Advertisement
E-Paper

পলি কেটে বাঁধ সংস্কার হুগলিতে

তাঁদের অভিযোগ, কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই নদীর পলি কেটে তা বস্তায় ভরে বাঁধ মেরামতি হচ্ছে। তাতে প্রবল বৃষ্টি হলে বিপদ বাড়বে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৩:২৬
বালির-বাঁধ: বস্তায় পলি ভরে এ ভাবেই চলছে দামোদর নদের বাঁধ সংস্কার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

বালির-বাঁধ: বস্তায় পলি ভরে এ ভাবেই চলছে দামোদর নদের বাঁধ সংস্কার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

চলতি মাসের গোড়ায় হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় ১০০ দিনের কাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। জেলাশাসকের কাছে কৈফিয়ত তলব করে প্রকল্পটি দ্রুত রূপায়ণে পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশমতো বর্ষার মরসুমে ওই প্রকল্পে যে ভাবে নদীবাঁধ এবং খাল সংস্কার হচ্ছে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বহু এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই নদীর পলি কেটে তা বস্তায় ভরে বাঁধ মেরামতি হচ্ছে। তাতে প্রবল বৃষ্টি হলে বিপদ বাড়বে।

জেলার চারটি মহকুমার মধ্যে আরামবাগ বন্যাপ্রবণ এলাকা। এ ছাড়া, চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড়, পোলবা, ধনেখালি, শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া, শিয়াখালা এবং চন্দননগর মহকুমার হরিপাল, তারকেশ্বরের মতো এলাকাও ফি-বছর বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়। প্রতি বছরই বর্ষার মরসুমের আগে জেলায় নদীবাঁধ মেরামতি বা খাল সংস্কার নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক হয়। তার পরেই সেই কাজে হাত দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার সেই কাজ শুরু হতেই অনিয়মের অভিযোগ।

জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুরে ইতিমধ্যেই দামোদরের নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ হয়েছে। এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, নদীর মাটি কেটে কাজ হয়েছে। খানাকুলের কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকায় আবার নদীবাঁধের মাটি কেটে ফুটবল মাঠ তৈরি করা হয়েছে। বিধায়ক ইকবাল আহমেদ সম্প্রতি মাঠটির উদ্বোধনও করেন। গ্রামের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘শুধু গ্রামের ছেলেরা কেন? পঞ্চায়েতের মাথারাই তো রয়েছেন ওই উদ্যোগের সামনের সারিতে!’’

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যেপাধ্যায় বলেন,‘‘বিধি অনুয়ায়ী বালির বস্তা বাঁধ মেরামতির কাজে ব্যবহার করা হয়। হুগলিতে সেচ দফতরের অধীনে যে কাজ হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের সে ভাবেই বলা হচ্ছে। অন্য কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রে নদীর মাটি কাটার কোনও অভিযোগ উঠলে নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

আবার খানাকুল ব্লকের মতো বন্যা কবলিত এলাকায় কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতের দ্বারকেশ্বরের নদীবাঁধ কেটেই ফুটবল মাঠ করে দিয়েছে গ্রামের ডাকাবুকোরা। গ্রামের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘বিধায়ক ইকবাল আহমেদ মাঠটির উদ্বোধনও করলেন। বিডিও-রা কী করবেন! ওঁরা বাইরে থেকে চাকরি করতে আসেন।’’

এ নিয়ে জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে নদীর মাটি কেটে বস্তায় ভরে তা দিয়ে বাঁধ মেরামতি হচ্ছে কিনা, সে খবর নেই। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবে ওই প্রকল্পে শুধু মাটির কাজই হয়। অন্য ভাবে কাজের সুযোগ নেই।’’

গোঘাটে গত মরসুমের বন্যায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। কামারপুকুর ডিভিসি খালঘাটের সেতু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল জলের তোড়ে। ফের বর্ষার মরসুম এসে গিয়েছে। সেই সেতু এখনও সারানো হয়নি। একই ছবি গোঘাটের কালীপুর থেকে বালিদেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার। ওই রাস্তাটি বন্যায় ভেঙে গিয়েছিল। সারানো হয়নি। তার জেরে বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ প্রতিদিন নাজেহাল হচ্ছেন। বহু আবেদন-নিবেদনেও কাজ হয়নি।

জেলা সভাধিপতি আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দা মেহেবুব রহমান অবশ্য জেলাশাসকের কোর্টেই বল ঠেলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসকের আহ্বানে প্রতিটি ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বর্ষার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাঁধ মেরামতির কাজও জেলায় হয়ে গিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট ভাবে এ বিষয়ে জেলাশাসকই বলতে পারবেন।’’

সভাধিপতি কাজ হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য প্রমাদ গুনেছেন। তিনি বলেন,‘‘নদীর বুকে যেখান থেকে খুশি মাটি কাটা যায় না। তাতে করে বন্যার বিপদ বাড়বে বই কমবে না। এর বিজ্ঞান আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এই কাজ করা উচিত। ’’

এই চাপন-উতোরের আবহেই, এখন দেখার এ বার বর্ষা আদৌ কোনও অশনি সঙ্কেত নিয়ে আসে কিনা এই জেলায়।

Sand Hooghly 100 days work
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy