Advertisement
E-Paper

ফের দুই শহরে দুষ্কৃতী-রাজ

বৃহস্পতিবার রাতে হেরোইন এনে না-দেওয়ার ‘অপরাধে’ এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী যুবককে প্রথমে মারধর ও তার পরে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ ওঠে সেখানকার এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৯
ধূলিসাৎ: মাদক বিক্রির অভিযোগে হামলা। নিজস্ব চিত্র

ধূলিসাৎ: মাদক বিক্রির অভিযোগে হামলা। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু হুগলি শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী-রাজে কিছুতেই রাশ টানা যাচ্ছে না। কালীপুজোর রাতে পাশাপাশি দুই শহর চন্দননগর ও চুঁচুড়ায় দু’টি ঘটনায় ফের বেআব্রু হয়ে পড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বৃহস্পতিবার রাতে হেরোইন এনে না-দেওয়ার ‘অপরাধে’ এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী যুবককে প্রথমে মারধর ও তার পরে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ ওঠে সেখানকার এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে সেই দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে মারে জনতা। ওই রাতেই আবার চন্দননগরের সুভাষ পল্লিতে গুলিবিদ্ধ হন এক যুবক। তাঁর টাকা ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। যে শহরে এখন পাড়ায় পাড়ায় রাত জেগে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি চলছে, সেখানে কী ভাবে ওই কাণ্ড ঘটে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, চুঁচুড়ায় গণপিটুনিতে জড়িত অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চন্দননগরের ঘটনাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এই আশ্বাসেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কমছে কই?

চন্দননগরের সুভাষ পল্লিতে শেখ নিজামুদ্দিন নামে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন বাড়ির কাছেই, রেললাইনের ধারে। তিনি জানান, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পোলবার শঙ্করবাটি এলাকা থেকে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে একদল দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে দুষ্কৃতীরা নিজামুদ্দিনের থেকে কয়েক হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার পরে তিনি বাইকে চড়ে এগোতেই তাঁর ডান পায়ে গুলি করে ওই দুষ্কৃতীরা।

নিজামুদ্দিন চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির কাছেই যে আক্রান্ত হব, বুঝতে পারিনি। দুষ্কৃতীদের কাউকে চিনি না।’’ শুক্রবার রাত পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে থানায় কোনও অভিযোগ জানাননি নিজামুদ্দিন। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা রাতের শহরে পুলিশি টহলদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলির বাসিন্দারা আবার এলাকায় মাদক-ব্যবসা রোধে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন।

এলাকার প্রতিবন্ধী যুবক শেখ সমীর খুন হওয়ায় জনরোষে শুক্রবার সকালে গণপিটুনিতে মারা যায় স্থানীয় দুষ্কৃতী, ঘটনায় অভিযুক্ত শেখ পটল। জনতা এর পরে এলাকায় মাদক-ব্যবসা চালানোর অভিযোগে তিনটি দোকান ও দু’টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মহিলা এবং শিশুরাও লাঠি-বাঁশ হাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। পুলিশ গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। এলাকায় মাদক-ব্যবসা বন্ধের দাবিও ওঠে। অনেকেরই অভিযোগ, এলাকার মাদক-ব্যবসার রমরমার জন্যই অপরাধ বাড়ছে। রাতে ওই রাস্তায় মহিলাদের বেরনো দুষ্কর হয়ে পড়ছে। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশ কমিশনার অবশ্য দাবি করেছেন, ওই এলাকায় মাদক-ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ আগে আসেনি। এ বার যখন অভিযোগ উঠছে, নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হুগলি শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী-রাজ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। পুলিশ যে দুষ্কৃতীদের ধরছে না, এমন নয়। তা সত্ত্বেও অপরাধের সংখ্যা কমছে না। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, দশমীর ভোরে শ্রীরামপুরের একটি নার্সিংহোমে আইসিইউ-তে ঢুকে রিভলভার উঁচিয়ে নার্স এবং হাসপাতাল কর্মীদের শাসিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনায় কয়েক জন ধরা পড়েছে। কিন্তু তার পরে গত ১৬ অক্টোবর শেওড়াফুলি স্টেশনের পাশে গলাপো‌লে ব্যবসায়ীর টাকা-গয়না লুঠ বা তারও আগে ১২ অক্টোবর কোন্নগরে প্রকাশ্য রাস্তায় ইমারতি ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের টিঁকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ।

এই দুষ্কৃতী-রাজ কবে বন্ধ হবে, সে প্রশ্নই এখন ঘুরছে শিল্পাঞ্চলে।

Miscreants Hooghly industrial area
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy