Advertisement
E-Paper

কলকাতার পথেই হেলমেট বিধি পান্ডুয়ার স্কুলে

পথ নিরাপত্তায় প্রথমে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। তারপর ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। নাগরিক সচেতনতায় মুখ্যমন্ত্রীর বার বার আবেদনেও তেমন সুফল মিলছে না।

মনিরুল ইসলাম ও তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩১
হেলমেট নিয়ে বিজ্ঞপ্তি পান্ডুয়ার স্কুলে। ছবি: সুশান্ত সরকার

হেলমেট নিয়ে বিজ্ঞপ্তি পান্ডুয়ার স্কুলে। ছবি: সুশান্ত সরকার

পথ নিরাপত্তায় প্রথমে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। তারপর ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। নাগরিক সচেতনতায় মুখ্যমন্ত্রীর বার বার আবেদনেও তেমন সুফল মিলছে না। দিন কয়েক আগে ডানলপে বাইকআরোহী দুই শিশুর হেলমেটহীন অবস্থায় স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।

তবে ডানলপের ঘটনার আগেই কলকাতার একটি নামী বেসরকারি স্কুলে বাইকে হেলমেটহীন অবস্থায় আসা পড়ুয়াদের স্কুলে ক্লাস করতে না দেওয়ার ফরমান জারি হয়। যার ফলও মেলে। কিন্তু ডানলপের ঘটনায় প্রমাণ, মানুষের সচেতনতায় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে। ওই ঘটনার পর ইতিমধ্যেই ‘নো হেলমেট, নো ক্লাস’-এর নিদান দিয়েছে কলকাতার আর একটি স্কুল। ‘সেন্ট জোসেফস কলেজ’ নামে ওই স্কুলের অধ্যক্ষার কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারা যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয় তার জন্যই এই নিদান।’’

এ তো গেল কলকাতার চিত্র। জেলার বিভিন্ন স্কুলে হেলমেট সচেতনার খবর নিতে গিয়ে অবশ্য হতাশই হতে হয়েছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘সেন্ট জোসেফস কলেজ’ স্কুলে হেলমেট সংক্রান্ত সচেতনতার খবর প্রকাশিত হতেই হুগলির একটি স্কুলেও হেলমেট নিয়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সতর্ক করা হয়েছে। পান্ডুয়ার ‘শশীভূষণ সাহা উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে ওই স্কুলে কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিস দিয়ে স্কুলে আসা ও যাওয়ার সময় পড়ুয়াদের মাথায় যাতে হেলমেট থাকে সে দিকে অভিভাবকদের নজর দিতে বলা হয়েছে। তবে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষেরই দাবি, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে অভিভাকদের সচেতন করলেও অনেকেই তাতে গুরুত্ব দেন না। ফলে তাঁদের কিছু করণীয় থাকে না। তাঁদের যুক্তি, ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। ছেলেমেয়েদের এমনকী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদেরই তো ভাবা উচিত।

হেলমেট ছাড়াই স্কুলের পথে।

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে অবশ্য অভিভাবকদের মধ্যে সেই সচেতনতা চোখে পড়ল না। উলুবেড়িয়া তাঁতিবেড়িয়ায় মুম্বই রোডের ধারে বেসরকারি স্কুল সারদা শিশু মন্দির। দেখা গেল বাইক আরোহী সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা কাজল মালিক ছেলেকে স্কুলে দিতে এসেছিলেন। দুজনেরই মাথা ফাঁকা। হেলমেট নেই কেন প্রশ্ন করায় উত্তর এল, ‘‘বাড়িতে দু’টো হেলমেট রয়েছে। কিন্তু দেরির জন্য তাড়াহুড়োয় বিনা হেলমেটেই চলে এসেছি।’’ তবে এ বার থেকে রোজ হেলমেট ব্যবহার করবেন বলেও জানালেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিল কাঁড়ার বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেছি, যারা বাইকে চেপে স্কুলে আসে তারা যেন হেলমেট ব্যবহার করে। কিন্তু কেউ না শুনলে কী করব!’

চুঁচুড়ার ‘টেকনো ইন্ডিয়া’ স্কুলের এক ছাত্রীর অভিভাবক সুস্মিতা মজুমদার বলেন, ‘‘প্রতিদিনই সকালে মেয়েকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে হয়। তাড়াহুড়োয় অনেক সময়েই হেলমেট নিতে মনে থাকে না। যদিও হেলমেট পরাই উচিত।’’ হেলমেট নিয়ে কলকাতার স্কুলের নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। স্কুলের প্রিন্সিপাল প্রদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে মোটরসাইকেল চালাতে গেলে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। কলকাতার যে স্কুল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। আমাদের তরফেও স্কুলের প্রত্যেক অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের হেলমেট পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

তবে হেলমেট সচেতনতায় বেসরকারি স্কুলগুলির চেয়ে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি যে পিছিয়ে তাও দেখা গিয়েছে। বাগনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর আদককে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রই বাস বা অটোয় আসে। বাইকে চেপে আসে খুবই কম সংখ্যক ছাত্র। তাই হেলমেট পরা নিয়ে সে অর্থে কিছু বলা হয় না।’’ একই বক্তব্য, বাগনান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতা মণ্ডলেরও। অবশ্য দুজনেই জানিয়ে‌ছেন, হেলমেট পরা-সহ পথ নিরাপত্তার দিকে নজর রাখতে ছাত্রছাত্রীদের বলা হবে।

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়ায় ছবি তুলেছেন তাপস ঘোষ ও সুব্রত জানা।

No helmet no class Pandua
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy