মুখ্যমন্ত্রী যা চান না, তাঁর দলের সাংসদ সেটাই চাইলেন। এমনকী, সেই দাবিতে প্রকাশ্যে ক্ষোভও জানালেন।
ঘটনা হাওড়া পুরসভার। পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি কাজের বরাত পেতে ঠিকাদারদের ই-টেন্ডারের মাধ্যমে আবেদন করার পদ্ধতি এ রাজ্যে চালু হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। সেই নির্দেশ মেনে হাওড়াতেও এই পদ্ধতি চালু করে তৃণমূলশাসিত পুরবোর্ড। কিন্তু বৃহস্পতিবার সশরীরে হাওড়া পুরসভায় উপস্থিত হয়ে এই পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করলেন এলাকার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভও জানালেন। সরকারি কাজে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি রুখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের আচরণে প্রসূনবাবু তারও বিরোধিতা করলেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
হাওড়ার ওই তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, ই-টেন্ডারিংয়ের এই পদ্ধতিতে সমস্ত প্রকল্পের গতি কমে যাচ্ছে। সময়মতো টাকা না পাওয়ায় কাজ করতে চাইছেন না ঠিকাদারেরা। পুরকর্তাদের কাছে এই পদ্ধতি অবিলম্বে তুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন প্রসূনবাবু। যদিও হাওড়ার ঠিকাদারদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংসদের এই অভিযোগ নস্যাৎ করে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় কাজে অনেক বেশি স্বচ্ছতা এসেছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে আচমকাই পুরসভায় যান প্রসূনবাবু। পুর-চেয়ারম্যান অরবিন্দ গুহর সামনে বসেই অভিযোগ করেন, পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি কাজ হলেই ই-টেন্ডার করার এই নিয়মে তাঁর সমস্ত কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। টাকার জোগান না থাকায় সমস্ত কাজ মাঝপথে থমকে যাচ্ছে। টাকা পেতে সমস্যা হওয়ায় ঠিকাদারেরা কাজ করতে চাইছেন না বলেও দাবি করেছেন সাংসদ।
প্রসূনবাবুর প্রশ্ন, সাংসদ কোটার টাকা খরচ করতে সমস্যা না হলে পুরসভার কাজ করতে গেলে কেন এই সমস্যা হবে? তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ কোটার ২৫ কোটি টাকা বেশির ভাগটাই খরচ করতে চাই। ইতিমধ্যে ওই টাকায় শহরে আলো, রাস্তা, সৌন্দর্যায়ন— সবই হচ্ছে। দিদি বলেছেন, হাওড়ায় রাস্তার পাশে শৌচাগারের অভাব পূরণের ব্যবস্থা করতে। আরও কাজ করতে চাই। কিন্তু এই নিয়মের জন্য পারছি না।’’
প্রসূনবাবুর দাবি, অবিলম্বে এই নিয়ম তুলে না দিলে কাজে সমস্যা হবে। এ কথা তিনি পুর কমিশনারকেও জানিয়েছেন। তাঁর এই দাবি সঙ্গত বলেই মনে করেছেন পুর-চেয়ারম্যান অরবিন্দবাবুও। প্রসূনবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত পুর-চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সাংসদ যা বলছেন, তা ঠিকই। এই নিয়মের ফেরে কাজ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ম তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া উচিত।’’
সাংসদ বা চেয়ারম্যানের এই দাবিকে অবশ্য দলীয় নীতির বিরোধিতা বলে মনে করেন জেলা সভাপতি (শহর) তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘সরকার গঠনের পরেই সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনতে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে দিয়েছিলেন, পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি কাজ হলেই ই-টেন্ডার করতে হবে। এর বিরোধিতার অর্থ তো মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করা! শুধু হাওড়া পুরসভা কেন, সব সরকারি দফতরে এই নিয়ম চালু রয়েছে।’’
প্রশ্ন হল, এই নিয়মে ঠিকাদারেরা কি আদৌ সমস্যায় পড়েছেন?
হাওড়া পুরসভার ঠিকাদার সংগঠন ‘হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কনট্র্যাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কাশীনাথ দাশ বলেন, ‘‘সাংসদের কথা ঠিক নয়। ওই পদ্ধতি সরকারি কাজে চালু হওয়ায় স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি কমেছে। সকলেই কাজ পাচ্ছেন। ঠিকাদারদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy