া স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শুধু বাগনান নয়, জেলার প্রায় সর্বত্রই ডায়েরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ বেশি। ভাটোরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু না থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেখানে ১০ শয্যার অস্থায়ী অন্তর্বিভাগ চালু করা হয়েছে। জয়পুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন ২০ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। একই হাল শ্যামপুর, আমতা, উদয়নারায়ণপুর, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুরে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘এ বার পরিস্থিতি একটু জটিল। এত বেশি সংখ্যক ডায়েরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। আমরা স্বাস্থ্যভবনকে সব জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, প্রতিটি ব্লকে যথেষ্ট পরিমাণে হ্যালোজেন ট্যাবলেট মজুত রয়েছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে সে সব বিলি করার জন্য বিএমওএইচদের বলা হয়েছে। নলকূপ শোধন এবং পুকুরগুলি সংস্কারের ব্যাপারে তিন‌ি বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। তারা জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানাবে কোনও দূষণ আছে কিনা। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ বলেন, ‘‘গত বছর বন্যার পর সমস্ত নলকূপ শোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে নিয়মিত জল পরীক্ষাও করা হয়। এর পরেও কিছু করণীয় থাকলে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

Bagnan Rural Hospital diarrhea Health department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy