Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বিহার থেকে উদ্ধার নাবালিকা

বিহারে বিয়েবাড়িতে নেচে টাকা রোজগারের লোভে কাউকে না জানিয়ে এক মহিলার সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল কিশোরীটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

বিহারে বিয়েবাড়িতে নেচে টাকা রোজগারের লোভে কাউকে না জানিয়ে এক মহিলার সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল কিশোরীটি। কিন্তু সেখানে নেচে টাকা তো মিলতই না, উল্টে কপালে জুটল অত্যাচার। ভুল বুঝতে পেরে রোজকার ওই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল কিশোরীটি। সুযোগ পেয়ে একদিন পুলিশকে নিজেই সে ফোন করে। ফোনের সূত্র ধরেই রবিবার দুপুরে উলুবেড়িয়ার চণ্ডীপুরের বছর পনেরোর ওই কিশোরীকে বিহারের একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে উলুবেড়িয়ায় নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু কীভাবে বিহারে গেল ওই কিশোরী?

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তার মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তার বাবা মায়ের সঙ্গে থাকেন না। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর ওই নাবালিকা বাড়িতেই জরির কাজ করত। কয়েক মাস আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয় তার। ওই মহিলাই তাকে বলে বিহারে যেতে পারলে নাচ দেখিয়ে প্রচুর টাকা রোজগার করা যাবে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ি উলুবেড়িয়ার পারিজাতে। সে একজন আড়কাঠি। সে ও তার স্বামী ওই নাবালিকাকে ফুসলিয়ে বিহারে নিয়ে যায়। মতিহারি জেলার কটুয়া থানার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম আমুয়ায় বিয়ে বাড়ির নাচের দলে ভিড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, ওই দলের নেতারাই তাকে ভোজপুরি ভাষায় গান শিখিয়ে দেয়। নাচেরও তালিম দেয়। এরপরে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো বিয়েবাড়িতে। সেখানে নাচতে হত তাকে। প্রতিদিন নাচ দেখানোর জন্য তাকে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলা হলেও এক পয়সাও দেওয়া হয়নি। শুধু খাওয়া-পরা দেওয়া হতো।

গত ৩০ অগস্ট নাবালিকার মা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ নাবালিকা অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে পারিজাতের ওই মহিলার কথা জানতে পারে। ২১ অক্টোবর তাকে ফোন করেন উলুবেড়িয়া থানার আইসি রঞ্জিত ঘোষ নিজে। কিন্তু মহিলা ফোন কেটে দেয়। উলুবেড়িয়া থানার এক আধিকারিক জানান, মহিলাটি ফোন কেটে দিয়ে সেটি ঘরে রেখে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। সেই সুযোগে নাবালিকাটি ফোন ঘেঁটে আইসির নম্বর দেখে ফেলে। এরপর নিজেই আই সি-কে ফোন করে সব জানায়। জানিয়ে দেয় ঠিকানাও। ওইদিন সন্ধ্যাতেই তাপস জানা নামে একজন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশের একটি দল বিহারে রওনা দেয়। রবিবার দুপুরে কটুয়া থানার পুলিশের সাহায্যে ওই বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে ওই মহিলা ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সমস্ত ঘটনা অস্বীকার করে। এরপর পুলিশ চলে আসার নাম করে লুকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পরে তারা দেখে শৌচাগার থেকে ওই নাবালিকাকে বের করে আনছে ওই মহিলা ও তার স্বামী। সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে হানা দিয়ে নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার ওই নাবালিকাকে আদালতে তোলা হবে। তাকে যাতে তার মায়ের হাতেই তুলে দেওয়া হয় সেই আবেদনই আদালতে করা হবে বলে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor rescued bihar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE