Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আমতার গ্রামে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বোমাবাজি

বুধবার সকালে হাওড়ার আমতার চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব গড়াল বোমাবাজিতে। তার মধ্যে গুলিও চলে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আমতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১৮
Share: Save:

প্রতিপক্ষ নেই। তবে লড়াই রয়েছে। আর তা নিজেদের মধ্যেই।

বুধবার সকালে হাওড়ার আমতার চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব গড়াল বোমাবাজিতে। তার মধ্যে গুলিও চলে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ঘটনায় কেউ হতাহত না-হলেও ভগাপাড়া, চাখানা, ঘোষপাড়া প্রভৃতি এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। চাতরা থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শটার উদ্ধার করে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও বোমাবাজির ঘটনায় রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ওই ‘লড়াই’য়ের পরে পুলিশ ও র‌্যাফের টহল শুরু হয়। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।

১১ আসনের এই পঞ্চায়েতে এ বার বিরোধীরা কোনও মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। শুধু তৃণমূলই মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এলাকার তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেরও প্রার্থী শুধুই শাসকদলের নেতারা। তা হলে কীসের গোলমাল?

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, বছরতিনেক ধরে চন্দ্রপুরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। একদিকে আছেন প্রধান সাহানারা বেগম মিদ্যার স্বামী আসফার মিদ্যা এবং ওবায়দুল্লা নামে দুই তৃণমূল নেতা। অন্যদিকে আছেন শেখ ফারুক নামে এক নেতা ও তাঁর দলবল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দুই গোষ্ঠীর বিবাদ হয়েছিল। দলের শীর্ষনেতারা বসে পঞ্চায়েতের ১১টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি আসনে উভয় গোষ্ঠীর কারা প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করে দেন। সেইমতো মনোনয়ন জমা পড়ে। এ বার দড়ি টানাটানি পঞ্চায়েতে কোন গোষ্ঠীর দাপট থাকবে তা নিয়ে। উভয় গোষ্ঠীই চাইছে, তাদের মধ্য থেকে প্রধান, সঞ্চালক প্রভৃতি
পদের লোক বেছে নেওয়া হোক। আসফারদের বিরুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা হ্যান্ডবিলও ছড়ান বলে অভিযোগ।

এই বিবাদকে কেন্দ্র করেই বুধবার সকালে বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। আসফারের অভিযোগ, ওবায়দুল্লার ভাই ইব্রামের বাড়িতে বোমা নিয়ে হামলা করে ফারুকের লোকজন। ফারুকের গোষ্ঠীর পাল্টা অভিযোগ, আসফারের সমর্থকেরাই তাঁদের লক্ষ করে বোমাবাজি করে। পুলিশ গেলে বিবদমান গোষ্ঠীর লোকজন
পালিয়ে যায়।

এই বোমাবাজিতে দু’পক্ষই সিপিএমের হাত দেখছে। আসফার বলেন, ‘‘সিপিএমের আমলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন উন্নয়নের জোয়ার। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে সিপিএম আমাদের দলের একটা অংশকে সঙ্গে নিয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে।’’ পক্ষান্তরে, ফারুকের অনুগামী শেখ গোরা বলেন, ‘‘উন্নয়নের নামে আসফার এবং ওবায়দুল্লারা লুটপাট চালাচ্ছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু সিপিএমের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের নিয়ে আসফার আমাদের দমানোর দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’

সিপিএম অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের আমতা এরিয়া কমিটির সম্পাদক আনন্দ মাজি বলেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারে আমাদের কর্মীরা গ্রামছাড়া। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে তৃণমূল।’’ উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজি এবং এই কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ লাহা অবশ্য ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। দু’জনেরই দাবি, ছোট ব্যাপার। উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE