Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নারদ-হুলে গোঘাটে প্রচারে অস্বস্তি তৃণমূলে

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টে। হঠাৎই হুঙ্কার নেতার, ‘‘মিছিলে যাওয়ার কারও গা নেই দেখছি। কী ব্যাপার খুলে বলতো!” জনা কুড়ি কর্মী-সমর্থকদের একজন প্রশ্ন করলেন, “দল এবার হেরে যাবে নাতো মোহরদা। টিভিতে যা সব ছবি দেখাচ্ছে সে সব সত্যি!”

সিঙ্গুরে নারদ নিয়ে সিপিএমের মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সিঙ্গুরে নারদ নিয়ে সিপিএমের মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

পীযূষ নন্দী ও প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টে। হঠাৎই হুঙ্কার নেতার, ‘‘মিছিলে যাওয়ার কারও গা নেই দেখছি। কী ব্যাপার খুলে বলতো!”

জনা কুড়ি কর্মী-সমর্থকদের একজন প্রশ্ন করলেন, “দল এবার হেরে যাবে নাতো মোহরদা। টিভিতে যা সব ছবি দেখাচ্ছে সে সব সত্যি!”

গোঘাটের কামারপুকুর অঞ্চল নেতা তথা কামারপুকুর পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের মোহরচাঁদ আহমেদ উত্তর দিলেন, “সত্যি কি মিথ্যে জানি না। তবে আমাদের কামারপুকুর অঞ্চলেই কেউ স্টিং অপারেশন করলে অনেক মদনদা (মদন মিত্র) বেরোবে সে তো তোরাও জানিস। নে নে দেরি করিস না। চারটেতে মিছিল শুরু।” চোখে-মুখে নানা প্রশ্ন নিয়েই মিছিলের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন কর্মীরা।

স্থান গোঘাটের কামারপুকুর অঞ্চলের সুবীরচক গ্রাম। এ দিনই গোঘাট বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল তাদের প্রথম নির্বাচনী মিছিল শুরু করল। কামারপুকুর এবং গোঘাটে দু’টি পৃথক মিছিলের আয়োজন হয় বিকাল চারটে নাগাদ। দুটো মিছিলেই কিছুক্ষণ হাঁটার পর তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদার বলেন, “দফায় দফায় প্রতিটি অঞ্চল ধরে ধরে প্রচার-মিছিল চলবে। মিছিলে মূলত উন্নয়নের কথা থাকবে। অতীতে সিপিএম কেমন সন্ত্রাস করেছে, প্রচারে সেই বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে।’’

আর নারদ?

‘‘এটা যে কংগ্রেস-সিপিএম ও বিজেপির চক্রান্ত, আমরা প্রচারে তা মানুষকে জানাব।’’ বললেন মানসবাবু। যদিও য়তক্ষণ মিছিল চলল, ততক্ষণ শুধু মূল শ্লোগান একটাই ‘উন্নয়ন বজায় রাখতে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট দিন’। দু’টি মিছিলেই আহামরি ভিড় ছিল না। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি ছিল, ন্যূনতম হাজার দেড়েক করে লোক হবে। কিন্তু গোঘাট অঞ্চলের মিছিলে ছিলেন সাকুল্যে শ’খানেক লোক। কামারপুকুর অঞ্চলের মিছিলে মান্দারন-শ্যামবাজার ইত্যাদি চার-পাঁচটি অঞ্চলের লোক এনেও সামান্য বেশি, শ’পাঁচেক।

নারদ কাণ্ডের জন্যই কি মিছিলের এই হাল?

দু’টি মিছিলেরই অন্যতম সংগঠক তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা গোঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন মণ্ডল বলেন, “নারদের কোনও প্রভাব গ্রামে পড়েনি, এলাকার উন্নয়নটাই দেখেন কৃষিজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষ। কাজের চাপের জন্যই হয়তো মিছিলে আসতে পারেননি।”

কর্মী-সমর্থকরা কী বলছেন?

অতীতে দলের বহু মিছিলে থাকা কামারপুকুর অঞ্চলের মধুবাটি গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “মিছিলে যেতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। দুপুরে স্ত্রী বলল, তোমাদের দিদিতো ‘আমরা চোর’ বলে একটা মিছিল করেছিল। আজকে কি তোমরা ‘আমরা ডাকাত’ লেখা গলায় ঝুলিয়ে মিছিল করবে! এরপর আর বের হতে পারিনি” দীর্ঘদিন ধরেই দলের সক্রিয় কর্মী অমরপুরের একজন বললেন, ‘‘নেতাদের টাকা তোলা নিয়ে ততটা মাথাব্যথা নেই। ওইসব নেতারা মাত্র ৫ লাখ টাকা নিচ্ছেন এটাই বরং বিশ্বাস হচ্ছে না।’’

তবে অনেক নেতা-কর্মীই জানালেন, ‘‘কেউ নারদ নিয়ে প্রশ্ন করলে অস্বস্তি তো হচ্ছেই। কিন্তু কী করা যাবে।’’ গোঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষর বক্তব্য, “অনেক নেতাই ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেন। তবে নিজের হাতে নয়। সে ক্ষেত্রে দলের শীর্ষনেতাদের নিজের হাতে টাকা নেওয়ার এই ছবি দেখে অবাক আমার মতো অনেকেই।’’

তবে জেলাজুড়ে এ দিনও নারদ কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিরোধীরা। জেলার নানা জায়গায় ‘ঘুষকাণ্ডে জড়িত’ তৃণমূল নেতাদের শাস্তির দাবিতে পথে নামলেন সিপিএম এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ বিজেপির শ’খানেক কর্মী-সমর্থক পান্ডুয়ার কালনা মোড়ে জিটি রোড অবরোধ করেন। জেলা সদর চুঁচুড়াতেও এ দি‌ন একই দাবিতে মিছিল করে বিজেপি। কয়েকশো লোকের মিছি‌লে সামিল ছিলেন মহিলারাও।

সিঙ্গুরেও ‘ঘুষকাণ্ডের বিচার’ চেয়ে এ দিন মিছিল করে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC candidate Narada news election campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE