প্রতীকী ছবি।
সরস্বতী পুজোর আগের রাতে চোলাই ঠেকের প্রতিবাদ করে মার খেলেন এক যুবক। কোন্নগর স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা কিন্তু ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পুলিশের দিকে। তাঁদের দাবি, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার ফলেই হুগলি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে উঠেছে চোলাই ঠেক। রমরমা চলছে দেশি মদের। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য।
শুক্রবার রাতে কোন্নগর স্টেশনে চোলাইয় বিক্রির প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শিবা জানা। তখনই মদ্যপরা তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, শুধু মদ্যপরা নয়। শিবাকে মারধরের পিছনে রয়েছে চোলাই কারবারিরা।
ওই রাতের ঘটনার পরে স্থানীয় কাউন্সিলর তন্ময় দেব অবশ্য সক্রিয় হয়েছেন। ভাঙা হয়েছে মদের ঠেক। কিন্তু ক্ষোভ যায়নি বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, এ ভাবে মদ্যপদের তাণ্ডব ক্রমশ বাড়ছে এলাকায়।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশও মানছেন, হুগলি জেলায় গঙ্গাপাড়ের শহর বালি থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত দিনরাতের ছবিটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। এতদিন নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষকেই দেখা যেত চোলাই বা দেশি মদের ঠেকে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এখন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, রোজগেরে যুবকেরাও জড়ো হচ্ছেন সে সব জায়গায়। তার থেকেও বড় আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, চোলাই, দেশি মদ এখন আর ঠেকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সন্ধে নামলেই ক্লাবঘরে জমে উঠছে মদের আসর। গঙ্গার ঘাট, ছোট ছোট চায়ের গুমটির পিছনে অথব এলাকার কোনও নির্মীয়মাণ বহুতলে বা পরিত্যক্ত বাড়ির বারান্দায় বসে যায় গোল গোল আড্ডা। সঙ্গে বোতল কিম্বা পাউচ।
আপাত শান্ত চেনা পাড়ায় গত কয়েক বছর ধরে ‘হুল্লোড়’ বেড়েছে অনেকটাই, দাবি করেছেন উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী ক্যাম্প লাগোয়া এলাকার এক শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার চেনা ছেলে, তবু ভয়ে কিছু বলতে পারি না। কাউন্সিলরকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তিনিও ওদের ঘাঁটাতে ভরসা পান না। ভোট বড় বালাই।’’
উত্তরপাড়া কোতরং এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারি বলেন, ‘‘চেনা পাড়াটা তো বদলে গিয়েছে। পরিচিত পরিবারগুলো বাড়ি বিক্রি করে চলে গিয়েছেন। সেখানে এখন বহুতল। কে থাকেন, কারা আসেন— কিছুই জানি না।’’ আর এক প্রবীণের দাবি, ‘‘আগে পাড়ায় কোনও কিছুর প্রতিবাদ করলে আরও পাঁচজন পাশে থাকতেন। এখন আর কেউ আসেন না। উল্টে বলে যান, কী দরকার কথা বাড়িয়ে!’’
উত্তরপাড়া, কোন্নগর ছাড়িয়ে জেলা সদর চুঁচুড়া কি শ্রীরামপুর, চন্দননগরেরও একই অবস্থা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, চুঁচুড়া ইমামবাড়া, ওয়ালশ বা চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই জমে ওঠে মদের আড্ডা। পুলিশ উদাসীন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ প্রথমে লিখিত অভিযোগ করতে বলে। অভিযোগ করলে শুরু হয় অভিযুক্তের রাজনৈতিক রং বিচার। তারপর অভিযোগকারীকেই বার বার থানায় ডেকে পাঠানো হয় তদন্তের স্বার্থে। এতে বিরক্ত হন সাধারণ মানুষ। ফলে অনেকেই লিখিত অভিযোগ করতে চান না।
উত্তরপাড়া কোতরঙের এক তরুণী বলেন, ‘‘২০১৩ সালে একবার শ্লীলতাহানি করা হয়েছিল আমার, ভর সন্ধেবেলা একেবারে পাড়ার গলিতে। পুলিশ কাউকেই ধরতে পারেনি। উল্টে আমাকেই বারবার ছুটতে হয়েছে আদালতে।’’
পুলিশও অবশ্য অনেক সময় অসহায়। নিচুতলার অনেক পুলিশ কর্মীই দাবি করেছেন, তাঁরা কড়া হলেও স্থানীয় নেতারা ময়দানে নেমে ছাড়িয়ে নেন অভিযুক্তকে। কিছুদিন আগে ভদ্রকালী ক্যাম্পে একটি ক্লাবে ওই রকম মদের আসর থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর সারারাত ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়েছিল পুলিশকেই। বলাগড়ের সবুজদ্বীপে আবার মহিলাদের হেনস্থার প্রতিবাদ করায় মার খেতে হয়েছিল কর্তব্যরত সিভিক ভলেনটিয়ারদের।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ মদ্যপদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আদালতে পাঠায়। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু জামিনযোগ্য, তাই ছাড়া পেয়ে ফের ওঁরা একই কাজ করেন।’’
উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব অবশ্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে কড়া হতে হবে। রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁদের সবাই এইসবে প্রশয় দেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy