Advertisement
E-Paper

কোথায় কেপিএস, হন্যে হয়ে খুঁজছে চাষি

গ্রামে গ্রামে চাষের উন্নতি সাধনের জন্য তাঁদের অনেক দায়িত্ব। চাষিদের আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি সম্পর্কে বোঝানো, রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া, নতুন ধরনের চাষ হাতে-কলমে দেখানো ইত্যাদি । কিন্তু সে সব করবে কে? এ কাজের দায়িত্ব যাঁদের, রাজ্যের অন্যতম শস্য উৎপাদক জেলা হুগলিতে সেই কৃষি-প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস)-দের সংখ্যা যে নামমাত্র।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০২:১০

গ্রামে গ্রামে চাষের উন্নতি সাধনের জন্য তাঁদের অনেক দায়িত্ব। চাষিদের আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি সম্পর্কে বোঝানো, রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া, নতুন ধরনের চাষ হাতে-কলমে দেখানো ইত্যাদি । কিন্তু সে সব করবে কে? এ কাজের দায়িত্ব যাঁদের, রাজ্যের অন্যতম শস্য উৎপাদক জেলা হুগলিতে সেই কৃষি-প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস)-দের সংখ্যা যে নামমাত্র। ফলে, এক দিকে যেমন তাঁদের সঙ্গে কৃষি দফতরের যোগাযোগ ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে, তেমনই তাঁরা প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। কেপিএসের অভাবে অনেক নতুন প্রকল্প সুষ্ঠু ভাবে রূপায়িত হচ্ছে না বলে মহকুমা এবং ব্লক কৃষি আধিকারিকদেরও খেদ রয়েছে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম কেপিএসরাই। পঞ্চায়েতপিছু একজন করে কেপিএস থাকার কথা। কিন্তু জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতের জন্য ওই পদে কর্মী আছেন মাত্র ৫৮ জন। তাঁদের মধ্যে আবার জনা ১৫ কর্মীকে ব্লক এবং মহকুমা কৃষি দফতরের কাজে তুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলার এক একজন কেপিএসকে ৩-৪ টি পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেপিএসদের অভিযোগ, তাঁদের পক্ষে কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা কঠিন হয়ে উঠছে।

কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল?

দীর্ঘদিন ওই পদে নিয়োগ না হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি বলে মেনে নিয়েছেন জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। একই সঙ্গে তাঁরা স্বীকার করেছেন, কেপিএস না থাকলে সরকারি সমস্ত নীতিই খাতায়-কলমে থেকে যাবে। জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘শীঘ্রই ২০ জনের মতো কেপিএস পদে নিয়োগ হবেন। তাঁদের প্রশিক্ষণও চলছে। কিন্তু তার পরেও যে ঘাটতি থাকবে, সে বিষয়ে রাজ্য কৃষি দফতরকে জানানো হয়েছে।’’

কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার উদ্দেশে কৃষি দফতরের উদ্যোগে কেপিএস পদটির সৃষ্টি হয় ১৯৮১ সালে। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ চাষি পরিবারপিছু এক জন কেপিএস নিয়োগ হবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। সঙ্কট কাটাতে জেলা কৃষি দফতর ১৯৮৮ সাল নাগাদ সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতি পঞ্চায়েতপিছু অন্তত একজন করে কেপিএস থাকবেন। কিন্তু সেটাও কার্যকর হয়নি। কৃষির ক্ষেত্রে হুগলিকে ৩টি মহকুমায় ভাগ করা হয়— আরামবাগ, শ্রীরামপুর এবং চুঁচুড়া। আরামবাগে কেপিএসের সংখ্যা ২৬, শ্রীরামপুরে আছেন ১৫ জন এবং চুঁচুড়ায় ১৭ জন। জেলা কেপিএস সংগঠনের সম্পাদক শান্তনু সিংহরায়ের অভিযোগ, ‘‘এক এক জন কেপিএসকে ৩ থেকে ৪টি পঞ্চায়েত এলাকায় তদারকি করার নির্দেশ আছে। কারও পক্ষেই তা পেরে ওঠা সম্ভব নয়। অতিরিক্ত চাপে তাঁরা উত্‌সাহ হারিয়ে ফেলছেন। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন না করতে পারায় আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তির প্রয়োগেও গতি নেই।’’

কেপিএস না-থাকার অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন আরামবাগের রামনগর গ্রামের চাষি বিদ্যাপতি বারুই, পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়া গ্রামের রতন হাটি বা হরিপালের চন্দনপুরের অমল মালিকের মতো চাষিরা। তাঁদের বক্তব্য. তাঁরা কৃষির উন্নত পরিষেবা, নতুন ফসলের উদ্যোগ, রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ছোট ছোট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগে চাষের উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে যা জানানো হতো, এখন তাঁরা সে সব জানতে পারছেন না।

piyus nandi hoogly farmers kps krishi prayukti sahayak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy