বাগনানের আনন্দ নিকেতনে প্রদর্শনী পুকুর। ছবি: সুব্রত জানা।
নানা ভাবে মৎস্য মজুত ও একাধিকবার মৎস্য আহরণ পদ্ধতিতে মাছ চাষ বাড়াতে উদ্যোগী হল হাওড়া জেলা মৎস্য দফতর। এ জন্য মৎস্য দফতর জেলার বিভিন্ন ব্লকে মৎস্য চাষের প্রদর্শনী ক্ষেত্র বা ডেমনস্ট্রেশন সেন্টার তৈরি করছে। সেখানে মৎস্য চাষিদের হাতেকলমে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেবেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা।
কত পরিমাণ জলাশয়ে কত মাছ ছাড়তে বা কত পরিমাণ চুন সার দিতে হবে। কী ভাবে সেগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুকুরে ছড়ানো হয় ইত্যাদি বিষয়ে প্রদর্শনীশালায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে কী তা বাড়ানো যায় শেখানো হবে তাও। এ ভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যাবে বলে আশাবাদী মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা। পাশাপাশি লাভবান হবেন মাছ চাষিরাও। ইতিমধ্যে হাওড়ার উলুবেড়িয়া ১, বাগনান ২ ও আমতা ১ ব্লকে তিনটি প্রদর্শনীশালা হয়েছে। ওই সব ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় নতুন পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। তবে আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের পারদর্শী করে তুলতেই এই উদ্যোগ বলে মৎস্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। দফতরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্তা সলিল বিশ্বাস জানান, এ বার আটটি এ ধরনের প্রদর্শনী ক্ষেত্রে হবে। গত বছর ছিল ৪টি। এর জন্য মৎস্য দফতর প্রায় ৭ লক্ষ টাকাও মঞ্জুর করেছে।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এই পদ্ধতিতে সারা বছরে মাত্র এক বার নয়, ২-৩ টি পর্যায়ে অর্থাৎ ৪-৬ মাস অন্তর পুকুরে মাছ ছাড়বেন ও প্রয়োজনে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন মাছচাষিরা। একটি পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল সহ ৬-৭টি প্রজাতির মাছ একসঙ্গে চাষ সম্ভব হয়। মৎস্য দফতর ও মাছচাষি সূত্রে খবর, ফেব্রুয়ারি মাসে যখন মাছ চাষের উপযোগী করে তৈরি নতুন পুকুরে মাছ ছাড়া হয়, সেই সময়ে রুই, কাতলা, মৃগেল সহ ৬-৭টি প্রজাতির মাছ ছাড়তে হয়। ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের হয় ওই চারা পোনাগুলি। প্রথম পর্যায়ে ছাড়া মাছ মাস পাঁচেকের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে (মাছের প্রয়োজনীয় খাবার, জলে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক রাখা ইত্যাদি) প্রায় ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায়। তখন যত মাছ ছাড়া হয়েছিল তার অর্ধেকের কিছু বেশি পরিমাণ তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেন চাষিরা। ফের দ্বিতীয় পর্যায়ে চারা পোনা ছাড়া হয়। মাছচাষিরা জানান, এ বার প্রথম দফায় যে পরিমাণ মাছ তুলে নেওয়া হয়েছে, প্রায় সেই পরিমাণ চারা পোনা ছাড়া হয়। ফলে প্রথম পর্যায়ে ছাড়া মাছের যে পরিমাণ পুকুরে থেকে দিয়েছে তা কিছুদিন পরে আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছাড়া মাছও। এর পর প্রয়োজন অনুযায়ী মাছচাষিরা মাছ ধরেন।
উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের মৎস্য দফতরের আধিকারিক নারায়ণ বাগ বলেন, ‘‘প্রথম কয়েক মাস মাছ দ্রুত বাড়ে। ধীরে ধারে মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। সেই সময় বড় মাছ প্রয়োজন অনুযায়ী তুলে নেওয়ার পর ছোট মাছগুলোর বাড়তে সুবিধা হয়।’’ মৎস্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী আগে বছরে একবার পুকুরে মাছ ছাড়ার ফলে ৪-৫ টন মাছ উৎপাদন করা যেত প্রতি বিঘায়। এখন বছরে দু’দফায় মাছ ছাড়ায় উৎপাদনের পরিমাণ অন্তত ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। নারায়ণবাবু জানান, এর ফলে মাছচাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। মাছচাষিদের সঙ্গে কথা বলেও সে রকমই তথ্য পাওয়া গেল।
উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের কাশমূল এলাকার সেখ শরাফ নতুন পদ্ধতিতে প্রায় ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বছর তিনেক ধরে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছি। আগে বিঘা পিছু চার টনের বেশি মাছ পেতাম না। এখন বছরে বিঘাপিছু ৮ থেকে ১০ টন পর্যন্ত মাছ পাচ্ছি।’’ একই কথা জানান, বাগনানের মাছচাষি সুব্রত গুছাইত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy