সুনসান: আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দোকানপাট। ছবি: তাপস ঘোষ।
যেন সিনেমা!
ভরা বাজারে মোটরবাইকে চড়ে এসে দুষ্কৃতীদের এলোপাথাড়ি বোমা-গুলি বর্ষণ। দোকান ভাঙচুর। খুন। আতঙ্কে ঝাঁপ বন্ধ দোকানের!
হিন্দি সিনেমার পরিচিত এই দৃশ্যই বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল চুঁচুড়ার কোদালিয়ার রবীন্দ্রনগরে। ভরা বাজারে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হল তারক বিশ্বাস (৪৫) নামে এক ইমারতি সরঞ্জাম ব্যবসায়ী। বাজার সেরে ফেরার পথে গুলিতে জখম হন অভিষেক হালদার নামে এক তরুণও। বোমার আঘাতে জখম হন আরও চার জন।
গত সাত মাসে হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায় অপরাধমূলক কাজকর্ম লাগামছাড়া ভাবে বেড়েছে। শুধু খুনই হয়েছেন ১৮ জন। সেই তালিকায় যুক্ত হল এ দিনের ঘটনাও। এ ছাড়াও রয়েছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। সব মিলিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল শহর। এ দিন তিনটি মোটরবাইকে ন’জন দুষ্কৃতী এসে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালালেও পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে চুঁচুড়া থানার আইসি সোমনাথ দত্ত ঘটনাস্থলে গেলে মহিলারা বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীদের ধরতে পারত। কিন্তু খবর দেওয়ার এক ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি ওঠে।
পুলিশ অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। নিহতের দোকানে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা গিয়েছে। পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানিয়েছেন, পুরনো শত্রুতার জেরেই ওই ব্যবসায়ীর উপরে হামলা হয়। হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত তারক বিশ্বাস ওই এলাকারই বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল চুঁচুড়া থানায়। হাজতবাসও করতে হয়েছে তাকে। এর আগে পুলিশ তারক ও তার ভাই টোটন বিশ্বাসকে জীবিত ধরে দেওয়ার জন্য শহরে পোস্টার সেঁটেছিল। পরে দুই ভাইকে পুলিশ গ্রেফতার করে। টোটন এখনও হাজতে রয়েছে। সম্প্রতি তারক অসামাজিক কাজ ছেড়ে ব্যবসায় নামে। বাড়ির কাছেই দোকান করে। সেই দোকানে হিসাব-রক্ষকের কাজ করতেন রবীন্দ্রনগর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা অভিষেক।
এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ভরা বাজারে দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। রিভলভার উঁচিয়ে তারা হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। তাদের ছোড়া গুলি অভিষেকের বুক-পিঠ ফুঁড়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি একটি দোকানে ঢুকে পড়েন। ততক্ষণে আতঙ্কে দোকানিরা ঝাঁপ ফেলতে শুরু করেছেন। ক্রেতারা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। হামলাকারীরা কাছেই তারকের দোকানে চড়াও হয়। দোকান ভাঙচুর করে বোমা-গুলি চালাতে শুরু করে। তারক দোকানেই ছিল। প্রাণ বাঁচতে সে দোকানের পিছনে পালাতে গেলে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পুলিশের অনুমান, টোটনের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বিশালের দলবল হামলার নেপথ্যে রয়েছে। তাদের নিশানা ছিল তারক। অভিষেক কোনও ভাবে যদি মোবাইলে তারককে বলে দেন, সেই আশঙ্কায় তিনিও হামলারকারীদের লক্ষ্য হন।
অভিষেককে প্রথমে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। তাঁর মা শোভাদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর শরীর খারাপ। ছেলেকে বাজারে পাঠিয়েছিলাম। তার মধ্যেই কী ঘটে গেল!’’ খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তারকের স্ত্রী স্বাতী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy