Advertisement
১১ জুন ২০২৪

বেলাগাম টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, নেই কমিটি

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে না-পারায় সংগঠনের জেলা সভাপতিকে সরানো হয়েছে ছ’মাস আগে। কিন্তু এত দিনেও হুগলিতে নতুন জেলা সভাপতি ঠিক করে উঠতে পারেনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। ফলে, সংগঠনের জেলা বা ব্লক কমিটি যেমন গঠন হয়নি, তেমনই ছন্নছাড়া অবস্থা কলেজ ইউনিটগুলিরও।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৩
Share: Save:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে না-পারায় সংগঠনের জেলা সভাপতিকে সরানো হয়েছে ছ’মাস আগে। কিন্তু এত দিনেও হুগলিতে নতুন জেলা সভাপতি ঠিক করে উঠতে পারেনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। ফলে, সংগঠনের জেলা বা ব্লক কমিটি যেমন গঠন হয়নি, তেমনই ছন্নছাড়া অবস্থা কলেজ ইউনিটগুলিরও। আর সে কারণে ছাত্রভোটের দামামা বাজতেই ফের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের চেনা ছবিটা ফিরে আসছে বলে মনে করছেন শাসক দলের অনেক নেতা। বিভিন্ন কলেজে সরাসরি তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠছে।

সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘যা কিছু ঘটছে, তা বহিরাগতরাই ঘটাচ্ছে। টিএমসিপি-র ছেলেমেয়েরা সুষ্ঠু ভাবেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছে।’’ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কলেজে কোনও ঘটনা ঘটলে তার দায় টিএমসিপি-র নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। কমিটি না থাকায় কোথাও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না বলেও দাবি করেছেন জয়া।

শ্রীরামপুর গার্লস ছাড়া জেলার সবক’টি কলেজের ক্ষমতাই টিএমসিপি-র দখলে ছিল। তা সত্ত্বেও গোষ্ঠী-সংঘর্ষ এড়ানো যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র তোলার প্রথম দিনেই তৃণমূলের দুই নেতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা হয় তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজে। তুমুল বোমাবাজি হয়। কলেজের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়, কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়। তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের গোষ্ঠীর সঙ্গে উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর অনুগামীদের সংঘর্ষের জেরে ওই ঘটনা ঘটে বলে মেনে নিয়েছেন শাসক দলের অনেক নেতাই। তার আগে বুধবার রাতে বলাগড়ের বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের দখল নিয়ে জিরাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দলের দুই নেতার গোষ্ঠীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা হয়। মারামারির পরিস্থিতি তৈরি হয়। দিন কয়েক আগে চন্দননগর কলেজেও টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মারামারি বাধে। বাৎসরিক অনুষ্ঠান (সোশ্যাল) হবে কিনা, তা নিয়ে সম্প্রতি শ্রীরামপুর কলেজেও ধুন্ধুমার হয় ছাত্রছাত্রীদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালাবন্ধ করে রাখা হয়। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।

এই সব গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের আগেই সামনে চলে এসেছে ছাত্রভোট। তাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সংগঠনের অন্দরেও। সংগঠনের জেলা কমিটির পদে ছিলেন, এমন এক টিএমসিপি নেতার কথায়, ‘‘বিভিন্ন ব্লকের মতোই কলেজগুলি নিয়েও সংগঠনে সমস্যা চলছে। ছাত্রনেতা এবং দলের নেতাদের মধ্যে সংঘাতে বিশৃঙ্খলা দানা বাঁধছে। কোথাও তা প্রকাশ্যে চলে আসছে।’’

নির্বাচনের আগে ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি তৈরি করে দেওয়া জরুরি ছিল বলে মানছেন তৃণমূলের জেলা স্তরের অনেক নেতা। কারণ, নির্বাচনের প্রচার-সহ অন্যান্য কাজকর্মে সংগঠনের নেতাদের বড় ভূমিকা থাকে। কলেজে গোষ্ঠীকোন্দল সামাল দিতে না পারায় গত জুলাই মাসের গোড়ায় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি শুভজিৎ সাউকে। তার পরে জয়া দত্ত জানিয়েছিলেন, পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা আলোচনা করা হচ্ছে। এ বার অবশ্য তিনি জানান, কলেজ-ভোট মিটে গেলে সংগঠনের জেলা কমিটি ঠিক করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMCP group clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE