Advertisement
E-Paper

দূষিত ‘আতিথ্যে’ প্রাণ হারাচ্ছে শীতের অতিথিরা

ক’দিন আগেই ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে কয়েকটা ঝাঁক এসে নেমেছিল জলে। প্রতি বারের মতো। কিন্তু এ বার শীতকালীন বাসস্থান খুব সুখের হল না ওদের কাছে। বৃহস্পতিবারই দেখা গেল, ওদের এক জন ঝিলের জলে মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে। ধূসর রঙের হাঁস প্রজাতির পাখি ‘স্নাইপ’।

অশোক সেনগুপ্ত ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৪২
জলে ভাসছে মৃত ‘স্নাইপ’। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

জলে ভাসছে মৃত ‘স্নাইপ’। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ক’দিন আগেই ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে কয়েকটা ঝাঁক এসে নেমেছিল জলে। প্রতি বারের মতো।

কিন্তু এ বার শীতকালীন বাসস্থান খুব সুখের হল না ওদের কাছে। বৃহস্পতিবারই দেখা গেল, ওদের এক জন ঝিলের জলে মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে। ধূসর রঙের হাঁস প্রজাতির পাখি ‘স্নাইপ’। কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হিমালয় টপকে পাখিটি এসেছিল। শুধু ওই একটি-ই নয়, গত এক সপ্তাহে পাখিপ্রেমীরা সাঁতরাগাছি ঝিলের ধারে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন ‘স্নাইপ’, ‘ল্যাপ উইং’ এবং ‘স্যান্ড পাইপার’ প্রজাতির বেশ কিছু পাখিকে।

সাঁতরাগাছি ঝিল কি তবে পরিযায়ী পাখিদের কাছে আর নিরাপদ নয়?

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই অসুস্থ হয়ে বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি মারা যায় সাঁতরাগাছিতে। তবে এ বার পাখিদের মৃত্যুর হার তুলনায় বেশি। পাখিপ্রেমীরা অনেকেই বলছেন, ঝিলের জল এবং আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে যাওয়ার ফলেই ঝিলের পরিবেশে আর মানিয়ে নিতে পারছে না পাখিরা। গোটা ঝিলে জল ক্রমেই কমছে। ঝিলের এক পাশে ডাঁই হয়ে রয়েছে প্লাস্টিক-সহ আবর্জনা, থার্মোকলের থালা, বাড়ির অব্যবহৃত কমোড, রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া নোং‌রা জিনিস। ক্রমশ বাড়তে থাকা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ঝিলে সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকতে পক্ষীকূলকে কার্যত প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে কচুরিপানা ও আবর্জনার সঙ্গে।

হাওড়ার সাঁতরাগাছি স্টেশন সংলগ্ন বাকসাড়ার ঝিলপাড় রোড। তার ডান পাশেই ৩২ একরের সাঁতরাগাছি ঝিল। দশ-বারো ফুট চওড়া রাস্তার এক পাশে ঝিল এবং অন্য পাশে সারি দিয়ে বসতবাড়ি। প্রায় ভেঙে পড়েছে লোহার তারের জাল। সেখানেই একটি ক্লাবের রাস্তার ধারে বসানো রয়েছে ফুট তিনেকের একটি ডাস্টবিন। তাতে হাওড়া পুরসভার নাম। ব্যস এটুকুই। গোটা ঝিল রোড এলাকায় নোংরা ফেলার জায়গা বলতে ওটাই সম্বল। ফলে ওই ডাস্টবিন থাকা না থাকার মধ্যে বিশেষ কোনও ফারাক নেই। যে কারণে কয়েকশো বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছে উন্মুক্ত ওই ঝিলপাড়।

অভ্যাস মতো প্রতি শীতে তবু পরিযায়ী পাখি আসে এই ঝিলে। ‘লেসার হুইসলিং ডাক’, ‘হোয়াইট ব্রেস্টেড কিং ফিশার’, ‘ইয়েলো ফুটেড গ্রিন পিজিয়ন’, ‘নর্দার্ন পিনটেল’, ‘বি ইটার’, ‘জাঙ্গল ময়না’, ‘স্নাইপ’, ‘ল্যাপ উইং’ এবং ‘স্যান্ড পাইপার’-সহ নানা রকম প্রজাতির ও রংবেরঙের পাখি ঝিলের আকর্ষণ বাড়ায়। পাখিপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, দিনের পর দিন এ ভাবে পাখিরা মারা যেতে শুরু করলে এক সময়ে পরিযায়ী পাখি আসাই বন্ধ হয়ে যাবে সাঁতরাগাছি ঝিলে। পক্ষী-বিশারদ সুমিত সেন বলেন, ‘‘গত দু’দশক ধরে এই পাখি আসা একটু একটু করে কমছে। ঝিলের পরিবেশ যত খারাপ হবে, ততই মুখ ফিরিয়ে নেবে পরিযায়ী পাখিরা।’’

ঝিল দেখার দায়িত্ব বন দফতরের। কী বলছে তারা?

দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘মাসখানেক আগেও ঝিলের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। কচুরিপানা ১০০ শতাংশ সরিয়ে দিলে আবার পাখি আসবে না। ৩০-৩৫ শতাংশ থাকা দরকার।’’ কিন্তু প্লাস্টিক আর আবর্জনার কী হবে? হাওড়া জেলার বন আধিকারিক বিমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই এলাকায় ভ্যাট করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যদি পুরসভা করে দিতে না পারেন, তা হলে আমরাই সেখানে ভ্যাট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’

হাওড়া পুরসভা কেন এই ঝিল পরিষ্কার রাখতে পারছে না?

মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি ঝিল পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা নানা সময়, নানা ভাবে চেষ্টা করেছি। এখন বিষয়টি গ্রিন বেঞ্চে বিবেচনাধীন। আদালত যে ভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা তা মেনে চলব।’’

পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য বন দফতর এবং হাওড়া পুরসভার সিদ্ধান্তের জন্য বসে থাকতে রাজি নন। পরিযায়ী পাখি টানতে সাঁতরাগাছি ঝিল ও সংলগ্ন অঞ্চল পরিষ্কার করাতে এ বার প্রচার অভিযানে নামছেন কিছু পরিবেশবিদ। তাঁদের দাবি, ঝিলের জলে বর্জ্য ফেলা বন্ধ হোক। লাগোয়া কিছু দোকান ও ঘর জলাশয়ের কিছু অংশ আটকে দিয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। ঝিলে বাড়ছে কচুরিপানা। ৯ ও ১০ জানুয়ারি সেখানে সমাবেশ করবে পাখিপ্রেমী একটি সংগঠন। পাখিপ্রেমী অর্জন বসুরায় বলেন, ‘‘আশপাশের অঞ্চল থেকে জঞ্জাল নিয়ে ওই ভ্যাটে ফেলছে পুরসভা। তাই মুশকিল আসান করতে গিয়ে মুশকিল আরও বেড়েছে।’’

সাঁতরাগাছি বাঁচানোর লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে ফেসবুক-গোষ্ঠী। শীতে প্রায় প্রতি রবিবার গোষ্ঠীর সদস্যেরা সাঁতরাগাছি যান। তার অন্যতম সক্রিয় সদস্য, বর্ষীয়ান শুভঙ্কর পাত্র বলেন, ‘‘ঝিলের ধারে কিছু দোকান পিছনের অংশে ঘেঁষ ফেলে ঝিল দখল করেছে। প্লাস্টিকের ভ্যাটগুলো এখন আর নেই। অপরিকল্পিত ভাবে জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। এর কিছুটা পড়ছে জলে।’’

migratory birds death santragachi lake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy