Advertisement
E-Paper

ঘরে অসুস্থতা, তবু ব্রিগেডে

মাথায় লাল টুপিটা পরতে-পরতে বললেন, “আমার স্বামীর সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে, ব্রিগেডেই তার প্রতিবাদ জানাব।”

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৪
ব্রিগেডের মঞ্চে বাম নেতারা। ছবি: পিটিআই।

ব্রিগেডের মঞ্চে বাম নেতারা। ছবি: পিটিআই।

পুলিশের ভয়ে দীর্ঘদিন ঘরছাড়া তাঁর স্বামী। তবু তাঁকে আটকানো যায়নি। কোলের সন্তানদের বৃদ্ধা শ্বাশুড়ির কাছে রেখে ভোরে‌ই স্টেশনে হাজির হয়েছিলেন পলাশির জয়িতা সরকার। ব্রিগেড যাবেন। মাথায় লাল টুপিটা পরতে-পরতে বললেন, “আমার স্বামীর সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে, ব্রিগেডেই তার প্রতিবাদ জানাব।”

জমি ফিরে পেতে মরিয়া সিপিএম রবিবার সমস্ত কর্মীকে সপরিবার ব্রিগেডের জনসভায় যেতে বলেছিল। বছর তিরিশের জয়িতা তাঁদেরই এক জন। তাঁর স্বামী অজয় সরকার ডিওয়াইএফের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি। ২০১৭ সালে পলাশি কলেজে নির্বাচনকে ঘিরে গন্ডগোলে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। গত ৮-৯ জানুয়ারি ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করার পরে তাঁকে ধরতে পার্টি অফিসে হানা দিয়েছিল পুলিশ। কোনও রকমে পালাতে পারলেও আর ঘরমুখো হতে পারেননি। সংসারে অভাব। দুই শিশুসন্তান নিয়ে জেরবার জয়িতা তবুও ব্রিগেডে গিয়েছেন।

যেমন মেয়ের অসুস্থতা সত্ত্বেও ব্রিগেডে গিয়েছেন সিপিএমের ফুলিয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক অনুপ ঘোষ। তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছে তাঁর মেয়ে। সঙ্গে বমি। দু’বেলা চলছে ইঞ্জেকশন চলছে। কমরেডদের সঙ্গে ব্রিগেড রওনা দেওয়ার আগে অসুস্থ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে অনুপ বলে যান, “ভয় পাস না। আমি ব্রিগেডে ঘুরে আসছি।।” মেয়ে আটকায়নি বাবাকে। ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়েছিল। ফেরার পথে অনুপ বলেন, “লড়াইটাই আমাদের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান। ব্রিগেড থেকে সেই লড়াইয়ের শপথ নিয়ে ফিরছি।”

দু’বার বাইপাস সার্জারি হয়েছে নাকাশিপাড়ার শান্তি দাসের। মস্তিষ্কেও এক বার অস্ত্রোপচার হয়েছে বছর আশির মানুষটির। সিপিএমের জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য, বছর আশির মানুষটি ভোরেই চলে এসেছিলেন বেথুয়াডহরি স্টেশনে। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে ঠায় দাঁড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছেন শিয়ালদহে। সেখান থেকে মিছিলে হেঁটে ব্রিগেডে। আগের রাতে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রবিবার সকালে চাকদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন এক এসএফআই কর্মী। ক’দিন আগেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছে কৃষ্ণনগরের বছর পঁচাত্তরের বিভাস বিশ্বাসের। তিনিও কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেছেন।

অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এই ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে কার্যত এককাট্টা ছিলেন ছাত্র-যুব থেকে বর্ষীয়ান নেতারা। ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে মিটিং-মিছিল করা ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের লাগাতার ডাক দিয়েছে সিপিএম। দলের দাবি, তাতে সাড়া দিয়েছে নতুন প্রজন্ম। ব্রিগেডের সভায় তারাও দলে-দলে হাজির হয়েছে। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এই মরা বাজারে, যেখানে গোটা নদিয়া জেলায় একটা কলেজেও এসএফআইয়ের পোস্টার মারার লোক নেই, সেখানে অন্তত তিন ছাত্রছাত্রী ব্রিগেডে গিয়েছেন বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শান্তনু সিংহ বলেন, “আমাদের প্রত্যাশার থেকে বেশি ছাত্রছাত্রী ব্রিগেডে গিয়েছেন। ভয় ভেঙে পড়ুয়ারা যে রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন, এটা তারই প্রমাণ।” যদিও টিএমসিপি ছাত্রছাত্রীদের ব্রিগেড-যাত্রা ‘ফাঁপানো দাবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

দলের নির্দেশ মেনে সিপিএমের অনেক কর্মীই সঙ্গে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। সেই তালিকায় ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও। স্ত্রী তো বটেই, বছর বারোর মেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ব্রিগেড শেষে ট্রেনে ফিরতে-ফিরতে বলেন, “যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আজ সমস্ত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ব্রিগেডে গিয়েছেন। সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।”

CPM Brigade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy